নির্বাচন লিড নিউজ সিটি কর্পোরেশন

সিটি নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ে আ.লীগে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বলয়-ভিত্তিক রাজনীতি, প্রভাবশালীদের ক্ষমতার দাপট এবং সংরক্ষিত ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে বেশ অস্বস্তিতে ছিলো দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ।

অধিকাংশ ওয়ার্ডে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী থাকায় দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছিল দলটির দায়িত্বশীলদের। একাধিকবার বৈঠক করে মনোনয়নবঞ্চিতদের বশে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা। এ নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিল ক্ষমতাসীন দলটি। ভোটের মাঠে দেখা দিয়েছিল বিজয় শঙ্কা। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে নৌকা প্রতীকের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনে বেশ স্বস্তিতে রয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তাদের দাবি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকার নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন বঙ্গবন্ধুকন্যার উন্নয়নের সুফল। চট্টগ্রামের প্রতিটি ভোটার, তাদের ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে চলমান উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছেন। তাই অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত নৌকার বিজয় নিশ্চিত হয়েছে বলে দাবি জ্যেষ্ঠ নেতাদের।

সূত্রে জানায়, গত ২৭ জানুুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ভোটগ্রহণ। অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। একটি সংরক্ষিত ও সাত সাধারণ কাউন্সিলর পদে জয় পেয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির বিদ্রোহীরা। অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে পরাজয় বরণ করেছে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল সমর্থিত প্রার্থীরা। আর ভোটে নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে।

মূলত নির্বাচনের আগে দলটির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বলয়-ভিত্তিক রাজনীতি, প্রভাবশালীদের ক্ষমতার দাপট এবং সংরক্ষিত ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীরা। একাধিক ওয়ার্ডে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছিল দায়িত্বশীলদের। একাধিকবার বৈঠক করে মনোনয়নবঞ্চিতদের বশে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা। এ নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করায় বড় স্বস্তিতে রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রতিটি ইউনিটের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগে স্বস্তি থাকলেও ভোটের মাঠে বড় পরাজয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটির মনোনীত মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলররা কেউ ভোটের মাঠে জয়লাভ করতে পারেনি। ফলে তাদের শূন্য ঝুলি নিয়ে ফিরতে হয়েছে ভোটের মাঠ থেকে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ একযুগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমাতায় থেকে দেশকে আজ উন্নয়নের এক মহাসড়কে নিয়ে গেছেন। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকার নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন বঙ্গবন্ধুকন্যার উন্নয়নের সুফল। চট্টগ্রামের প্রতিটি ভোটার, তাদের ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছেন। নৌকার এ বিজয় উন্নয়নের বিজয়।’

আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের শুরু থেকে স্থানীয় ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছিলেন। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা ইভিএম ভাঙচুর করায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। শঙ্কা থেকে অনেকেই ভোট দিতে আসেননি। নইলে ভোটার উপস্থিতির সংখ্যার আরও হতো।’ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘কিছু কিছু স্থানে দলীয় বিদ্রোহীরাও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। তবে ভোটের মাঠে জয়লাভ করায় স্বস্তি প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

তথ্যমতে, দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিগত যেকোনো নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন দেননি তিনি। ক্ষমতাসীন দলটির দলীয় সভানেত্রীর এমন কঠোর অবস্থানের পরও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতাদের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে জয়লাভ করেছেন সাতজন সাধারণ কাউন্সিলর ও একজন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী।

বিদ্রোহী হয়ে জয়লাভ করেছেন যারা— ২ নং জালালাবাদ ওয়ার্ডে সাহেদ ইকবাল বাবু (ঝুড়ি), ৩ নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে শফিকুল ইসলাম (মিষ্টি কুমড়া), ৪ নং চান্দগাঁও ওয়ার্ডে এসরারুল হক (ঘুড়ি), ৯ নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডে জহুরুল আলম জসিম (মিষ্টি কুমড়া), ২৬ নং উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে মোহাম্মদ ইলিয়াস (ঘুড়ি), ৩৩ নং ফিরিঙ্গি বাজার ওয়ার্ডে হাসান মুরাদ বিপ্লব (মিষ্টি কুমড়া), ৩৬ নং গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডে প্রার্থী মোর্শেদ আলী ও সংরক্ষিত ১ নং ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী ফেরদৌস বেগম মুন্নী (আনারস)।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, ‘উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতেই চট্টগ্রাম সিটির মানুষ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। এ বিজয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের সুফল। বিদ্রোহীদের মদতদাতাদের ছাড় নয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, চলমান সকল নির্বাচনে, যারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী হচ্ছেন এবং এই সকল বিদ্রোহীদের যারা মদত দিচ্ছেন, এদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। সময়মতো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিজয় খুবই স্বাভাবিক। কারণ বিগত এক যুগ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যে উন্নয়ন আমরা করেছি, সেই উন্নয়নের সুফল এই ভোটের ফলাফল। চট্টগ্রামের মানুষের স্বার্থে এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি চট্টগ্রামবাসীর জন্য কখনো কোনো কিছু করেনি। তাই বিএনপি মনোনীত প্রার্থী যে ভোট পেয়েছে, এটাই তাদের জন্য বেশি। তারা যে ভোট পেয়েছে, তার মধ্যে অল্পকিছু ভোট তাদের।’

দলীয় বিদ্রোহীদের বিষয়ে লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘সময় এসেছে, দলীয় পদ অনুযায়ী দায়িত্বশীল নেতাদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার এবং দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলা। তাহলে যেকোনো নির্বাচনে কেউ আর দলীয় বিদ্রোহী হবে না। বিদ্রোহীদের বিষয়ে আমরাও কঠোর হয়েছি। তৃণমূলের নেতাদের হওয়া উচিত।’

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ মানুষ সবসময় কর্মঠ, পরিশ্রমী, মেধাবী এবং ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের ভোট দেন। সেই বিষয়গুলোই বিবেচনা করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সৎ, যোগ্য ও ক্লিন-ইমেজের প্রার্থীকে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন দিয়েছিলেন। সে কারণেই বঙ্গবন্ধুকন্যার মনোনীত প্রার্থীকে চট্টগ্রামবাসী ভোট দিয়ে বিজয় উপহার দিয়েছেন। এ বিজয় আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের বিজয়।’

Related Posts