আন্তর্জাতিক আরব আমিরাত

দূর প্রবাসে অমর পক্ষে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তিলদান

 

 

 

সঞ্জিত কুমার শীল

পিতৃপক্ষ বা প্রেতপক্ষ ৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরুহয় পিতৃপক্ষের, পূর্বপুরুষকে শ্রদ্ধা জানানোর গুরুত্বপূর্ণ তিথি।এ বছর ৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু পিতৃপক্ষ, শেষ হবে ১৭ সেপ্টেম্বর। যদিও পঞ্জিকায় পূর্ণিমার মধ্যে ২ সেপ্টেম্বরে শ্রাদ্ধের বিধান দেওয়া হয়েছে, কিন্তু পিতৃপক্ষের অন্যান্য সমস্ত শ্রাদ্ধ শুরু হয় ৩ সেপ্টেম্বর থেকে।
ধর্মীয় ধারণা অনুযায়ী, পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য অন্নজলে তর্পণ শ্রাদ্ধ করা হয়। এখানে শ্রাদ্ধের অর্থ, শ্রদ্ধাপূর্বক নিজেদের পূর্বপুরুষদের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন।
পিতৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ তিথি:
পূর্ণিমা শ্রাদ্ধ- ২ সেপ্টেম্বর ২০২০
পঞ্চমী শ্রাদ্ধ- ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
একাদশী শ্রাদ্ধ- ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
সর্বপিতৃ অমাবস্যা- ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
সনাতন ধারণা অনুযায়ী, যাঁরা দেহত্যাগ করে পরলোকে গমন করেন, তাঁদের আত্মার তৃপ্তির জন্য শ্রদ্ধাপূর্ণ তর্পণ করা হয়, প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, যম শ্রাদ্ধপক্ষের(পিতৃপক্ষের) সময়ে জীবকে মুক্ত করে দেন, যাতে তাঁরা স্বজনদের তর্পণ গ্রহণ করতে আসতে পারেন। পিতৃপক্ষে পূর্বপুরুষরা মৃত্যুলোক থেকে পৃথিবীতে আসেন ও নিজের পরিবারের সদস্যদের আশীর্বাদ দেন। পূর্বপুরুষ প্রসন্ন হলে বাড়িতে সুখ-শান্তি বিরাজ করে।
মহাভারতের যুদ্ধে কর্ণের মৃত্যুর পর যখন তাঁর আত্মা স্বর্গে পৌঁছয়, তখন তাঁকে নিয়মিত ভোজনে সোনা ও অলঙ্কার দেওয়া হয়। হতাশ কর্ণ ইন্দ্রকে এর কারণ জিগ্যেস করলে ইন্দ্র জানান, কর্ণ সম্পূর্ণ জীবনে শুধু স্বর্ণালঙ্কারই দান করে গিয়েছেন, কখনও নিজের পূর্বপুরুষদের কিছু দেননি। এতে কর্ণের উত্তর, তাঁর পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। এর পর পূ্র্বপুরুষদের ভোজন দানের উদ্দেশে ইন্দ্র তাঁকে ১৫ দিনের জন্য পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেন। এই ১৫ দিনের সময়সীমাই পিতৃপক্ষ হিসেবে পালিত হয়।

বরাহ পুরানে শ্রাদ্ধের ইতিহাস বর্নিত আছে যে,
পুত্রের মৃত্যুতে শোকাহত পিতা নিমি নামক এক ঋষি তার পুত্রের আত্মার তৃপ্তি জন্য এবং তার পুত্রের পরলোক যাতে কষ্ট না পায় সে বিষয়ে চিন্তা করে পুত্রের উদ্দেশ্যে উত্তম ফল-মুল ও উপাধেয় ভোজ্য উৎসর্গ করতে মনস্থ করলেন এবং ব্যবস্থাদি করে ফেললেন। তখন ঋষি নিমির নিকটে স্বয়ম্ভু মনু ও দেবর্ষি নারদ এসে উপস্থিত হলেন।স্বয়ম্ভু মনু ও নারদ মুনিকে দেখে নিমি জিজ্ঞেস করলেন যে, ”আমি কি ঋষিদের অনতিপ্রেত কোন কাজ করছি না”? স্বয়ম্ভু মনু স্বয়ং নারদ সহ সেখানে উপস্থিত এবং বললেন, ” আপনি যা করছেন তা সঙ্গতই হয়েছে”। জগতে এইভাবে মৃত ব্যাক্তির উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধ আদি করার নির্দেশিত হয়।

শাস্ত্রানুযায়ী মৃতব্যাক্তিদের আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে এবং তার পারমার্থিক উন্নতির কামনায় দান-ধ্যান ও অতিথিভোজন অনুষ্ঠান। মৃত ব্যক্তির সন্তান কিংবা আত্যীয়-স্বজনরা এই শ্রাদ্ধআদি অনুষ্ঠান করে থাকেন।

প্রতিবারের মত এবারও সংযুক্ত আরব আমিরাত আবুধাবী শিল্পনগরী মুসাফফা কর্নেশে পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনায় তর্পণ ও শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
তর্পণ ও শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সঞ্জিত কুমার শীল । এতে তর্পণ এবং শ্রাদ্ধ করান পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী ও পিয়াস আচার্য । আল আইন মরুতীর্থের প্রতিষ্ঠাতা জগদীশ্বরানন্দ পুরী, ব্যবসায়ী অনুপম ধর, পিন্টু কান্তি শীল, সুনীল দাস, লিটন মল্লিক, রুপন চৌধুরী,
,সুজন শর্মা,বিষ্ণু শীল, সুজন দত্ত, গৌরাঙ্গ শীল, বিধান শীল, নিকাশ শীল , পুতুল শীল সহ আরো অনেকে।

Related Posts