আন্তর্জাতিক লিড নিউজ

কে এই জেনারেল মিন অং লাইং?

নিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমারের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি জেনারেল মিন অং লাইং’র সাক্ষাৎকার পাওয়া খুব কঠিন। এরপরেও বিবিসির সংবাদদাতা জোনাহ ফিশার ২০১৫ সালে তার একটি বিরল সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন।

তিনি জানাচ্ছেন, সেই সাক্ষাৎকার চেয়ে প্রথম চিঠি পাঠানোর পর তার জবাব এসেছিলো এক মাস পর। তার পর গভীর রাতে নেপিডোর জনশূন্য রাস্তায়, কফি শপে, বা কার পার্কে এক রহস্যময় ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ, ইউএসবি স্টিক হস্তান্তর – এরকম বিচিত্র সব ঘটনার পর সেই সাক্ষাৎকার মিলেছিলো।

‘একেক সময় মনে হচ্ছিলো যেন আমি একজন মাদক বিক্রেতা, – লিখেছেন জোনাহ ফিশার। সেই সাক্ষাৎকারের জন্য তার সাথে জেনারেলের কোনো ইমেইল বিনিময় হয়নি, সেই রহস্যময় লোকটির ফোন নম্বর বা এমনকি তার পদবী কি – তাও কখনো তিনি জানতে পারেননি।

আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের লোক:

তার পরও মুখোমুখি সাক্ষাতে মিন অং লাইংকে একজন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের লোক বলেই মনে হয়েছিলো জোনাহ ফিশারের। ‘জনগণের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখার জন্য’ তখন তার একটি ফেসবুক পাতাও ছিলো – যার দেখাশোনা করতেন তার সহযোগীরা। তবে সেই সাক্ষাৎকারে তিনি হাসিমাখা মুখেই যে বার্তা দিয়েছিলেন – তা ছিলো স্পষ্ট এবং কঠোর।

মিয়ানমারের রাজনীতির ওপর সামরিক বাহিনীর শক্ত নিয়ন্ত্রণ খুব শিগগির কমানোর কোনো ইচ্ছে যে তার নেই – তা তিনি পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। মিয়ানমারে সক্রিয় বহু জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে যুদ্ধবিরতি বা শান্তি চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত জনগণকে অপেক্ষা করতে হবে, বলেছিলেন তিনি।

‘এটা পাঁচ বা ১০ বছরও লাগতে পারে – আমি ঠিক বলতে পারছি না’ – সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তিনি। তিনি কি প্রেসিডেন্ট হতে চান:

তিনি কি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হতে চান? প্রশ্ন করেছিলেন জোনাহ ফিশার। ‘যদি জনগণ আমাকে এই দায়িত্ব পালন করতে বলে, তখন আমি সিদ্ধান্ত নেবো’- জবাব দিয়েছিলেন জেনারেল মিন অং লাইং। মিন অং লাইংএর বয়স এখন ৬৪।

‘গড়পড়তা মানের ক্যাডেট’ থেকে সেনাপ্রধান

সৈনিক জীবনের শুরুতে একজন ক্যাডেট হিসেবে তিনি খুব চোখে পড়ার মত কেউ ছিলেন না। ইয়াঙ্গন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭২ থেকে ‘৭৪ সাল পর্যন্ত আইন পড়েছিলেন মিন অং লাইং।

‘তিনি ছিলেন স্বল্পভাষী এবং সাধারণত নিজেকে আড়ালে রাখতেই পছন্দ করতেন’- ২০১৬ সালে তার এক সহপাঠী বলেছিলেন বার্তা সংস্থা রয়টারকে। তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র – তখন মিয়ানমারে রাজনৈতিক তৎপরতা খুব ব্যাপক ছিলো। কিন্তু মিন অং লাইং এসব থেকে দূরে থাকতেন। অন্য ছাত্ররা যখন বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছে, তখন তিনি প্রতিবছর ডিফেন্স সার্ভিসেস একাডেমি নামে সামরিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেবার জন্য চেষ্টা করছিলেন।

তিন দফা চেষ্টার পর তিনি সফল হন ১৯৭৪ সালে। তার এক সহপাঠী রয়টার্সকে বলেছিলেন, ক্যাডেট হিসেবে তিনি ছিলেন গড়পড়তা ধরনের। ‘তার প্রমোশন হচ্ছিলো ধীর গতিতে – তবে নিয়মিতভাবে’ বলেন তিনি। তবে যখন অফিসার কোরের মাঝারি স্তর ছাড়িয়ে মিন অং লাইং আরো ওপরে উঠে গেলেন – তখন বেশ বিস্মিত হয়েছিলেন এই সহপাঠী।

সেই ফেসবুক পাতাটি এখন আর নেই: তিনি সামরিক বাহিনীর প্রধান হন ২০১১ সালে – ঠিক সেই সময়টায় যখন গণতন্ত্রের পথে মিয়ানমারের যাত্রা শুরু হয়েছিলো। ইয়াঙ্গনের কূটনীতিকদের উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার জানাচ্ছে, ২০১৬ সালে যখন অং সান সুচির দল প্রথমবার ক্ষমতায় আসে, তখন মিন অং লাইং একজন স্বল্পভাষী সৈনিক থেকে নিজেকে একজন রাজনীতিবিদ ও পরিচিত ব্যক্তিত্বে পরিণত করেন। তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, সম্মানিত অতিথিদের সাথে সাক্ষাৎ, বৌদ্ধ আশ্রমে সফর – ইত্যাদি ফলাও করে প্রচার হতো তার ফেসবুক পাতায়।

তার ফলোয়ারের সংখ্যা ছিলো কয়েক লক্ষ। কিন্তু ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরু হলে সেই পাতাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই অভিযানের ফলে সাত লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘের তদন্তকারীরা ওই অভিযানের সময় গণহত্যা, গণধর্ষণ, ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ঘটেছে বলে অভিযোগ আনেন। মিন অং লাইংসহ চারজন সামরিক নেতার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

কূটনীতিক ও পর্যবেক্ষকরা রয়টারকে বলেছেন যে জেনারেল মিন অং লাইং বিভিন্ন দেশে সংঘটিত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং লিবিয়া বা অন্য কিছু মধ্যপ্রাচ্যের দেশের মত পরিস্থিতি যেন মিয়ানমারে না হয়, তার প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি গুরুত্ব দিতেন।

মিয়ানমারের পার্লামেন্টে সেনাবাহিনীর ২৫ শতাংশ আসন এবং অং সান সু চির প্রেসিডেন্ট হবার ওপর সাংবিধানিক নিষেধাজ্ঞা – এগুলো পরিবর্তন করার কোন ইচ্ছা তার আছে – এমন কোন ইঙ্গিত কখনো দেননি মিন অং লাইং।

সূত্র: বিবিসি

Related Posts