ঢাকা অফিস
মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমানসহ বঙ্গবন্ধু হত্যা ও হতাকারীদের সহযোগীদের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় দেয়া রাষ্ট্রীয় খেতাব প্রত্যাহারের বিষয়টি খতিয়ে দেখা এবং আরো প্রমাণাদি সংগ্রহের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এর আগে গত ২ ফেরুয়ারি জিয়াউর রহমান এবং বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত কয়েক জন মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ক্ষমতা দখলকারী খন্দকার মোশতাক আহমেদসহ বেশ কয়েকজনের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সুপারিশ করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)।
গতকাল বুধবার মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপিকে প্রধান এবং শাহাজান খান এমপি ও সাবেক সচিব রশিদুল আলমকে সদস্য করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঐ প্রজ্ঞাপনে কমিটিকে যেসব অভিযোগের অধিকতর প্রমাণপত্র সংগ্রহের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে এসব অভিযোগে খেতাব বাতিল করা যায় কি না, সে বিষয়ে কমিটি সুপারিশ করবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সম্প্রতি জামুকার সভায় আলোচনার এক পর্যায়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের আত্মস্বীকৃত খুনিদের খেতাব বাতিলের প্রসঙ্গ আলোচিত হয়।
জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তার মধ্যে আছে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল, সংবিধানের মূল নীতি বাতিল, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের মদদ দেওয়া, খুনিদের বিভিন্ন সময় দেওয়া বক্তব্যে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততার উল্লেখ থাকা খুনিদের দেশ ত্যাগে সহায়তা করা, নিজে মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে সরকার গঠন করায় তার খেতাব বাতিলযোগ্য।
জামুকার ঐ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক, মাহবুব আলী চাষিসহ বেশকয়েক জনের কর্মকাণ্ড মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া একই ধরনের আরো যেসব মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন তাদের পূর্ণ তথ্যসহ প্রমাণাদি উত্থাপনের জন্য কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গত ২ ফেরুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, জিয়াউর রহমানসহ যে পাঁচ জনের রাষ্ট্রীয় খেতাব জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) কর্তৃক বাতিলের সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার দালিলিক প্রমাণ রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ‘স্মরণীয় বরণীয়’ ব্যক্তিদের যে রাষ্ট্রীয় তালিকা রয়েছে, সেখান থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে খোন্দকার মোশতাক আহমেদের নাম যিনি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করলেও জিয়াউর রহমানের মৃত্যু হয় কয়েক জন সেনা কর্মচারির বুলেটে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত এবং দণ্ডপ্রাপ্তদেরও খেতাব বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধের বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদক হিসেবে ৬৮ জনকে বীর উত্তম খেতাব দেওয়া হয়েছিল এবং এ তালিকায় তিন নম্বরে ছিল জিয়াউর রহমানের নাম।
তালিকায় যাদের নাম ছিলো তাদের মধ্যে আব্দুল কাদের সিদ্দিকী ছাড়া বাকী সবাই সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য ছিলেন। ১৯৭২ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত গেজেটের মাধ্যমে ঐ খেতাব প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে তখন তা কার্যকর করা হয়েছেল যা সামরিক গেজেটে প্রকাশিত। এখন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল তা বাতিলের সুপারিশ করল। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এটি কার্যকর করবে