ক্রিকেট খেলা

সাকিবের আলো ছড়ানো অরেকটি দিন

ক্রীড়া ডেস্ক:

যা হওয়ার কথা ছিল, হলোও অনেকাংশে তাই। আবার যা হওয়ার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না, দেখা গেল তার কিছু ঝলকও। যেটি দেখালেন মুস্তাফিজুর রহমান। ডানহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে বল ভেতরে ঢোকানোর কায়দা রপ্ত করার চেষ্টা তিনি করে আসছেন অনেক দিন থেকেই। যা আয়ত্তে চলে আসার নমুনাও আগে তেমন দেখা যায়নি।

দেখা গেল ১০ মাস পর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার দিন। বল ভেতরে ঢোকালেন এই বাঁহাতি পেসার। লেগের দিকে ঘোরাতে চাইলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনার সুনীল আমব্রিস, কিন্তু মিস করলেন লাইন। বল এমনভাবে প্যাডে লাগে যে রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি কোনো। সেখানেই শেষ নয়, মুস্তাফিজ অন্য ওপেনারকে ফিরিয়ে হানেন জোড়া আঘাতও।

কুয়াশায় প্রায় অন্ধকার হয়ে থাকা দুপুরে তিন পেসার নিয়ে নামা বাংলাদেশের অনভিজ্ঞ ক্যারিবীয়দের ওপর চড়ে বসার সেই শুরু। এরপর প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের চাপে আরো চিড়েচ্যাপ্টা করে নিষেধাজ্ঞার পর নিজের প্রত্যাবর্তন রাঙালেন সাকিব আল হাসানও। এটি আবার ছিল দেশের মাটিতে তাঁর শততম ওয়ানডেও। পারফরম্যান্সও হলো জোড়া উপলক্ষকে স্মরণীয় করে রাখার মতোই। ৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হওয়ার পথে দেশের মাটিতে ১৫০ উইকেটের মাইলফলকও পার হলেন এই অলরাউন্ডার।

সাকিবের আলো ছড়ানোর ম্যাচে অভিষিক্ত হাসান মাহমুদও অভিষেক রঙিন করে রাখার মতো বোলিং করলেন। টানা দুই বলে উইকেট নিয়ে এমনকি হ্যাটট্রিকের

সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন এই তরুণ পেসার। সেটি না হলেও ২৮ রানে ৩ উইকেট নেওয়া হাসানও জয়ের পথে দলকে অনেক দূর এগিয়ে দেওয়ার অন্যতম অংশীদার। ছয়জন অভিষিক্তকে নিয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং চুরমার মুস্তাফিজ-সাকিব-হাসান ত্রয়ীতে। তাদের ১২২ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে অনায়াস জয় নিশ্চিতই প্রত্যাশিত ছিল।

সেটি কিন্তু হলো না। এ জন্যই শুরুতে বলে রাখা, যা হওয়ার কথা, তা অনেকাংশে হলেও পুরোটা নয়। কারণ বোলিংয়ে আলো ছড়ালেও ব্যাটিং কিছুটা অন্ধকার স্বাগতিকদের। অল্প রান তাড়ায়ও ৩৩.৫ ওভার খেলে জিততে হলো ৬ উইকেটে। বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে লড়াই করল ক্যারিবীয়রাও। জয় তাই সহজ হলো না। বরং লক্ষ্য মাত্র ১২৩ না হয়ে ১৬০-১৭০ হলে কী হতো, জয় দিয়ে আইসিসি ওয়ানডে লিগ শুরুর ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য সেই ব্যাটিং দুর্ভাবনাই জাগিয়ে রাখল।

যদিও দীর্ঘ অপেক্ষার পর জয় দিয়ে নিয়মিত অধিনায়কত্বের অধ্যায় শুরু করার পথে সর্বোচ্চ ৪৪ রানের ইনিংস খেলা তামিম ইকবাল দিলেন অন্য ব্যাখ্যা, ‘এখানে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা সম্ভব নয়। শুরুতে উইকেট দেখে সে ধারণাই হয়েছিল আমার। কিছুই করার ছিল না, কারণ সূর্য ওঠেনি। কাউকেই দোষারোপ করার সুযোগ নেই। এই উইকেটে ধৈর্য ধরে বুঝে-শুনে ব্যাটিং করা জরুরি।’

ব্যাটিং পাওয়ার প্লে লিটন কুমার দাসকে নিয়ে নিরাপদেই পার করে দিয়েছিলেন তিনি। তাঁদের ৪৭ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপ ভাঙে আকিলের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে। দারুণ টার্নে লিটনকে (১৪) পরাস্ত করেন এই বাঁহাতি স্পিনার। শরীরের খুব কাছের বল কাট করতে গিয়ে বোল্ড হওয়া সাকিবের (৪৩ বলে ১৯) লড়াইও শেষ হয়েছে একই বোলারকে উইকেট দিয়ে। সাকিবকে চারে সরিয়ে তিনে নামানো নাজমুল হোসেন শান্তও (১) থিতু হওয়ার আগেই ২৬ রানে ৩ উইকেট নেওয়া আকিলের শিকার।

যদিও তাঁর এই প্রচেষ্টা যথেষ্ট ছিল না। এর আগেই যে শিকারযজ্ঞে ক্যারিবীয় ব্যাটিংকে নাকাল করে ছেড়েছেন মুস্তাফিজ-সাকিব-হাসানরা। এর মধ্যে মুস্তাফিজের বলে ক্যারিবীয় ওপেনার জশুয়া ডি সিলভার ব্যাট ছুঁয়ে যাওয়া বল গালিতে নিজের ডানদিকে ঝাঁপিয়ে যেভাবে তালুবন্দি করেছেন লিটন দাস, তাতে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে ১০ মাসের বিরতির জড়তা ঝেড়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। ব্যাটিং সেটি আরো বেশি করে মনে করাতে পারত। তা মনে করায়নি বলেই যা হওয়ার কথা ছিল, তার পুরোটা হয়নি!

Related Posts