জে.জাহেদ, বিশেষ প্রতিবেদক।।
নতুন বছরের মার্চেই অনুষ্ঠিত হতে পারে ইউপি নির্বাচন। থাকতে পারে দলীয় প্রতীক। আবার নাও থাকতে পারে। তবে থাকার সম্ভাবনা বেশি। এরই প্রেক্ষিতে কর্ণফুলী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বইছে আগাম নির্বাচনী হাওয়া ও নানা গুঞ্জন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনস্থ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে কারা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন। এতে নড়েচড়ে উঠেছে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থীরা। গুঞ্জন শুরু হয়েছে কারা চাইতে পারে দলীয় প্রতীক নৌকা।
বাজার ছাড়িয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের শুভেচ্ছা ব্যানার ও ফেস্টুনে ভরে গেছে স্যোশাল মিডিয়াও। দোকানে দোকানে বইছে প্রার্থীদের নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ। প্রচার প্রচারণা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলছে সমানতালে। উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান, মহিলা মেম্বার ও মেম্বার পদপ্রার্থীদের মাঝে বিভিন্ন কৌশলে চলছে আগাম প্রচারণা।
এখনও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও ইতিমধ্যে উপজেলার (শিকলবাহা, চরলক্ষ্যা, চরপাথরঘাটা, বড়উঠান ও জুলধা) পাঁচ ইউনিয়নে প্রার্থীদের ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। দলীয় সমর্থন পেতে একই আসনে একাধিক প্রার্থীর পক্ষ থেকে চলছে নানা রকম তদবির, রাজনৈতিক কার্যালয়গুলোও সরগরম হয়ে উঠেছে। এমনকি দলীয় সমর্থন পাওয়ার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
জানা গেছে, প্রার্থীরা নানাভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নৌকা-ধানের শীষ প্রতীক পেতে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। সকলে দলের সমর্থন পেতে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি তৃণম‚ল পর্যায়ে নানা উন্নয়ন কর্মকাÐ, জনসংযোগ, দলীয় ও স্থানীয় সভা-সমাবেশ এবং সামাজিক নানা কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন। দলীয় সমর্থন পেতে সিনিয়র নেতাদের আস্থাভাজন হওয়ারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা সম্ভাব্য প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিতে গ্রামে গ্রামে সামাজিক অনুষ্ঠানে শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন।
সব মিলিয়ে কর্ণফুলী উপজেলায় আগামী ইউপি নির্বাচনী হাওয়া ও সরেজমিনে মাঠের চিত্র দেখে বলা যায়-আগামীতে শিকলবাহা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন বর্তমান চেয়ারম্যান কর্ণফুলী উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি এস এম ছালেহ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সেলিম চৌধুরী, শিকলবাহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম ফোরকান, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেকান্দর হোসেন রানা (সদ্য প্রয়াত বকুল চেয়ারম্যানের বড়ছেলে)। তবে শিকলবাহায় নতুন প্রার্থী যারা আসুক না কেন জনসমর্থনে বর্তমান চেয়ারম্যানেই শক্তিশালী প্রার্থী বলে এলাকাবাসীরা জানান।
চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদে প্রার্থী হতে পারেন বর্তমান চেয়ারম্যান হাজী ছাবের আহম্মদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমদ, চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব সৈয়দ আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক কামাল আহমদ রাজা, কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক নুর আহমদ, কর্ণফুলী উপজেলা সে¦চ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শাহেদুর রহমান শাহেদ, কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম হক, চট্টগ্রাম মহানগর শাখা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম তারা। এছাড়াও আরো অনেকে প্রার্থী হতে পারেন। তবে স্থানীয়রা জানান, চরপাথরঘাটায় বেশির ভাগেই হেবিওয়েট প্রার্থী। এ ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেতে হলে প্রার্থীদের কঠিন ধাপ অতিক্রম করতে হবে। তবে স্থানীয়রা ধারণা করছেন, তরুণদের মধ্যে চরপাথরঘাটায় নতুন কেউ চমক দেখাতে পারেন।
ওদিকে, চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন পরিষদে প্রার্থী হতে পারেন-বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী, কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আমজাদ হোসেন, কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নাজিম উদ্দীন হায়দার, কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ সোলায়মান তালুকদার ও আরো কয়েকজন। এদের মধ্যে বেশির ভাগ সাধারণ মানুষের আগ্রহ যুবলীগ সভাপতি মোহাম্মদ সোলায়মান তালুকদার প্রতি। যদিও বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী এখানে বেশ শক্তিশালী প্রার্থী।
জুলধা ইউনিয়ন পরিষদে প্রার্থী হতে পারেন-জুলধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব রফিক আহমদ, কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাবেক চেয়ারম্যান হাজী মোহাম্মদ নুরুল হক, কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জুলধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আমির আহমদ। জানা যায়, চরপাথরঘাটার মতো জুলধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদেও এবার ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের কঠিন প্রতিযোগিতার সিঁড়ি পার হয়ে দলীয় প্রতীক (নৌকা) ছিনিয়ে আনতে হবে। সাধারণ মানুষের একটি অংশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আমির আহমদের নাম বেশি উচ্চারণ করতে শোনা যায়।
বড়উঠান ইউনিয়নে প্রার্থী হতে পারেন বর্তমান চেয়ারম্যান কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদারুল আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হাজী রফিকউল্লাহ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন খাঁন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোঃ আহমদ হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য মামুনুর রশিদ, বড়উঠান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মন্নান খাঁন ও বড়উঠান ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। ইউনিয়নের সাধারণ মানুষেরা জানান, এ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলমের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। নতুন কাউকে এই জনপ্রিয়তা ভেদ করে বিজয়ী হওয়া কঠিন হতে পারে।
এদিকে, আগামী মার্চে প্রথম দফা ও এপ্রিল-জুন মাসে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ২০২১ সালের মার্চ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ সম‚হের পর্যায়ক্রমে মেয়াদ প‚র্তি হবে। নির্বাচন উপযোগী ইউনিয়ন পরিষদ সম‚হের নামের তালিকা ১০ কার্য দিবসের মধ্যে আবশ্যিকভাবে পাঠানোর জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সারা দেশে নির্বাচন উপযোগী ৪ হাজার ৫৪৪টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে মার্চ মাসের শেষদিকে প্রথম পর্যায়ে উপক‚লীয় এলাকার প্রায় ৭৭৪টি ইউপিতে নির্বাচনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে মার্চের শেষ সপ্তাহে ভোট করতে চায় ইসি। আগামী এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যেই বাকি ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায়।
এছাড়াও আগামী ৬ জুন রোজা শুরু হচ্ছে। রোজার সময় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে না। আবার জুনের মধ্যেই প্রায় সব ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদগুলোর মেয়াদ প‚র্ণ হওয়ার আগের ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।