বিবিসি বাংলা:
যুক্তরাজ্যে পাওয়া করোনাভাইরাসের স্ট্রেইনের সাথে বাংলাদেশে শনাক্ত নতুন স্ট্রেইনের সাদৃশ্য আছে। কিন্তু বাংলাদেশে এর বিস্তার ঘটেনি বলে কর্মকর্তারা বলেছেন।
বাংলাদেশে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বলেছে, দেশে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন একটি স্ট্রেইন বা ধরন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
দেশে এই নতুন স্ট্রেইন বা ধরন শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ বা বিসিএসআইআর এর বিজ্ঞানীরা। তারা বলেছেন, দেশটিতে করোনাভাইরাসের নতুন একটি ধরন শনাক্ত হয়েছে, যার সাথে যুক্তরাজ্যে পাওয়া নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের সাদৃশ্য রয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলেছে, সারাবিশ্বেই করোনাভাইরাস বার বার তার ধরন পাল্টাচ্ছে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সজাগ রয়েছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি শনাক্ত হয়েছে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে।
বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড: সেলিম খান জানিয়েছেন, ১৭টি নতুন জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষা করে তারা পাঁচটিতেই করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন পেয়েছেন।
ড: খান বলেছেন, যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া নতুন স্ট্রেইনে যে বৈশিষ্ট আছে, তার সাথে বাংলাদেশে পাওয়া ভাইরাসের পুরোপুরি মিল না থাকলেও অনেকটা মিল রয়েছে। তবে এনিয়ে তাদের আরও পরীক্ষা চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
“এই মিউটেশনটা নতুন ধরনের মিউটেশন। এটা আমাদের আগে মাত্র দুইটা দেশে- পেরু এবং রাশিয়াতে ঘটেছে। রাশিয়ায় একটা নমুনায় এবং পেরুতে একটা নমুনায় তারা এই মিউটেশন পেয়েছে। আর আমরা পেয়েছি পাঁচটি নমুনায়। আমরা নমুনা সংগ্রহ করেছিলাম অক্টোবরে। আর শনাক্ত করতে পেরেছি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে।”
যুক্তরাজ্যে পাওয়া নতুন ধরনের করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের মাঝে বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া নতুন স্ট্রেইনের বিষয় এখন আলোচনা হচ্ছে।
বাংলাদেশ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর হোসেন বলেছেন, দেশে নতুন স্ট্রেইন নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই বলে তারা মনে করেন।
তিনি আরও বলেছেন, “সারাবিশ্বেই কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রোটিনে নানা রকম মিউটেশন হচ্ছে। বাংলাদেশেও পরিবর্তন হচ্ছে। বলা হচ্ছে পরিবর্তনটির সাথে যুক্তরাজ্যের পরিবর্তনের সাদৃশ্য আছে। তার মানে হলো যুক্তরাজ্যের মতো হুবহু একইরকম নয়। কিন্তু আমরা গত এক মাসে এরকম কোন লক্ষণ দেখিনি যে এখানে ভাইরাসের তীব্রতা বেড়ে গেছে।”
“এগুলো সবই আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। সারাবিশ্বের পরিবর্তন যেমন পর্যবেক্ষণ করছি, তেমনি বাংলাদেশে ভাইরাসের পরিবর্তনও আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। তেমন উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কোন কিছু এখনও ঘটে নাই,” মন্তব্য করেছেন মি: আলমগীর।
নতুন বৈশিষ্ট্যের ভাইরাসের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন কতটা কাজ করবে, তা নিয়েও নানা আলোচনা রয়েছে।
নতুন বৈশিষ্ট্যের ভাইরাসের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন কতটা কাজ করবে, তা নিয়েও নানা আলোচনা রয়েছে। তবে বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া নতুন স্ট্রেইনের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সেভাবে নজর দেয়নি বলে মনে হয়েছে। নতুন স্ট্রেইনের ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগে এখনও কোন আলোচনা বা পর্যালোচনা করা হয়নি। এমনকি এর কোন প্রভাব আসলে পড়েছে কিনা-তাও খতিয়ে দেখা হয়নি।
তবে যুক্তরাজ্যে পাওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরন যাতে বাংলাদেশে না আসে, সেজন্য সেই দেশ থেকে যারা আসছেন, তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখাসহ সতর্কতামূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার কথা সরকার বলছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার মো: খুরশিদ আলম বলেছেন, কররোনাভাইরাসের নতুন নতুন স্ট্রেইন যা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে চিকিৎসার প্রটোকলে কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। তিনি আরও বলেছেন, দেশে শনাক্ত হওয়া নতুন স্ট্রেইনের প্রভাব কী পড়ছে-তা এখন খতিয়ে দেখে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তারা আলোচনা করবেন।
“এটা এখন খুঁজে বের করতে হবে। এটা খুঁজে বের করার জন্য সেরকম পদক্ষেপ আমরা এখনও নিতে পারিনি। যদি নতুন কিছু শনাক্ত হয়, তবে তা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আলোচনা করা হবে।” বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, দেশে গবেষণা কম হওয়ার কারণে পরিস্থিতি অনুধাবন করতে সমস্যা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বলেছেন, “বাংলাদেশে তো গবেষণার অনেক ঘাটতি আছে। শীত কালে ছড়াবে, এটা নিয়ে আমরা আগেও বলেছি। এর মাঝে নতুন স্ট্রেইন মানেই তো আগে শরীরে যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হতো, সেটা কাজ নাও করতে পারে।”
এদিকে বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের ড: সেলিম খান বলেছেন, যুক্তরাজ্য করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন শনাক্ত করার কয়েক মাস পর এসে তাদের দেশে এর সংক্রমণের বিস্তার ঘটার কথা বলছে। কিন্তু বাংলাদেশে নতুন একটি স্ট্রেইন শনাক্ত হওয়ার দেড় মাসেরও বেশি সময় পর তার বিস্তার ঘটার কোন তথ্য তারা এখনও পাননি। তিনি উল্লেখ করেছেন, তারা এনিয়ে আরও পরীক্ষা করছেন।