নিজস্ব প্রতিবেদক:
সন্ধ্যা হলেই আমার গ্রামের মানুষের মনে ভয় ডুকে যায়। সবাই অনিরাপদ মনে করে। সারাদিন পরিশ্রম করে রান্নাঘরে ভাত খেতে বসলেই হাকডাক আসে ‘হাতি আসতেছে’। এই হাতির আক্রমণে একে একে নিহত হয়েছেন ৭ম শ্রেণির ছাত্র জুয়েল দাশ, জালাল আহমদ ও মায়ারাণী বড়ুয়া। এখনো প্রতি রাতে গ্রামের মানুষ ফোন করেন আমাকে। বাড়ির সামনে হাতি এসেছে। ফসলি জমি নষ্ট করে দিচ্ছে। আমরা আমাদের মা-বোন আর সন্তানকে হারাতে চাই না। কৃষকের ফসলি জমি নষ্ট হোক তাও চাই না। প্রয়োজনে টাকা লাগলে আপনারা টাকা নিয়ে যান। তবুও আমার বড়উঠানের গ্রামবাসীকে হাতীর আক্রমণ থেকে বাঁচান।
শনিবার (৩০জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম কর্ণফুলীতে ‘বন্যহাতি-মানুষ সংঘাত নিরসন’ শীর্ষক জনসচেতনতামূলক কর্মশালায় বনবিভাগের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন বড়উঠান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলম।
রফিকুল ইসলামের সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন চটগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ খোরশেদ আলম।
তিনি বলেন, আপনারা হাতিকে আক্রমণ করবেন না। এটা আমাদের জাতীয় সম্পদ। হাতি দেখলে বনবিভাগকে খবর দেবেন। আমরা যতটুকু সম্ভব নিরসনের ব্যবস্থা করব। এরপরেও কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে ২৫ হাজার, আহত পরিবারকে ৫০ হাজার এবং নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ১লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলেন।’
বিপরীতে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ২০১১ সালে থেকে গ্রামে হাতির উপদ্রব নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে আসছি। কিন্তু কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরে আমাদের মাননীয় ভূমিমন্ত্রী আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ কে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তিনি হাতির আক্রমণ থেকে গ্রামবাসীকে রক্ষায় ১০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। যা আমি পরে বনবিভাগকে অবগত করলাম। কিন্তু এরপরেও কোনো সুফল আমরা পাচ্ছি না।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পটিয়া বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, ইউপি সদস্য হারুন তালুকদার, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মোমেনা আক্তার নয়ন, মনজু আকতার, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আবু ছিদ্দিক, রফিক ইসলাম, আব্দুল মন্নান ও হাসিনা বেগম। উপস্থিত ছিলেন বনবিভাগের কর্মকর্তা শহিদুর রহমান, মোঃকাইছার, হেডম্যান মহিউদ্দিন, মাহবুব, মোঃ জেবলসহ অনেকে।
প্রসঙ্গত, ‘বন্যপ্রাণী প্রকৃতির অংশ, আমরা প্রকৃতিকে বাঁচাবো আগামী প্রজন্ম’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠানে বন্যহাতি-মানুষ সংঘাত নিরসন বিষয়ক জনসচেতনতামূলক এই কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।