সিনিউজ ডেস্ক:
দেশে গৃহহীন মানুষেরা এক ধরনের ঈদ উদযাপন করেছেন। একদিন আগেও যাদের ঘর বাড়ি ছিল না, পা রাখার নিজের এক টুকরো জমি ছিল না- তারা আজ লাখপতি হয়ে গেছেন। জমিসহ পাকা ঘর পেয়েছেন। নিজের নামে দলিলসহ একখন্ড জমিতে পাকা বাড়ি পেয়ে ঘরহীন মানুষের আনন্দের শেষ নেই যেনো। এ যেনো এক পরম শান্তি। পরম প্রাপ্তি। আর এ শান্তি আজ প্রায় ৭০ হাজার পরিবারে ছড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (২৩ জানুয়ারি) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৪৯২টি উপজেলার প্রায় ৭০ হাজার পরিবারকে পাকা ঘরসহ বাড়ি হস্তান্তর করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই উপলক্ষে দেশের ৪৯২ উপজেলায় বয়ে গেছে আনন্দ আর উচ্ছ্বাস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার পেয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের লোকেরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। তাদের অনেকেই উপহার পাওয়ার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আনন্দাশ্রু বইয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
এই কর্মসূচির উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমার অত্যন্ত আনন্দের দিন। গৃহহীন পরিবারকে গৃহ দিতে পারছি, এটি আমার সবচেয়ে আনন্দের। আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের কথাই ভাবতেন। আমাদের পরিবারের লোকদের চেয়ে তিনি গরীব অসহায় মানুষদের নিয়ে বেশি ভাবতেন এবং কাজ করেছেন। এই গৃহ প্রদান কার্যক্রম তারই শুরু করা।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলছেন, বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। আমি জনগণের জন্য বিনিয়োগে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের জন্য ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অসুস্থতা, লিঙ্গ বৈষম্য, অবিচার আর অজ্ঞতার শেকল থেকে তাদের মুক্ত করতে চাই’।
এই সময় লাইভে যুক্ত ছিল খুলনার ডুমুরিয়া,চাপাইনবাবগঞ্জ সদর, নীলফামারীর সৈয়দপুর ও হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা। এছাড়াও দেশের সব উপজেলা অনলাইনে যুক্ত হয়। পঞ্চগড় সদরের টোকাপাড়ার ভূমিহীন সালেহা বেগম (৪৫) কৃষিশ্রমিক স্বামী মমতাজ আলী (৫৫) ও দুই ছেলেকে নিয়ে অন্যের জমির উপর ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করতেন। সেই সালেহা এখন পাকাঘরে বাস করবে। এই ইউনিয়নের আরো ১৩টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার উপহার পেয়েচেন। অনুভূতি ব্যক্ত করে সালেহা বেগম বলেন,‘স্বপ্নেও ভাবিনি কোনোদিন আমাগো পাকাঘর হইব। বিল্ডিং বাড়িতে ঘুমাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাগো ঘর দিচ্ছে। এ সরকারের জন্যই ধনীদের মতো আমাদেরও পাকাঘরে ঘুমানোর স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। মন থেকে দোয়া করেছি- আল্লাহ যেন শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু দান করেন।’
আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রায় নয় লাখ মানুষকে পাকাঘর দেয়া হবে। প্রথম পর্যায়ে ঘর পেয়েছে প্রায় ৭০ হাজার পরিবার। আগামী মাসে আরো এক লাখ পরিবার এই উপহার পাবে। একসঙ্গে এতো মানুষকে জমির মালিকানা দিয়ে পাকা ঘর করে দেয়া পৃথিবীতে এটিই প্রথম এবং একমাত্র ঘটনা। ঘরের মালিকরা সপরিবারে বিভিন্ন সেবা পাবে। শিক্ষা-স্বাস্থ্য, সুপেয় পানিসহ সকল নাগরিক সুবিধা থাকবে। প্রশিক্ষণের আওতায় এনে তাদের স্বনির্ভর করা হবে। এতে দারিদ্র্যতা বিমোচন হবে। অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। সারা দেশের নয় লাখ পরিবার বাড়ি পাবে এটা আজ আর স্বপ্ন নয়। এর বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন শেখ হাসিনা। বেঁচে থাকার স্বপ্ন। টিকে থাকার স্বপ্ন। স্বাবলম্বী ও সমৃদ্ধ হওয়ার স্বপ্ন। নিশ্চিত করছেন তাদের অধিকার।
ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে আশ্রয়ন নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, ঋণপ্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা এবং আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করা। এই প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিন লাখ ২০ হাজার ৫২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়।
এর আগে শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্বাস্তু পরিবারের জন্য কক্সবাজারে ‘খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প’ করেন। সেটিও বিশ্বের সর্ববৃহৎ একক জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্প। এতে পাঁচতলা বিশিষ্ট ২০টি ভবনে ৬০০ জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে ফ্ল্যাট দেয়া হয়।
এছাড়াও ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে থাকার জায়গা দিয়ে বিশ্বে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ উপাধিতে ভূষিত হন শেখ হাসিনা। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন তার (শেখ হাসিনা) যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
উল্লেখ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ এক ভাষনে ছিন্নমূল মানুষের জন্য এমন অনেক কর্মসূচি ঘোষনা করেছিলেন। এই কর্মসূচির আওতায় দেশের প্রতিটি থানায় গড়ে উঠেছিল ভূমিহীনদের নিবাস। এরই ধারাবাহিকতায় ভূমিহীনরা প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে পেল নতুন আবাস। এই মহতি পদক্ষেপ কালের সাক্ষী হয়ে বহুকাল টিকে থাকবে।
একযোগে প্রায় ৭০ হাজার গৃহহীন পরিবারকে বাড়ি উপহার দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে নজির স্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিহাসে মানবতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার এই অবদান দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।