অর্থনীতি চট্টগ্রাম

মুক্ত এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক,দুবাইয়ের পথে জাহাজটি

 

সোমালিয়ায় জিম্মি নাবিকদের মুক্ত করতে কত ডলার মুক্তিপণ দেয়া হল এবং কিভাবে তা দেয়া হল এনিয়ে চলছে আলোচনা। মালিক পক্ষ পরিস্কার করে কিছু বলতে রাজি নয়। তবে মুক্তিপণ পেয়ে সোমালিয়ার সময় শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৮ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় শনিবার দিবাগত রাত ৩টা ৮ মিনিট) জাহাজটি থেকে দস্যুরা নেমে যায়। এরপরই মুক্ত হয় নাবিকরা।
মুক্ত হওয়ার পর পরই জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে আল হারমিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় এমভি আবদুল্লাহর দুই পাশে দুটি যুদ্ধজাহাজ পাহারা দিয়ে সোমালিয়া উপকূল ত্যাগ করতে থাকে।
সূত্র জানায়, ছোট একটি উড়োজাহাজ থেকে জাহাজের পাশে ডলারভর্তি ব্যাগ ফেলা হয়। জাহাজের পাশে আগে থেকেই স্পিডবোটে করে অপেক্ষায় ছিল দস্যুরা। ডলারভর্তি ব্যাগ পানি থেকে সংগ্রহ করে দস্যুরা। এরপর প্রায় আট ঘণ্টা পর গভীর রাতে দস্যুরা জাহাজটি ছেড়ে যায়।
এক নাবিক তার পরিবারের সদস্যদের কাছে টাকা পরিশোধ কিভাবে করা হয়েছে তা তুলে ধরেছেন। পরিবারের এ সদস্য গণমাধ্যমকে জানান, ডলারভর্তি ব্যাগ পানিতে ফেলার আগে নাবিকদের জাহাজের ডেকে নিয়ে এসে এক লাইনে দাঁড় করায় দস্যুরা। এ সময় পেছন থেকে নাবিকদের দিকে অস্ত্র তাক করে ছিল দস্যুরা। উড়োজাহাজ থেকে নাবিকদের প্রতি ইশারায় হাত তোলার ইঙ্গিত দেওয়া হয়। এরপর সব নাবিক হাত তোলেন। অর্থাৎ সব নাবিক জীবিত আছেন, এমন নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই উড়োজাহাজ থেকে ডলার ফেলা হয়। তবে ব্যাগে কত ডলার ছিল, তা নিয়ে মালিকপক্ষ কোনো কিছু জানায়নি।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে মুক্তিপণের অর্থ পেলেও দস্যুরা তাৎক্ষণিকভাবে জাহাজ থেকে নেমে যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, জলে-স্থলে নজরদারি এড়াতেই গভীর রাতে দস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে যায়। মুক্তিপণের অর্থ পরিশোধের সময় জিম্মি জাহাজটির অদূরে ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ। আবার স্থলভাগে ছিল সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড পুলিশের টহল।
জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান জাহাজ ও নাবিকরা মুক্ত বলে জানিয়েছেন।
কত ডলারে মুক্তিঃ
মুক্তিপণ দিয়েই জিম্মি থাকা ২৩ নাবিক ও এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ মুক্ত হয়েছে। তবে কত ডলার মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত হলো সেই প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি মালিকপক্ষের কেউ। তবে সোমালিয়ার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম বলছে লেনদেন হওয়া মুক্তিপণের পরিমাণ ৫ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৫৫ কোটি টাকা! সেখানকার পান্টল্যান্ড মিরর নামের সংবাদ মাধ্যম ডলারের এই অঙ্ক উল্লেখ করে দিয়েছে ব্রেকিং নিউজ। তবে মালিক পক্ষের আরেকটি সূত্র মুক্তিপণ বাবদ দেয়া টাকার অঙ্ক আরও কম বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।জলদস্যুদের সঙ্গে বোঝাপড়া চূড়ান্ত হওয়ার কথা স্বীকার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছে কেএসআরএম গ্রুপের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত।
ফেসবুক পোস্টে শাহরিয়ার জাহান রাহাত উল্লেখ করেন, ‘সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকা ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ মুক্ত হয়েছে। নাবিকরা সবাই সুস্থ আছেন। শিগগির তারা দেশে ফিরবেন। ঈদ মোবারক। শুভ নববর্ষ।’ এই পোস্টেও মুক্তিপণের বিষয়টি উল্লেখ করেননি তিনি।
মালিকপক্ষের মুখপাত্র ও মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, মুক্তিপণের বিষয়টি কৌশলগত কারণে আমরা বলতে পারব না। দয়া করে এটা নিয়ে প্রশ্ন করবেন না।
মিজানুল ইসলাম আরও জানান, জাহাজটি মুক্ত করা হয়েছে। এটি এখন আরব আমিরাতের দিকে যাচ্ছে। সেখানে পণ্য খালাস করবে আর নাবিকরা দেশে ফিরে আসবে শিগগির।
কবে দুবাই পৌঁছবেঃ
সোমালিয়ার জলদস্যুদের থেকে মুক্তি পাওয়া এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি দুবাই পৌঁছাতে ৬ থেকে ৭ দিন লাগতে পারে। দুবাই পৌছার পর জাহাজে থাকা ৫৫ হাজার টন কয়লা খালাস করা হবে। আর কয়লা খালাসের পর জাহাজটি চট্টগ্রামে চলে আসতে পারে। তখন জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া ২৩ নাবিক চাইলে জাহাজ চালিয়ে চট্টগ্রামে আসতে পারে অথবা তারা যদি বিমানে করে দুবাই থেকে চট্টগ্রামে আসতে চায় সেই সুযোগও দেয়া হবে। এসবের সবই নির্ভর করছে নাবিকদের ইচ্ছের উপর। রবিবার (১৪ এপ্রিল) সকালে ৯টায় এক প্রশ্নের জবাবে ক্যাপ্টেন মেহেরুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, সোমালিয়া থেকে মুক্তির পর জাহাজটি দুবাই বন্দরে যাচ্ছে। আর সেখানে পৌঁছতে ছয় থেকে সাত দিন সময় লাগতে পারে।
তিনি বলেন, ‘দুবাই থেকে চট্টগ্রামে আসতে প্রায় সাত দিন সময় লাগে। এর সবই নির্ভর করছে নাবিকদের ইচ্ছের উপর। নাবিকরা নিজে জাহাজ চালিয়ে এলে আমাদের বিকল্প টিম পাঠাতে হবে না।’
১২ মার্চ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারমিয়া বন্দরে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজটি জিম্মি করার পর সোমালিয়ার গদভজিরান জেলার জেফল উপকূলের কাছে নিয়ে যায় দস্যুরা। ৯ দিনের মাথায় দস্যুরা প্রথম মুক্তিপণের দাবি জানায়। প্রায় দুই সপ্তাহ দর-কষাকষির পর মুক্তিপণের অঙ্ক চূড়ান্ত হয়।
এর আগে ২০১০ সালে ছিনতাই হওয়া একই কোম্পানির জাহাজ এমভি জাহান মণি ১০০ দিনের মাথায় ছেড়ে দেয় দস্যুরা। সে সময় একইভাবে মুক্তিপণের অর্থ সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল।
##

 

 

 

 

 

 

 

Related Posts