ক্রীড়া ডেস্ক:
তিন ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে বড় জয় পাওয়ার পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডুবিয়েছে টাইগাররা। তৃতীয় ওয়ানডেতে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ১২০ রানে জিতেছে বাংলাদেশ।
এ নিয়ে উইন্ডিজদের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক লড়াইয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। সঙ্গে ২০০৯ সালের পর ক্যারিবিয়ানরা দ্বিতীয়বার হোয়াইটওয়াশ হলো টাইগারদের হাতে। ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা আট ম্যাচে জিতল বাংলাদেশ। দেশটির এর চেয়ে বেশি জয় আছে কেবল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
দেশের মাটিতে সবশেষ ১০ ওয়ানডে সিরিজের নয়টিতেই জিতল বাংলাদেশ। এই জয়ে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে পেল আরও ১০ পয়েন্ট। এর সঙ্গে পয়েন্ট তালিকায় উঠে এলো দুই নম্বরে।
অন্যদিকে এই ম্যাচ জেতার ফলে পুরো ত্রিশ পয়েন্ট পেয়ে আইসিসি বিশ্বকাপ সুপার লিগের দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানে উঠে এলো টাইগাররা। ছয় ম্যাচে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে অস্ট্রেলিয়া।
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের দেওয়া ২৯৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৪.২ ওভারে ১৭৭ রানে গুটিয়ে যায় উইন্ডিজ। এর আগে টসে হেরে চার পাণ্ডব তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ঝড়ো ফিফটিতে ৬ উইকেটে ১৯৭ রান করে বাংলাদেশ।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ওপেনার লিটন দাশকে (০) হারালেও অধিনায়ক তামিমের ব্যাটে এগোতে থাকে বাংলাদেশ। তবে তাকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি নাজমুল হাসান শান্ত (২০)।
অবশ্য এরপর শুরুর চাপ সামলে দারুণ জুটি গড়েন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান তামিম ও সাকিব।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৯তম ফিফটি তুলে তৃতীয় উইকেট হিসেবে বিদায় নেন তামিম। তার ৮০ বলে ৬৪ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৩ চার ও ১ ছয়ে। অবশ্য তার আগে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন তিনি।
এই সিরিজ দিয়ে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা সাকিবও তুলে নেন তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৮তম ফিফটি। ১৮ মাস পর ফিফটির দেখা পেলেন তিনি। ব্যক্তিগত ৫১ রানে তিনি ফেরেন রেইফারের বলে বোল্ড হয়ে। তার আগে দেশের মাটিতে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬ হাজার রান ও ৩০০ উইকেটের রেকর্ড গড়েন সাকিব।
তামিম-সাকিবের বিদারের পর দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। মুশফিকের ৫৫ বলে ৬৪ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৪ চার ও ২ ছয়ে এবং মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত থাকেন ৪৩ বলে ৩ ছয় ও ৩ চারে ৬৪ রানে। এছাড়া সৌম্য সরকার করেন ৭ রান। মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন অপরাজিত থাকেন ৫ রানে।
এই মাঠে ওয়ানডেতে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। এর আগে ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৮৮ রান করেছিল টাইগাররা। তবে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহটি শ্রীলঙ্কার দখলে। ২০০৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বিপক্ষেই ৭ উইকেট হারিয়ে ৩০৯ রান করেছিল লঙ্কানরা।
লক্ষ্য তাড়া করতে নামা উইন্ডিজকে শুরুতেই জোড়া শিকারে বড় ধাক্কা দেন মোস্তাফিজুর রহমান। ওপেনার কিয়র্ন ওটলেকে (১) উইকেটরক্ষক মুশফিকের হাতে ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরানোর পর আরেক ওপেনার সুনীল আমব্রিসকে (১৩) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি।
এরপর নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসেই কাইল মায়ার্সকে (১১) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে সাজঘরে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। কিছুক্ষণ পর ক্যারিবিয়ান শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা মোহাম্মদ সাইফউদ্দীনও। অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদকে (১৭) ফেরানোর পর এনক্রুমাহ বোনারকে (৩১) বোল্ড করেন তিনি।
মিরাজ নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান উইকেটরক্ষক জাহমার হ্যামিল্টনকে (৫)। আগের ম্যাচের মতো এবারও বাংলাদেশের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন রভমেন পাওয়েল। বিপদে পড়া উইন্ডিজকে বাঁচাতে চেষ্টা করছিলেন তিনি। অবশ্য ততক্ষণে ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে তারা। তবুও দারুণ ব্যাটিংয়ে ফিফটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন পাওয়েল। অর্ধ-শতক থেকে ৩ রান দূরে থাকতে সৌম্যর বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরপর রেয়মন রেইফার (২৭) ও আলঝেরি জোসেফ (১১) কেবল ব্যবধানটুকু কমায়। শেষ উইকট হিসেবে আকিল হোসেন আউট হওয়ার পর সিরিজ জয়ে মেতে ওঠে বাংলাদেশ। ব্যক্তিগত ১ রানে অপরাজিত ছিলেন কিয়ন হার্ডিং।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন সাইফউদ্দীন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন মুশফিক আর পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলে প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ হয়েছেন সাকিব।
উইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে পূর্ণ পয়েন্ট অর্জন করল বাংলাদেশ। ৩০ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপ সুপার লিগের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ওঠে এসেছে টাইগাররা। ১০ পয়েন্ট বেশি নিয়ে বাংলাদেশের ওপরে আছে কেবল অস্ট্রেলিয়া।