সিনিউজ ডেস্ক
ভারত থেকে টিকার পরবর্তী চালান পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার রপ্তানি সাময়িকভাবে স্থগিত করার পর এ অনিশ্চয়তায় পড়েছে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, টিকার পরের চালান কবে বাংলাদেশ হাতে পাবে, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন তিনি। সময়মত টিকা না পেলে চলমান টিকাদান কর্মসূচিতেও এর প্রভাব পড়বে।
তিনি বলেন, “আমরা নতুন করে কোনো শিডিউল পাইনি। আমরা জিজ্ঞেস করেছি বেক্সিমকোর মাধ্যমে। তারা জানিয়েছেন, (পরের চালানের বিষয়ে) তারা এখনও কোনো খবর পাননি। তারা সেরামের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তারা এখনও শিডিউল পায়নি। এটা হলো লেটেস্ট খবর।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়টি তুলে ধরে জোর দিয়ে বলেছেন, যেন আমাদের কেনা টিকা যেটি আছে, তা তাড়াতাড়ি দেওয়া হয়। উনারা বলেছেন যে এটাও দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু আমরা এখনও তারিখ পাইনি।”
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে গত নভেম্বরের চুক্তি করে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুযায়ী ভারত থেকে ওই টিকা তা সরবরাহের দায়িত্বে আছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। তারা বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড টিকার ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’।
ওই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। সে অনুযায়ী জানুয়ারিতে ৫০ লাখ ডোজ দেশে এলেও বিপুল চাহিদা আর বিশ্বজুড়ে টিকার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে ফেব্রুয়ারির চালানে বাংলাদেশ ২০ লাখ ডোজ হাতে পায়।
এর বাইরে ভারত সরকার দুই দফায় উপহার হিসেবে দিয়েছে মোট ৩২ লাখ ডোজ, সেগুলোও সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা।
টিকার প্রথম চালান হাতে পাওয়ার পর গত ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে গণ টিকাদান শুরু হয়। আগামী ৮ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু করার কথা।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশ হাতে পেয়েছে। আর রোববার পর্যন্ত ৫২ লাখ ৬৩ হাজার ২৪৮ জনকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। টিকার জন্য এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন মোট ৬৪ লাখ ৪০ হাজার ৭২৫ জন।
এখন হাতে থাকা টিকা দ্বিতীয় ডোজের জন্য সংরক্ষণ করা হলে নতুনদের টিকাদান বন্ধ রাখতে হবে। আবার নতুনদের টিকা দেওয়া চালিয়ে গেলে এবং পরের চালান সময়মত না পেলে দ্বিতীয় ডোজের টিকা সবাইকে সময়মত দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসির লাইন ডিরেক্টর এবং মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যখন পরিকল্পনা করেছি তখন ধরেই নিয়েছি টিকা চলে আসবে। কিন্তু মার্চে তো টিকা এল না। সেরাম ইনস্টিটিউট না দিতে না পারলে বড় প্রবলেমে পড়ে যাব না?”
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিবিসির খবরে বলা হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেহেতু বাড়ছে, সামনের দিনগুলোতে ভারতের টিকার চাহিদাও বাড়বে। সে কারণেই আপাতত টিকা রপ্তানির অনুমতি সরকার দিচ্ছে না।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদক সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইনডিয়া এ পর্যন্ত ৭৬টি দেশে মোট ৬ কোটি ৫০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৭৭ লাখ ডোজ পেয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নেতৃত্বাধীন কোভ্যাক্স। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ মার্চের পর বাণিজ্যিক কোনো চালান বিদেশে যায়নি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, “আমাদের চুক্তি অনুযায়ী আরও ২ কোটি ৩০ লাখ ডোজ এখনও পাইনি। মার্চেও আসার কথা ছিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো শিডিউল পাইনি। যে টিকার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি আছে সেগুলো তো বন্ধ করা উচিত হবে না। আমরা এখনও আশা করছি যে টিকা আমরা পাব, যেহেতু আমরা চুক্তি অনুযায়ী টাকা-পয়সা দিয়ে দিয়েছি।”
সময়মত টিকা না পেলে জাতীয়ভাবে টিকাদান কর্মসূচি যে বাধাগ্রস্ত হবে, সে কথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও বলছেন।
“আমাদের যে চুক্তি আছে সে অনুযায়ী টিকা আসবে ধরে নিয়েই আমরা পরিকল্পনা করি। যদি টিকার সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে এখন টিকা দেওয়ার যে প্রবণতা আছে কিছুটা প্রভাব পড়বে।”