আন্তর্জাতিক ওপার বাংলা

কলকাতা প্রেসক্লাবে ‘বঙ্গবন্ধু মিডিয়া সেন্টার’ উদ্বোধন করলেন তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ

 

রতন কান্তি দেবাশীষ,কলকাতা থেকে

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন ও সহযোগিতায় কলকাতা প্রেসক্লাবের মুকুটে যুক্ত হলো নতুন পালক।

গত বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) প্রেসক্লাবে উদ্বোধন হলো ‘বঙ্গবন্ধু সংবাদ কেন্দ্র’।

উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সঙ্গে ছিলেন সাইমুল সালোয়ার কমল এমপি ও বিশিষ্টজনেরা।

উদ্বোধনের আগে হাছান মাহমুদ বলেন, ধন্যবাদ জানাই, এমন এক মুহূর্তে কলকাতা প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু সংবাদ কেন্দ্র স্থাপনা হচ্ছে, যা দু’দেশের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ। চলতি বছরে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ, মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর, ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর ও ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন হচ্ছে।

ভারতের মৈত্রী ও কৃতজ্ঞতা চিরকাল বাংলাদেশ স্মরণ করে। ভারত পাশে না থাকলে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ সম্ভব হতো না।

বাংলাদেশের স্বাধীনতায় আমাদের রক্তের সঙ্গে ভারতের রক্ত মিশে গেছে। এ মাহেন্দ্রক্ষণে প্রেসক্লাবে সংবাদ কেন্দ্রটি বঙ্গবন্ধুর নামে নামাঙ্কিত হলো। আমাদের মৈত্রী সার্থক। এরপর মন্ত্রী কলকাতার সাংবাদিকদের উদ্দেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যাচার ও বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন।

দিনটি উপলক্ষে এদিন কলকাতার পাঁচজন বর্ষীয়ান সাংবাদিককে ‘মুক্তিযুদ্ধ সুবর্ণজয়ন্তী কলম সেনা’ সম্মাননা দেওয়া হয়। যারা সেই সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের ঘটনা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছিলেন। সম্মাননা পেয়েছেন বাংলা স্টেটসম্যানের মানস ঘোষ, মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহকারী দিলিপ চক্রবর্তী, আনন্দবাজারের সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত, টেলিগ্রাফের তরুণ গাঙ্গুলি ও আনন্দবাজারের পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মন্ত্রী সবার হাতে সম্মামনা তুলে দেন।

বঙ্গবন্ধু মিডিয়া সেন্টার হিসেবে প্রেসক্লাব কলকাতা পেল ছয়টি ওয়ার্ক স্টেশনে চারটি কম্পিউটার, দুটি ল্যাপটপ, একটি স্ক্যানার ও দুটি প্রিন্টার। এছাড়া উন্নতমানের এলইডি টিভি ও এইচডি প্রোজেক্টর। এরসঙ্গে রয়েছে একটি গ্রন্থাগার। যেখানে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ওপর নানা সংকলন, দুই বাংলার মুক্তিযুদ্ধের বই। এছাড়া রয়েছে বাংলাদেশ ৫০ বছরে যে উন্নতি করেছে তার একটি গ্রন্থকোষ।

উদ্বোধনের পরে তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে উঠে আসে বাংলাদেশ দুর্গাপূজায় উত্তেজনার প্রসঙ্গ।

মন্ত্রী বলেন, এ ধরনের কাজ আমাদের সরকার প্রশ্রয় দেয় না। আমরা হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ সব সম্প্রদায়কে নিয়ে চলি। আমাদের দেশে অশুভ শক্তিরা বলে আওয়ামী লীগ ভারতের দালাল। আপনারা ভারতের সাংবাদিকরা জানেন, এসব কথা কোনো রাজনৈতিক দল বলতে পারে। আসলে ভোট এলে বিএনপি-জামায়াত এসব করে দাঙ্গা বাধাতে চায়।

তিনি বলেন, পবিত্র কোরান হিন্দুদের বিগ্রহের পায়ে রাখা ইকবালের নাম সামনে এসেছে। আমি একে কোনো ধর্মের আখ্যা দিতে চাই না। এর পেছনে অন্য ইন্ধনদাতারা আছে। বুঝতে পারছি। খুব শিগগিরই সামনে আসবে। ২১ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে কে হিন্দু কে মুসলমান এটা চিহ্নিত করায় আমাদের কাছে লজ্জার। বাংলাদেশের পূজা উৎসব শুধু হিন্দুদের উৎসব নয়। সেটা গোটা বাংলার উৎসব। একইভাবে ঈদ উৎসব। প্রধানমন্ত্রী যা মনে করেন আমরাও তাই মনে করি। আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা বাঙালি, পরে হিন্দু-মুসলমান। সে কারণেই আমরা বলি ধর্ম যার যার উৎসব সবার। জামায়াত আমাকেও জবাই করতে চেয়েছিল। ২১ আগস্ট চক্রান্ত কারা করেছিল আপনারাও জানেন। আমাদের দেশে বিএনপি-জামায়াত সম্প্রদায় দেখে আর ভোট এলেই নিরীহ মানুষদের উস্কে দেয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- দিল্লির হাইকমিশন ও কলকাতাস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের কর্মকর্তারা। উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাবের প্রেসিডেন্ট স্নেহাশীষ সুরসহ দু’দেশের গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও কলকাতার বিশিষ্টজনেরা। এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে নয়াদিল্লির প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু মিডিয়া সেন্টার চালু হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে তিন দিনের সফরে রয়েছেন তথ্যমন্ত্রী। বুধবার (২৭ অক্টোবর) নবাবি তালুক মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি প্যালেস মিউজিয়ামসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখেন তিনি। এছাড়া মুর্শিদাবাদের মতিঝিলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প ‘প্রকৃতি তীর্থে’ বেশ কিছুটা সময় কাটান তিনি। বৃহস্পতিবার তিনি ঘুরে দেখেন কলকাতার পার্কসার্কাসে অবস্থিত বাংলাদেশ তথ্য কেন্দ্র ও গ্রন্থাগার। এরপর পশ্চিমবঙ্গের বিধায়কদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন বিধানসভায়। দেখা করেন স্পিকারের সঙ্গে। এদিন বিকেলে প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু সংবাদ কেন্দ্র উদ্বোধনসহ কলকাতায় একাধিক কর্মসূচি শেষ করেন তিনি।

 

Related Posts