নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা এলাকা থেকে ব্যাগ ভর্তি উদ্ধার হওয়া খণ্ড বিখণ্ড লাশের পরিচয় মিলেছে। লাশটি জেলার বাঁশখালী উপজেলার মো. হাসানের (৬২)। হত্যার রহস্যও উদঘাটন করেছে পিবিআই। স্ত্রী ও সন্তানরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে লাশ খণ্ড বিখণ্ড করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম ও বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করেছে পিবিআই। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছোট ছেলে ও তার স্ত্রী পলাতক রয়েছে। তবে লাশের আরও কিছু অংশ পাওয়া গেলেও মাথা এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পিবিআই। সম্পত্তি লিখে না দেয়ায় তাকে খুন করা হয় বলে আটককৃতরা স্বীকার করেছেন।
হত্যাকাণ্ডটি পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে। সংস্থাটি আঙুলের ছাপ নিয়ে নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করে। এগুলো বাঁশখালীর বরইতলি এলাকার বাসিন্দা হাসানের। পরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তার স্ত্রী ছেনোয়ারা ও ছেলে মোস্তাফিজুরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পিবিআই জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি প্রায় ২৭ বছর ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কার্যত নিখোঁজ অবস্থায় ছিলেন। সম্প্রতি পরিবারের কাছে ফিরে আসার পর সম্পত্তির জন্য তাকে চাপ দেয়। তাতে রাজি না হওয়ায় স্ত্রী-সন্তানেরা ঠাণ্ডা মাথায় তাকে খুন করে লাশ টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেয়, যাতে হত্যাকাণ্ডের তথ্যপ্রমাণ গোপন থাকে।
পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) একেএম মহিউদ্দিন সেলিম দৈনিক বাংলাকে জানান, গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থানার আকমল আলী সড়কের পকেট গেইট এলাকার জমির ভিলার ৭ নম্বর বাসায় হাসানকে খুন করা হয়েছে। ওই বাসায় হাসানের ছোট ছেলে তার স্ত্রী-সন্তানসহ থাকে। ওই বাসার আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহর পর পুরো বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে। হত্যার পর শরীরের অংশবিশেষ বস্তায় ভরে বের করার বিষয়টি ফুটেজে স্পষ্ট হয়েছে। আর এটা বের করছিলেন হাসানের ছোট ছেলে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে ওই বাসায় হাসানের স্ত্রী ও বড় ছেলে ছিলেন। হাসানের অবস্থানও রাতে সেখানে ছিল।
পিবিআই পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা জানান,আটককৃত স্ত্রী ও সন্তান হত্যাকাণ্ড জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
তারা জানান,হাসান দীর্ঘদিন ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। কোথায় ছিলেন সেটা তার স্ত্রী-সন্তানরা জানতেন না। এ কারণে তারা হাসানকে মৃত দেখিয়ে এনআইডি নেন । সম্প্রতি তিনি ফিরে আসেন।এতে তারা বিপাকে পড়ে যান। এজন্য তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। স্ত্রী, দুই ছেলে এবং ছোট ছেলের স্ত্রী মিলে পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করে। ঠাণ্ডা মাথায় লাশ কেটে টুকরো করে ট্রলিব্যাগে করে আট টুকরো ফেলা হয়। মাথা এবং বুকসহ শরীরের আরও কিছু অংশ বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ছোট ছেলেই তার বাবার শরীরের টুকরোগুলো বিভিন্নস্থানে ফেলেন।
গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর পতেঙ্গা বোট ক্লাবের অদূরে ১২ নম্বর গেইটে ট্রলিব্যাগটি পাওয়া যায়। কফি রঙের ট্রলিব্যাগে ছিল মানব শরীরের ২ হাত, ২ পা, কনুই থেকে কাঁধ এবং হাঁটু থেকে উরু পর্যন্ত অংশ। এ ঘটনায় পতেঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কাদির বাদী হয়ে এক বা একাধিক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।