নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন কাল বুধবার (২৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন ঘিরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। এদিকে নির্বাচন কমিশন বলছে, শান্তিপূর্ণ নিবাচন অনুষ্ঠানে সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভোটে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবে ১৪ হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নির্বাচনকে ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। এবার সিটি নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সবকটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এজন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য মাঠে থাকবেন বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, আনসার বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী। থাকবেন সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা সংস্থাও’।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী ও বহিরাগত লোকজন নগরী ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করার চেষ্টা করলে আইনের আওতায় আনা হবে। নির্ভয়ে ভোট প্রদানের জন্য ভোটারদের প্রতি অনুরোধ করেছেন তিনি।
ভোটগ্রহণে ৭৩৫ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৪৩৯ টি ভোটকেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্র হিসেবে চিহিৃত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ৩০৬ ভোটকেন্দ্র সাধারণ হিসেবে চিহিৃত করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে নজর বেশি থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৬ জন ও গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ১৮ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।
এছাড়াও বিজিবি ২৫ প্লাটুন, র্যাবের ৪১টি টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে ১৪০টি, মোবাইল টিম থাকবে ৪১০টি। সবমিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবেন ১৪ হাজার ৩৭০ জন সদস্য। মাঠে থাকবেন ৬৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ২০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে, বিজিবি প্লাটুন প্রতি একজন, র্যাব সিপিসির সঙ্গে তিন জন করে ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন।
গত ৮ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। গতকাল (সোমবার) রাত ১২টা থেকে নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা ও সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল শেষমুহূর্তে প্রচার-প্রচারণায় মুখরিত ছিল নগরী। মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছিল চিরচেনা সেই বন্দরনগরী।
প্রার্থী : নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাত প্রার্থী। এরমধ্যে রয়েছেন প্রধান দুই দলের হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন। এছাড়াও রয়েছেন ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী মাওলানা এম.এ মতিন (মোমবাতি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর (আম), ইসলামিক ফ্রন্টের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ (চেয়ার), ইসলামী আন্দোলন’র মো. জান্নাতুল ইসলাম (হাতপাখা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী (হাতি)।
১৪ সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী রয়েছেন ৫৭ জন। সাধারণ ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৩৯ ওয়ার্ডে। ১৮নং ওয়ার্ডে হারুনুর রশিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। আর ৩১ নং আলকরণ ওয়ার্ডে এক কাউন্সিলর প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। তবে ওই ওয়ার্ডে মেয়র ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৩৯ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১৬৮ জন প্রার্থী।
ভোটকেন্দ্র ও ভোটার : নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। ভোটকক্ষ হচ্ছে ৪ হাজার ৮৮৬টি। প্রতি ভোটকক্ষে ইভিএম মেশিনে ভোটগ্রহণ করা হবে। এবার ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন এবং মহিলা ভোটার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন।
গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি চসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। সেই অনুযায়ী ২৯ মার্চ ভোটগ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ৫ আগস্ট চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও ৪১ জন সাধারণ ওয়ার্ড এবং ১৪ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হয়। প্রশাসক হিসেবে খোরশেদ আলম সুজনকে নিয়োগ দেয় সরকার।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা : ভোটগ্রহণে দায়িত্বে থাকবেন ১৬ হাজার ১৬৩ জন কর্মকর্তা। সকলকে ইভিএম বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ৫ হাজার ৯০২ জন এবং পোলিং অফিসার ১০ হাজার ২৬৮ জন।
ইভিএম : চসিক নির্বাচনে এবার প্রথমবারের মতো ইভিএম মেশিনে ভোটগ্রহণ করা হবে। ভোটের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১১ হাজার ৫৭২ ইভিএম। চার হাজার ৮৮৯টি ভোটকক্ষের জন্য থাকবে একটি করে ইভিএম মেশিন। এছাড়াও দুটি কক্ষের জন্য একটি করে ইভিএম মেশিন অতিরিক্ত রাখা হবে। আর ঝুঁকি এড়ানোর জন্যও বিশেষ ব্যাকআপ রাখা হয়েছে।
ভোটদান পদ্ধতি : সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ইভিএমের কন্ট্রোল প্যানেলের মাধ্যমে ভোটারকে ইলেক্ট্রনিক ব্যালট ইস্যু করবেন। ভোটার নম্বর অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে ভোটার শনাক্ত করা হবে। তারপর আঙ্গুলের ছাপের মাধ্যমে ভোটার শনাক্ত করার পর ভোটারের ছবিসহ পরিচয় পর্দায় ভেসে উঠবে। এরপর গোপন কক্ষে একজন ভোটার মেয়র, সংরক্ষিত ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরসহ তিনটি পদে ভোট প্রদান করতে পারবেন। ব্যালট ইউনিটে প্রার্থীর নাম ও প্রতীকের ডান পার্শ্বে সাদা বোতামে চাপ দিয়ে ভোট প্রদান করবেন। পরে সবুজ বোতাম চেপে ভোট নিশ্চিত করবেন।
নির্বাচনী সরঞ্জাম: মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল থেকে ইভিএম মেশিনসহ অন্যান্য সরঞ্জাম কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। আজ সকাল ১১টায় নগরের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম হল, আগ্রাবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নাসিরাবাদ বালক উচ্চ বিদ্যালয়, বন্দর স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসব সরঞ্জামাদি বিতরণ শুরু হয়।