সিনিউজ ডেস্ক
ঢাকায় এসেছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে যোগ দিতে তিনি ঢাকা আসপন।
শ্রীলঙ্কান এয়ারের একটি ফ্লাইটে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী করমর্দন না করে দূরত্ব বজায় রেখে তারা শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে রাজাপাকসেকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাকে স্বাগত জানানো হয় ২১ বার তোপধ্বনি দিয়ে। মাহিন্দা রাজপাকসেকে নিয়ে শেখ হাসিনা অভ্যর্থনা মঞ্চে পৌঁছালে তিন বাহিনীর সুসজ্জিত একটি দল এ সময় গার্ড অব অনার দেয়।
গার্ড পরিদর্শন শেষে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে লাইন অব প্রেজেন্টেশনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস এবং তিন বাহিনীর প্রধান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেশী দেশের এই সরকারপ্রধানের আগমন উপলক্ষে বিমানবন্দর এলাকা বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। টার্মিনালের উপরে এবং সামনে ছিল বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার পতাকার সজ্জা। ভিভিআইপি টার্মিনালের দুই পাশে দুই সরকার প্রধানের দুটি বড় ছবিও স্থাপন করা হয়।
বিমানবন্দর থেকেই শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী সরাসরি চলে যান সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে, সেখানে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে একটি গাছের চারাও রোপণ করবেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বেলা ৩টায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী। ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও থাকবেন।
সন্ধ্যায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের গ্র্যান্ড বল রুমে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং নৈশ ভোজে যোগ দেবেন মাহিন্দা রাজাপাকসে।
সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকালে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বৈঠক হবে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন আগেই জানিয়েছেন, বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল, শিক্ষা, তথ্য প্রযুক্তির মত ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা গুরুত্ব পাবে। দুই সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে।
শনিবার বিকালে বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যায় তিনি কলম্বোর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
শ্রীলঙ্কার শিক্ষামন্ত্রী, আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রতিমন্ত্রী, তাঁত ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী, গ্রামীণ গৃহায়ন ও গৃহ নির্মাণ সামগ্রী শিল্প প্রতিমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ ২৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এই সফরে প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসের সঙ্গে রয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশের দশ দিনব্যাপী আয়োজনের সূচনা হয়েছে গত ১৭ মার্চ, জাতির জনকের জন্মদিনে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকীতে তার সমাপ্তি হবে।
প্রতিবেশী পাঁচ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরাও বাংলাদেশের এ উদযাপানের সঙ্গী হচ্ছেন। আয়োজনের প্রথম দিন বুধবার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে যোগ দেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ।
এছাড়া নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী ২২ মার্চ, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ২৪ মার্চ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ঢাকায় আসবেন।