সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতা , পুরোহিত হত্যা, লুটপাট, মন্দির ধংসের ঘটনাকে নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একেএম আবদুল মোমেনের উদ্দেশ্য প্রণোদিত মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করেছে সম্মিলিত সনাতনী শীর্ষস্থানীয় সংগঠন সমূহ। মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ, ইসকন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সনাতনী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের উৎসাহিত করেছে উল্লেখ করে বক্তারা অবিলম্বে তার কল্পনাপ্রসূত ও বিভ্রান্তিমূলক মিথ্যা বক্তব্য প্রত্যাহার পূর্বক নিহতদের পরিবারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইসকন বিভাগীয় সম্পাদক শ্রীপাদ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুকুমার চৌধুরী, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, চট্টগ্রাম মহানগর পূজা পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ ভট্টাচার্য্য, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ মহানগরের সহ সভাপতি দীপংকর চৌধুরী কাজল, পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল, নন্দনকানন রাধামাধব ও গৌরনিতাই মন্দিরের অধ্যক্ষ পন্ডিত গদাধর দাস ব্রহ্মচারী, দারুব্রহ্ম দাস ব্রহ্মচারী, তারণ নিত্যানন্দ দাস ব্রহ্মচারী, মুকুন্দ ভক্তি দাস ব্রহ্মচারী, প্রবর্তক মন্দিরের সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, দিব্যনিমাই দাস ব্রহ্মচারী, অশোক চক্রবর্তী ও সাংবাদিক বিপ্লব পার্থ। সংবাদ সম্মেলন থেকে চারদফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো, (১) সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িত অপরাধীদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত (২) ক্ষতিগ্রস্থ ও ধ্বংসপ্রাপ্ত মঠ-মন্দির, আশ্রম, দেবালয়সমূহকে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে সেনাবাহিনীর দ্বারা পুনঃনির্মাণ এবং অগ্নিদগ্ধ ও লুটপাটকৃত বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পুনঃনির্মাণ ও ক্ষতিপূরণ ,(৩) পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কল্পনাপ্রসূত ও বিভ্রান্তিমূলক মিথ্যা বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার পূর্বক নিহতদের পরিবারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং (৪) সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন করা।
লিখিত বক্তব্যে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ১৩ অক্টোবর কথিত ধর্মঅবমাননার অভিযোগ তুলে কুমিল্লার নানুয়ার দিঘীর পাড় এলাকায় শারদীয় দুর্গাপূজা মন্ডপে হামলা করা হলো। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে একইদিন চট্টগ্রামের চন্দনাইশের বৈলতলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, কক্সবাজারের পেকুয়া, চাঁদপুরের হাজিগঞ্জ, বাঁশখালীর পশ্চিম চাম্বল, সিলেটের জকিগঞ্জ, হাটহাজারীর সরকারহাট, কুড়িগ্রামের কালুডাঙ্গা, হাতিয়ার নলছিড়াসহ বিভিন্ন স্থানে দুর্গাপ্রতিমা ভাংচুর, হিন্দুদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ঘটনার ধারাবাহিকতায় পরের দিন ১৪ই অক্টোবর নোয়াখালির সোনাইমুড়ি ও বান্দরবানের লামা উপজেলায় কেন্দ্রীয় হরিমন্দিরে সাম্প্রদায়িক দুষ্কৃতিকারীরা মন্দির ভাংচুরসহ নির্মম ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠে। পরের দিন ১৫ই অক্টোবর প্রশাসনের সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়তায় ১৯৭১ সালের চেয়েও ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলা হয় নোয়াখালির চৌমুহনীস্থ প্রত্যেকটি হিন্দু মন্দির, শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে। ঘটনার পর পর আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল ক্ষতিগ্রস্থ প্রত্যেকটি মন্দির পরিদর্শন করেন এবং দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেন। এর মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শত শত সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়। সুরতহাল রিপোর্টে নিহতদের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের কথা উল্লেখ রয়েছে। একদিকে যখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক মাঠ পর্যায়ের পুলিশ প্রশাসন ঘটনায় প্রকৃত অভিযুক্তদের খুজে বের করে অপরাধীদের গ্রেফতার করছে, মূল হোতাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে ঠিক তখন অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি সহিংসতাকারী ও অপরাধীদের উৎসাহিত করছে। যেখানে সারাবিশে^ সমস্ত অসাম্প্রদায়িক ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিটি জাতি গোষ্ঠির লোক এই ঘটনার নিন্দা করছে, সেখানে মন্ত্রী তা স্বীকারই করলেন না। সরকারের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে নির্যাতিত, নিপীড়িত সহিংসতার স্বীকার সনাতনী জাতি গোষ্ঠি এরকম বক্তব্য প্রত্যাশা করেনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অত্যন্ত সুস্থ মস্তিষ্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঘটনায় সহিংসতার শিকার ব্যক্তিও জীবন উৎসর্গকারী শহিদদের আত্মার সাথে চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ তামাশা করেছেন। সমবেদনার পরিবর্তে তিনি কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি একটি বিশেষ ইংগিত দিয়েছেন। আমরা অত্যন্ত শংকিত ও নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করছি। তবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে আমাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়েছে। একজন প্রকৃত সমব্যথী অভিভাবকের ভূমিকায় আমরা অনেকটা আশ^স্থ হয়েছি। আমরা উনার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ জ্ঞাপন করছি