ঢাকা অফিস
হাটহাজারীতে শিশু শিক্ষার্থীকে পেটানোর ঘটনায় মাদ্রাসা শিক্ষক মোহাম্মদ ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে আইনানুগ কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।
আগামী রোববারের মধ্যে তা চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, হাটহাজারী থানার ওসিকে জানাতে বলা হয়েছে।
সেই সাথে নির্যাতনের শিকার শিশুর পরিবারকে কোনো পক্ষ কোনো চাপ সৃষ্টি করেছিল কি না, নির্যাতিত শিশুটিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে কি না, শিশুটির পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে কি না- সেসব তথ্যও জানাতে বলা হয়েছে তাদের।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বিষয়টি নজরে আনার পর বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের বলেন, “আইনানুগ ব্যবস্থার বিষয়টি ছাড়াও নির্যাতনকারী ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা, ওই মাদ্রাসা থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে কিনা এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে এসেছে- ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীর মা-বাবা নির্যাতনকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন, ফলে হাটহাজারী থানার শিক্ষক ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলা কোনো পক্ষের চাপের কারণে প্রত্যাহার করা হয়েছে কিনা- ইত্যাদি বিষয়গুলোসহ একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।”
এছাড়া নির্যাতনকারী ওই শিক্ষককে বরখাস্ত করার দায়িত্ব জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কি না, তাও আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বাশার বলেন, “এ ধরনের ঘটানা প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা মাদ্রসার শিক্ষকদের কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এ ঘটনাগুলো বারবার সামনে এলেও পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, বা হয়েছিল এগুলা কিন্তু জানা যাচ্ছে না। ফলে এই ঘটনাগুলো বারবার ঘটেই চলেছে।
“এটি তো একটি নীতি-নৈতিকতার বিষয় যে, শিশুর প্রতি কী ধরনের মানবিক আচরণ করতে হবে, কিন্তু কোনো কিছুই তাদের নিবৃত করতে পারছে না।”
গত মঙ্গলবার বিকালে হাটহাজারী পৌর এলাকার আল মারকাযুল কোরআন ইসলামিক অ্যাকাডেমির আবাসিক শিক্ষার্থী শিশুসন্তানকে দেখতে যান তার মা। পরে চলে যাওয়ার সময় শিশুটি মায়ের পেছন পেছন ছুট দেয়। তা দেখে শিক্ষক ইয়াহিয়া তাকে ঘাড় ধরে মাদ্রাসার একটি কক্ষে নিয়ে বেদম মারধর করেন।
শিশুটিকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর গভীর রাতে সেখানে অভিযান চালিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমীন আট বছরের শিশুটিকে উদ্ধার এবং শিক্ষক ইয়াহিয়াকে ধরে আনেন। কিন্তু শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে তখন কোনো অভিযোগ না করায় শিক্ষককে বুধবার সকালে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আদালতের আদেশের পর এ ঘটনার সর্বশেষ অবস্থা কী, তা জানতে চাইলে হাটহাজারী থানারে ওসি রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বুধবার রাতে এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। শিশুটির বাবা বাদী হয়ে নির্যাতনের মামলা করেছেন।”
বৃহস্পতিবার সকালে এ মামলায় শিক্ষক মোহাম্মদ ইয়াহিয়াকে আদালতে চালান করা হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।