সিনিউজ ডেস্ক:
প্রতিটি মুমিনের শেষ ঠিকানা জান্নাত। জান্নাত অনন্ত সুখের শান্তি-সুনিবিড় আধার। ইসলাম মানুষকে সর্বদা জান্নাতের পথ দেখায়। ইসলামে রয়েছে এমন কিছু আমল যা মানুষকে খুব সহজেই জান্নাতে পৌঁছে দেয়। আসুন, ইসলাম নির্দেশিত পথে নিজেকে পরিচালিত করে এ পথকে সুগম ও মসৃণ করি।
জেনে নিই হাদিসের আলোকে জান্নাতে যাওয়ার ১০টি আমল-
১. ফরজ নামাজ: নামাজ জান্নাতের চাবিকাঠি। জান্নাতে যেতে হলে নামাজের যত্ন নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। রবিআ ইবনে কাআব আসলামি (রা.) বলেন, ‘এক রাতে আমি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। তাঁর অজুর পানি এনে দিলাম এবং প্রয়োজনীয় কাজ করে দিলাম। তিনি আমাকে বললেন, আমার কাছে কী চাও। আমি বললাম, আপনার সঙ্গে জান্নাতে থাকতে চাই। তিনি বললেন, আর কিছু? আমি বললাম, এটিই চাই। তিনি বললেন, অধিক সিজদার মাধ্যমে তোমার জন্য আমাকে সাহায্য করো।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৮৯) অর্থাৎ বেশি বেশি নামাজ পড়ো।
২. সুন্নাত নামাজ: ফরজ নামাজের আগে-পরে সুন্নত নামাজগুলো আদায় করার গুরুত্ব অপরিসীম। হাদিসে সেগুলোকে জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম বলা হয়েছে। উম্মে হাবিবা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দিনে-রাতে ১২ রাকাত নামাজ পড়ে তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানানো হয়। জোহরের আগে চার রাকাত। পরে দুই রাকাত। মাগরিবের পরে দুই রাকাত। এশার পরে দুই রাকাত। ফজরের আগে ২ রাকাত।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৬৩৬২)
৩. মসজিদ নির্মাণ: মসজিদ নির্মাণে অংশ নেয়ার ফজিলত অনেক বেশি। মসজিদ নির্মাতার জন্য জান্নাতে আলিশান বাড়ি তৈরি করবেন আল্লাহ তাআলা। উসমান ইবনে আফফান (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ একটি ঘর তৈরি করেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৪৫০)
৪. আয়াতুল কুরসি: কোরআনে কারিমের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত হলো আয়তুল কুরসি। নামাজের পর এটি পড়তেন রাসুল (সা.)। আবু উমামা বাহিলি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাজের পর আয়তুল কুরসি পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে মৃত্যু ছাড়া কোনো বাধা নেই।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৯৯২৮)
৫. হজ: ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজ। কবুলকৃত হজের প্রতিদান একমাত্র জান্নাত। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করে, কোনো অশ্লীল কথা বলে না এবং পাপকাজে লিপ্ত হয় না, সে মায়ের পেট থেকে জন্ম নেয়ার দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে।’ (বুখারি, হাদিস: ১৫২১) আরো ইরশাদ হচ্ছে, ‘কবুলকৃত হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়।’ (আহমাদ, হাদিস : ১৪৫২২)
৬. তাহাজ্জুদ: শেষ প্রহরে পৃথিবী যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন আরামের বিছানা ছেড়ে আল্লাহর দরবারে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার নামই তাহাজ্জুদ। তাহাজ্জুদ জান্নাতে নিয়ে যাবে আমাদের। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হে লোকসকল, সালামের প্রসার করো। খাবার খাওয়াও। রাতে যখন সবাই ঘুমে বিভোর তখন নামাজ পড়ো। শান্তির সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৯৭)
৭. কয়েকটি মূল্যবান শিষ্টাচার: কিছু শিষ্টাচারের ফজিলত অনেক বেশি। যেমন—উবাদা ইবনে সামিত (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের পক্ষ থেকে ছয়টি বিষয়ের নিশ্চয়তা দাও, আমি তোমাদের জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব। সত্য কথা বলো। ওয়াদা পূর্ণ করো। আমানত ফিরিয়ে দাও। লজ্জাস্থানের হেফাজত করো। দৃষ্টি সংযত করো। হাতকে বিরত রাখো।’ (আহমাদ, হাদিস : ২২৮০৯)
৮. এতিমের তত্ত্বাবধান: এতিমের তত্ত্বাবধান করা অনেক সওয়াবের কাজ। এটি জান্নাতে যাওয়ার আমল। সাহাল ইবনে সাআদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) নিজের তর্জনী ও মধ্যমা একত্র করে বলেন, ‘আমি ও এতিমের তত্ত্বাবধায়ক জান্নাতে এভাবেই থাকব।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০০৫)
৯. রোগীর শুশ্রূষা : রোগীর দেখাশোনা ও সেবা-শুশ্রূষা করা জান্নাতি আমল। সাউবান (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রোগী দেখতে যায় সে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৮)
১০. সরলতা : সহজ-সরল ব্যক্তি আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। তিনি তাদের প্রতিদান হিসেবে জান্নাত দেবেন। উসমান ইবনে আফফান (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা সে ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যে সহজ-সরল। ক্রেতা হিসেবে হোক বা বিক্রেতা হিসেবে। বিচারক হিসেবে হোক বা বিচারপ্রার্থী হিসেবে।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৪৬৯৬)