উপজেলা চট্টগ্রাম

মানবসমাজ বিনির্মাণে আজীবন সাধনা করেছে স্বামী জ্যোতিশ্বরানন্দ গিরি

সীতাকুণ্ড শঙ্করমঠের শতবর্ষপূতি উপলক্ষে আয়োজিত ৮ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ৭ম দিন আজ ২২ নভেম্বর সোমবার শ্রীশ্রীমৎ স্বামী জ্যোতিশ্বরানন্দ গিরি মহারাজের ১১৩তম শুভ আবির্ভাব দিবস উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষে সকাল থেকে বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে ছিল-মঙ্গলারতি, গুরুবন্দনা, পবিত্র বেদ পাঠ, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে শ্রীশ্রী স্বয়ম্ভুনাথ মন্দির পরিক্রমা, শ্রীশ্রীচÐী পাঠ, শ্রীশ্রী বাবামনির বিশেষ পূজা, শ্রীশ্রীবিশ্বশান্তি গীতাযজ্ঞ ও বিকেল ৩টায় ‘গীতাহিমাদ্রী মহর্ষি স্বামী জ্যোতিশ্বরানন্দ গিরি মহারাজের জীবনাদর্শ’ বিষয়ক সনাতন ধর্ম মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া সন্ধ্যায় বিশেষ প্রার্থনা, দুস্থদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ, রাতে ৮টায় গীতিআলেখ্য, সঙ্গীতাঞ্জলি এবং কবিগানের আয়োজন করা হয়।
শঙ্করমঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজের সভাপতিত্বে, প্রমথ সরকার ও তন্বী পালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সনাতন ধর্মমহাসম্মেলনের উদ্বোধন করেন শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুকুমার চৌধুরী। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রবর্ত্তক সংঘের সাধারণ সম্পাদক ও মহামান্য রাষ্ট্রপতির পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট শিল্পপতি তিনকড়ি চক্রবর্তী। আর্শিবাদক ছিলেন আমেরিকার কলরেডো নিবাসী ঋষিশ্রেষ্ঠ শ্রীমৎ পরমানন্দ সরস্বতী। মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বালন করেন বিশিষ্ট দানবীর লায়ন অদুল কান্তি চৌধুরী। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব দিলীপ শর্মা, সীতাকুÐ ¯্রাইন কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন দাশ অদুল-অনিতা ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান অনিতা চৌধুরী। মূখ্য আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট ধর্মতত্ত¡বিদ সুদর্শন চক্রবর্তী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শঙ্করমঠ ও মিশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর কেশব কুমার চৌধুরী। আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ঢাকার সভাপতি মিলন দত্ত, সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জী, পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত, মঠের সহ-সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক তড়িৎ কুমার ভট্টাচার্য্য ও যুগ্ম সম্পাদক বাসুদেব দাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার অজিত কুমার শীল, প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক সাংবাদিক রনজিত কুমার শীল প্রমূখ। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন শিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস, বাউল সম্্রাট সফি মন্ডল, বাউল শিল্পী রাখি শবনম। শেষে নৃত্য নাট্য-সত্যম্ শিবম্ সুন্দরম পরিবেশিত হয়।
সনাতন ধর্ম মহাসম্মেলনে বক্তারা বলেন,আধ্যাত্মিক জীবন চর্চার মহাতীর্থপীঠ শঙ্করমঠ ও মিশন। মঠের যুগদ্রষ্টা মানবপ্রেমের মূর্তপ্রতীক স্বামী জ্যোতিশ্বরানন্দ গিরি মহারাজ শ্রীম্ভগবদ্গীতার সার্বজনীন মানবধর্মের শ্রেষ্ঠত্বের মধ্যে দিয়ে অসাম্প্রদায়িক উদার মানবতাবাদী দার্শনিক চেতনায় পরমাত্মাকে খুঁজেছেন। তাঁর ৯৮ বছরের ইহজীবনের সুদীর্ঘ ৮০ বছর গীতা প্রচাওে নিরলস সাধনা করেছেন। মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানবসমাজ বিনির্মাণে তিনি আজীবন সাধনায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। শঙ্করমঠে প্রস্তাবিত বালক আশ্রম নির্মাণে আর্থিক অনুদানের ঘোষনা দেন বিশিষ্ট দানবীর লায়ন অদুল কান্তি চৌধুরী ও সুকুমার চৌধুরী। বক্তারা আরও বলেন, ধর্ম চেতনা ও ধর্মবোধ মানুষকে সত্য সনাতন সুন্দরের পথে পরিচালিত করার ফলে সমাজ থেকে অন্যায়-অনাচার দূরীভূত হয়। এখানে মঠ-মন্দির শুধু ধর্ম চর্চার সাধনা করে না। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি ও সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। ধর্মবোধ মানুষকে ন্যায়ের শিক্ষা দিয়ে সভ্য করেছে। বিশ্বজনীন ধর্মগ্রন্থ শ্রীশ্রীমদ্ভগবত গীতার কর্ম, জ্ঞান ও ভক্তি মানুষকে নানা অপকর্ম থেকে বিরত রাখে। সত্যিকার অর্থে নিষ্কাম কর্ম এবং অন্ধাকারাচ্ছন্ন পথ থেকে উত্তরণের জন্য মনুষ্যত্বের সাধনা করাই হলো গীতা শিক্ষা। গীতার আদর্শ ও উদ্দেশ্য বুকে ধারণ করতে পারলে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ হবে। একইসাথে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানান বক্তারা। ####

Related Posts