নিজস্ব প্রতিবেদক |
হাটহাজারী মাদ্রাসায় হামলা, ভাঙচুর হয়েছে। আল্লমা শফীর উপর তিলে তিলে নির্যাতন করা হয়েছে। গৃহবন্দি করে নির্যাতন করে শাহাদাত বরণ করতে বাধ্য করা হয়েছে। খাবার, ওষুধ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। অ্যাম্বুল্যান্স বন্ধ ছিল। এটাই হত্যার মূল কারণ। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমির প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমদ শফীর শেষ তিনদিনের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে এসব অভিযোগ করেন আল্লামা শফীপন্থি দাবি করা তার অনুসারীরা।
বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে প্রয়াত শাহ আহমদ শফীর জীবনকর্ম, অবদান শীর্ষক আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় এসব অভিযোগ করেন মাওলানা আনাস মাদানীর অনুসারীরা।
শফীপন্থী আলেম-ওলামারা দাবি করেন, আহমদ শফীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এজন্য বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন তারা।
এসময় আরও বলা হয়, ২০১৩ সালের ১৩ মে ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সংঘটিত পুরো ঘটনার দায়ভার হেফাজতে ইসলামের সে সময়ের মহাসচিব ও বর্তমান আমির হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরীর ওপর চাপিয়েছেন সংগঠনটির সদ্য সাবেক নেতারা।
অভিযোগ করেছেন, তৎকালীন আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে না জানিয়ে হেফাজতের নেতাকর্মীদের রাতভর শাপলা চত্বরে রেখে দেন বাবুনগরী। তার ধারণা ছিল, সারারাত শাপলা চত্বরে অবস্থান নিতে পারলে যে পরিস্থিতি তৈরি হবে তাতে সেনাবাহিনী নামতে বাধ্য হবে।
সভায় হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা সলিমুল্লাহ বলেন, শাপলা চত্ত্বরের ঘটনার দায়ভার জুনায়েদ বাবুনগরীকে নিতে হবে। সেই কর্মসূচীর মিটিংয়ে অনেকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে বললেও বাবুনগরী সারারাত সেখানে অবস্থান নেওয়ার কথা বলেন। তিনি আল্লামা শফীকে জানান, সারাদেশ থেকে ছেলেরা আসবে। সবাই সারারাত থাকলে সেনাবাহিনী আসবে। তার আগে আল্লামা শফী সিদ্ধান্ত নেন ছয়টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলবে। কিন্তু তিনি হুজুরকে না জানিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। পরে শাপলা চত্ত্বরে নিহতদের পরিবারের জন্য তহবিল সংগ্রহের কথা বললেও তিনি তা করেননি। বাবুনগরীকে জেল থেকে ছাড়াতে সেদিন আমরা নগরীর দেবপাহাড়ে একটি ভবনে তৎকালীন পরিবেশমন্ত্রী ও বর্তমান তথ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছিলাম। আর এখন বাবুনগরী আমাদের দালাল বলেন।
আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেফাজত ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও ইসলামী ঐক্য জোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ।
তিনি অভিযোগ করেন, আহম্মদ শফীর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, এখন থেকে আমরা সামনে যাব, পিছনের দিকে যাব না। যারা ষড়যন্ত্র করেছে, মিথ্যাচার করেছে, অর্থের যোগান দিয়েছে তাড়াই হেফাজত ইসলামের মূল শত্রু। এছাড়া আন্দোলনকে যেমন সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে, তেমনি যেকোনো ত্যাগ স্বীকারের জন্য আলেম-ওলামাদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি। কারা ঢাকায়, ফটিকছড়ি কিংবা হাটহাজারী বসে ষড়যন্ত্র করেছেন, সময় এলে জাতির কাছে সব প্রকাশ করারও হুমকি দেন তিনি।
হেফাজতের সাবেক প্রচার সম্পাদক মাওলানা আনাস মাদানীর ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাইনুদ্দীন রুহী অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত, তাদের বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে।জালেমরা জুলুম-অত্যাচার চালিয়েছে। আহম্মদ শফীর ওপর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হুজুরের সাথে বেয়াদবি করেছে, নির্মমভাবে আহত করা হয়েছে।
এসময় হেফাজতে ইসলামের বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরীকে উদ্দেশ করে মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, আপনি অনেক বহুরূপী। আপনার সাথে আমার একসময় ভাল যোগাযোগ ছিল। আপনি হেফাজতের সাথে প্রতারণা করেছেন। আপনি একজন বড় প্রতারক। কক্ষের ভেতর একরকম, বাইরে অন্যরকম। সরকারের কার সাথে কোথায় গেছেন, পায়ে ধরেছেন জানা আছে।
দেশের অনেক নিষিদ্ধ-বিতর্কিত সংগঠনের সাথে বাবুনগরী হাত মিলিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সময় মত মুখ খুললে টিকে থাকতে পারবেন না। ১৫১ জনের কমিটির মধ্যে আপনার আত্মীয় আছে ২২ জন। স্বজনপ্রীতি করেছেন। মেয়ের জামাই থেকে শুরু করে মামাত ভাই, খালাত ভাইকে দিয়ে কমিটি করেছেন। কার কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছেন, কোন জায়গায় গিয়ে টাকা নিয়েছেন- সব আমাদের জানা আছে। আমরা যদি মুখ খুলি মানুষের সামনে দাঁড়াতে পারবেন না।
অনুষ্ঠান থেকে হেফাজতের ইসলামের বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে পুনরায় সবাইকে নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করার দাবি জানানো হয়।