পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ও সরকারের যুগ্ম সচিব মোঃ হাবিবুর রহমান বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টায় পরিবার কল্যাণ সেবা অনেকদুর এগিয়ে গেছে। মা ও শিশু স্বাস্থসেবা নিশ্চিতকরণ, বাল্যবিবাহ রোধ, গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদেরকে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দিচ্ছে। বাসায় ডেলিভারী করলে শিশু ও মা দু’জনেরই চরম ঝুঁকি থাকে। তাই মা ও শিশুকে নিরাপদ রাখতে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারীর কোন বিকল্প নেই। আজ ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ ইংরেজি রোববার চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ব বাকলিয়া ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে আয়োজিত পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহের (১৮-২৩ ডিসেম্বর) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সেবা ও প্রচার সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে-‘ পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করি; বাল্যবিয়ে এবং অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ রোধ করি’। পূর্ব বাকলিয়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বেলুন উড়িয়ে ও কেক কেটে পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি।
পরিচালক বলেন, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ সারা বছরই সেবা দিয়ে থাকে। যারা পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করছেন না, কিংবা অন্য পদ্ধতি গ্রহণ করছেন তাদেরে মা-শিশুর স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সঠিক পরামর্শ দিতে সরকার সারাদেশে এ কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। যারা পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সেবা নিতে আসছেন তাদেরকে এ ক প্রচার সপ্তাহে আরও বেশি উৎসাহিত করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা নিতে টাকার বিনিময়ে টিকেট নিতে হয়, কিন্তু পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সেবা নিতে টিকেটের প্রয়োজন হয়না। পরিবার কল্যাণ কর্মীরা ঘরে গিয়েই মা’দেরকে সেবা দিয়ে আসে। ১৮ বছরের উর্ধ্বে ৫০ বছরের নিচে সকল মহিলাকে সেবা দেয় হচ্ছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও উপ-পরিচালক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে ভূমিকা তা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা বড় কথা নয়, এখানে এসে কতজন সেবা পাচ্ছে তা মূখ্য বিষয়। মা-শিশুর জীবনের ঝুঁকি এড়াতে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারীর বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখতে হবে। স্বাস্থ্যসেবার অগ্রযাত্রায় সবাইকে সামিল হতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়তে হলে সুস্থ মা ও সন্তান অত্যন্ত জরুরী। কোভিডকালীন সময়ে মাস্ক ব্যবহার, নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা, সামাজিক অনুষ্ঠান পরিহার ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারে সবাইকে পরামর্শ দেন তিনি।
পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক সুব্রত চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও পূর্ব বাকলিয়া ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সহকারী সার্জন ডা. প্রতিমা রানী ত্রিপুরার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও উপ-পরিচালক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওসিএস ডা. মোঃ ওয়াজেদ চৌধুরী অভি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম রিজিওনাল কনসালট্যান্ট ও সহকারী পরিচালক ডা. ছেহেলী নার্গিস। অনুষ্ঠানে পূর্ব বাকলিয়া ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে কর্মরত অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক সুব্রত চৌধুরীর জানান, সারাদেশের মত চট্টগ্রাম জেলায়ও অনুষ্ঠিত হচ্ছে পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ (১৮-২৩ ডিসেম্বও ২০২১)। টেইসই উন্নয়ন লক্ষ্য অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু ৭০ এ নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশ আইসিপিডি ২৫ এর অংশগ্রহনকারী দেশ হিসেবে তিন শূন্য ঃ শূন্য মাতৃমৃত্যু, শূন্য নারীর প্রতি সহিংসতা, শূন্য অপূর্ণ চাহিদা পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ তিন শূন্য পূরণে সবচেয়ে বড় বাধা বাল্যবিয়ে। বাংলাদেশে বিবাহের আইনগত বয়স মেয়েদের ১৮ আর ছেলেদের ২১ হলেও বিডিএইচএস ২০১৭-১৮ রিপোর্ট অনুসারে বাংলাদেশে ২০-২৪ বছর বয়সী নারীদের ৫৯% বিয়ে ১৮ বছর বয়সের আগে হয়ে যায় এবং ১৫-১৯ বছরের কিশোরীদের ২৮% গর্ভবতী হয়, ফলে তারা নানাবিধ অনাকাঙ্খিত স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হয়। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। বাল্যবিয়ে, কৈশোরকালীন মাতৃত্ব, কিশোরী মায়ের গর্ভে শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি, মৃত সন্তান প্রসব, অপরিণত প্রসব, কম ওজনের শিশুর জন্ম, প্রজননতন্ত্রেরর সংক্রমণ ইত্যাদি কারনে কিশোরী মায়ের ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকে। পরিণামে তাদের রুগ্ন ও ভগ্নস্বাস্থ্য থেকে শুরু করে বাচ্চা প্রসবকালে বা পরবর্তীতে প্রসব পরবর্তী মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায়।
এ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের প্রতিটি উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বিভিন্ন সমাবেশ, মা সমাবেশের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি, কিশোর-কিশোরী সমাবেশের মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রামে কিশোরীদের বাল্যবিবাহ সম্পর্কে সচেতন করাসহ পরিবার পরিকল্পনা স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন পদ্বতির সেবা এ বিশেষ এ সেবা সপ্তাহে প্রদান করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিপুল সংখ্যক মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহনে সেবা সপ্তাহের উদ্বোদন ও বিভিন্ন সেবা ক্যাম্প শুরু হয়েছে।
করোনাকালে সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে বিশেষ সর্তকর্তা নেয়া হয়েছে বলে জানান পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক জনাব সুব্রত চৌধুরী।
তিনি জানান, মাস্ক বিতরণ, সমাবেশগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা, ৩ ফুট দুরত্বে অবস্থা সহ সকল বিষয়ে সজাগ থাকছে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। নিয়মিত সারা বছরব্যাপী সেবার সাথে এবার সেবা সপ্তাহে বাড়ী পরিদর্শন,স্যাটেলাইট ক্লিনিকের সংখ্যা বাড়ানো, নরমাল ডেলিভারীতে বিশেষ সেবা কার্যক্রম পরিচালনা, উঠান বৈঠক, স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী সেবা ক্যাম্প পরিচালনা বৃদ্ধি করে এ সপ্তাহ পালন করা হবে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষকে সামনে রেখে একটা ক্ষুধা ও দারিদ্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে প্রতিটি পরিবার হোক পরিকল্পিত, প্রতিটি দিন হোক রঙ্গিন। সুন্দর আগামী ও সুন্দর পরিবার গঠনে সবাইকে সাথে নিয়ে এ সেবা সপ্তাহের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে পূরণে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ আন্তরিকভাবে কাজ করে চলেছে।####