বিশেষ প্রতিবেদক:
বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে বিপাকে দেশের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের বেশকিছু আমদানিকারক। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার পর প্রথম চালানের ২৪২ মেট্রিক টন ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ঢোকার খবর পৌঁছার পর থেকেই চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে।
ফলে আগে বিভিন্ন দেশ থেকে বেশি দামে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম আগের চেয়ে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত কমে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে দুঃসময়ের আমদানিকারকরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। একই সঙ্গে দেশীয় পেঁয়াজ চাষি বা কৃষকরাও লোকসানের ভয়ে শঙ্কিত। গত দুদিনে ভারতীয় পেঁয়াজ নিয়ে ৮-১০টি ট্রাক খাতুনগঞ্জে ঢুকেছে।
খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকরা বলছেন, ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে দেওয়ার পর থেকে পেঁয়াজের দাম হু-হু করে বাড়তে থাকে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হয়। এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অনেক আমদানিকারক বিশ্বের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করলে ধীরে দাম কমতে শুরু করে। পেঁয়াজের দাম নেমে আসে ৩০-৪০ টাকার মধ্যে।
চাহিদার অতিরিক্ত পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় এবং চট্টগ্রামের অন্যতম পাইকারি ব্যবসা কেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ক্রেতা না থাকায় আড়তে পেঁয়াজ পচতেও শুরু করে। এ অবস্থার মধ্যেই ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শনিবার বন্ধের দিনেই ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ২৪০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ প্রবেশ করে। পরদিন এ চালানের অংশ খাতুনগঞ্জেও ঢোকে। এ অবস্থায় এখানকার বাজারে পানির দামে প্রতি কেজি ২০-২৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়।
খুচরা বাজারে যা ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে এখন পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। এছাড়া দেশীয় পেঁয়াজও উঠতে শুরু করেছে। আবার বন্দরে শত শত কনটেইনার পেঁয়াজ খালাসের অপেক্ষায় আছে। এ মুহূর্তে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছি না।
সোমবার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায়। এছাড়া দেশীয় পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকা, তুরস্কের পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ২৫ থেকে ২৭ টাকা এবং নেদারল্যান্ডসের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়।
চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়ে চিঠি ইস্যু করে। চিঠিতে বলা হয়, কাটা টুকরা ও গুঁড়া সব ধরনের পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ এবং এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে। এরপরই হু-হু করে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। পরে আমদানিকারকরা মিয়ানমার, চীন, মিসর, পাকিস্তান, তুরস্কের মতো দেশগুলো থেকে পেঁয়াজ এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। এরপর গত শুক্রবার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় ভারত সরকার।
খাতুনগঞ্জের নিউ শাহ আমানত ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী কামাল হোসেন বলেন, দেশে পেঁয়াজের সংকটের সময় আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করেছি। পেঁয়াজের সংকট নেই। এখন ভারত থেকে কেন পেঁয়াজ আনতে হচ্ছে? ভারত সব সময় আমাদের দেশে কৃষকের ঘরে যখন পেঁয়াজ ওঠে, তখন আমদানি মূল্য কমিয়ে দেয়। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে দেশের চাষিরা পেঁয়াজ চাষে আর উৎসাহী হয় না। আবার নিজেদের বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলে সুযোগ বুঝে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় দেশটি। এতে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। তাই সরকারকে অবশ্যই দেশের পেঁয়াজ চাষিদের কথা ভাবতে হবে। তারা যেন ন্যায্য দাম পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কৃষক দাম পেলে তারা আরও বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন করবে। আমাদের আমদানিনির্ভরতা কমবে।
খাতুনগঞ্জ হামিদউল্লাহ মিয়া বাজার (পেঁয়াজ) ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস জানান, বাজারে এখন পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। আবার বন্দরেও খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে কয়েকশ’ টন। গত দুদিনে ৮-১০টি ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ নিয়ে খাতুনগঞ্জে ঢুকেছে। এর ফলে আমদানিকারকরা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন।