নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) টিম মঙ্গলবার আল্লামা আহমদ শফী ‘হত্যা মামলায়’ হেফাজতে আমির মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরীসহ অন্তত ১৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এর মধ্যে বাবুনগরী ছাড়া বাকিদের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
পিবিআইয়ের চট্টগ্রামের বিশেষ পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি টিম হাটহাজারী ও বাবুনগর বড় মাদ্রাসায় গিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
জেলা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার নাজমুল হোসেন বলেন, আমরা এ হত্যা মামলায় ১৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ১৫ জনের জবানবন্দি নিয়েছি। শাহ আহমদ শফী সাহেবের যে কক্ষ সেটি পরিদর্শন করেছি এবং আলামত সংগ্রহ করেছি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পিবিআই টিম দুঘণ্টা ধরে হাটহাজারী মাদরাসায় অবস্থান করে।
এসময় মাদরাসার আশপাশ জুড়ে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মাদরাসায় বাবুনগরী, আশরাফ আলী নিজামপুরী, মাদরাসার কর্মকর্তা মো. ইয়াহিয়াসহ অন্তত ১৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর বাবুনগর মাদরাসায়ও আরও সাত-আট জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘যা জিজ্ঞেস করেছে, জবাব দিয়েছি। এটা নিয়ে কোনো কথা বলব না। আমাদের বক্তব্য আমরা এর আগেই সংবাদ সম্মেলনে দিয়েছি। তদন্তের স্বার্থে আগামীতেও যদি তারা আসেন, আমরা মেহমানদারি করব।’
২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমীর শাহ আহমদ শফীর জীবনাবসান হয়। তিনি হাটহাজারীর দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসার মহাপরিচালক ছিলেন। মৃত্যুর আগে ওই মাদরাসায় তিনদিন ধরে তাকে অবরুদ্ধ করে ছাত্র বিক্ষোভ হয়। এর মধ্যে শফী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং একপর্যায়ে শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হয়। হেলিকপ্টারে ঢাকায় হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর শফীর পরিবার এবং হেফাজতে ইসলামের মধ্যে তার অনুসারীরা শফীকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এজন্য তারা বাবুনগরী ও তার অনুসারীদের দায়ী করেন।
এরপর ১৭ ডিসেম্বর সকালে আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বাদী হয়ে তৃতীয় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিপলু কুমার দে’র আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙার হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসা মামুনুল হকসহ ৩৬ জনকে আসামি করা হয়। আদালত মামলা গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছিলেন।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব নাছির উদ্দিন মুনির ও মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস এবং হাবিব উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, জাকারিয়া নোমান ফয়েজী, নুরুজ্জামান নোমানী, আব্দুল মতিন, মো. শহীদুল্লাহ, মো. রিজওয়ান আরমান, মো. নজরুল ইসলাম, হাসানুজ্জামান, এনামুল হাসান ফারুকী, মীর সাজেদ, জাফর আহমদ, মীর জিয়াউদ্দিন, আহমদ, মাহমুদ, আসাদউল্লাহ, জোবায়ের মাহমুদ, এইচ এম জুনায়েদ, আনোয়ার শাহ, আহমদ কামাল, নাছির উদ্দিন, কামরুল ইসলাম কাসেমী, মোহাম্মদ হাসান, ওবায়দুল্লাহ ওবাইদ, জুবায়ের, মোহাম্মদ, আমিনুল হক, রফিক সোহেল, মোবিনুল হক, নাঈম, হাফেজ সায়েমউল্লাহ ও হাসান জামিল।
মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৮০-৯০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া সাক্ষী করা হয়েছে ছয়জনকে।