আন্তর্জাতিক ওপার বাংলা লিড নিউজ

কাল ভোট গণনাঃ কে যাচ্ছেন মসনদে,ফ্যাক্টর হতে পারে সংযুক্ত মোর্চা

 

সিনিউজ ডেস্ক

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯২টি আসনের ভোট গণনা কাল রোববার সকালেই শুরু হবে। গত ২৭ মার্চ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত এই রাজ্যে ৮ দফায় বিধানসভার ২৯২টি আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার জন্য রাজ্যের ২৩টি জেলায় ১০৮টি গণনাকেন্দ্রে ভোট গণনা করা হবে।

ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতোই পশ্চিমবঙ্গজুড়ে চলছে করোনার ভয়াবহতা। গতকাল সন্ধ্যা থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই রাজ্যে আংশিক লকডাউন কার্যকর করেছে। এর মধ্যেই কালকের ভোটের ফলাফল নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মুখিয়ে রয়েছে।

বুথফেরত সমীক্ষায় অধিকাংশ সংস্থা ইঙ্গিত দিয়েছে, এবারের পাল্লা ভারী তৃণমূলের দিকেই। মমতাই হতে পারেন তৃতীয়বারের জন্য এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলছেন, ক্ষমতায় আসছেন তাঁরাই। দিলীপ ঘোষ জোর দিয়ে বলেছেন, বিজেপি ২০০ আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসবে। বিজেপির প্রতিশ্রুতিমতো তাঁরা এই রাজ্যকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করবেন।

২০১৬ সালের নির্বাচনে ভোট গণনাকেন্দ্র ছিল ৯০টি। এবার করোনার কারণে বাড়ানো হয়েছে ভোট গণনাকেন্দ্র। এসব কেন্দ্রে প্রার্থী বা তাঁদের এজেন্টের সামনে ভোট গণনা শুরু হবে। ইতিমধ্যে ভোট গণনাকেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। নিয়োগ করা হয়েছে ২৫৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী।

নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দিয়েছে, কোনো প্রার্থী বা তাঁদের পোলিং এজেন্টসহ যেসব ভোটকর্মী ভোট গণনায় দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের সবাইকে করোনার টিকার দুটি ডোজ অথবা আরটি–পিসিআর বা অ্যান্টিজেন নমুনা পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে আসতে হবে।
গতকাল দুপুরে দলের অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের সঙ্গে এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘খাতা–কলম নিয়ে ঢুকতে হবে ভোট গণনাকেন্দ্রে। একবার ভোট গণনাকেন্দ্রে ঢুকে গেলে আর ছাড়া যাবে না বসার টেবিল–চেয়ার। ওখানেই বসে সবকিছুর ওপর নজর রাখতে হবে। কেউ কিছু দিলে খাবেন না।’

মমতা আরও বলেন, ‘আমাদের জয় নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা জিতছি। ক্ষমতায় আসছি। সেই ইঙ্গিত সব বুথফেরত সমীক্ষা বলে দিয়েছে। তাই চিন্তা করবেন না, জয় আমাদের নিশ্চিত। তাই ওদের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারে কান দেবেন না। ওদের পাতা ফাঁদে পা দেবেন না।’

কারা নবান্নের (পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সচিবালয় ও মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়) দখল নিচ্ছেন তা দুপুরের পরই অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ বুথফেরত জরিপে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি উভয় পক্ষই দাবি করছে নির্বাচন জরিপের ফল যাই হোক না কেন তারাই পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসছে।

তবে ঝুলন্ত বিধানসভার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে শেষ পর্যন্ত কিং মেকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে সিপিএম, জাতীয় কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট নিয়ে গঠিত সংযুক্ত মোর্চা। নির্বাচন-পরবর্তী জরিপগুলোর বেশ কয়েকটিতে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। যদিও তাদের আসন সংখ্যা অনেক কমছে। অন্যদিকে বিজেপিও ম্যাজিক ফিগার ১৪৭ আসনের কাছাকাছি বা বেশি পেতে পারে বলে কিছু জরিপের ফল বলছে। আর সংযুক্ত মোর্চা সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ আসন পেতে পারে বলে জরিপগুলো বলছে। আর এটা নিয়েই আশায় বুক বাঁধছে সিপিএম, জাতীয় কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট নিয়ে গঠিত সংযুক্ত মোর্চা। তাদের দাবি, বিজেপি বা তৃণমূল কংগ্রেস কেউই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। সেক্ষেত্রে সরকার গঠনে তাদের সমর্থন জরুরি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মমতা ব্যানার্জির তৃণমূলকে সরাতে বিজেপির নিরঙ্কুশ জয়ের বিকল্প নেই। কারণ ঝুলন্ত বিধানসভা হলে সংযুক্ত মোর্চার সমর্থন নিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসবে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপিকে এই মোর্চার সমর্থন করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ২৯৪ আসনের মধ্যে ২১১ আসন পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে। সিপিএম, জাতীয় কংগ্রেস জোট পায় ৭৬ আসন আর বিজেপি তিনটি। তবে সেবার নির্বাচন-পরবর্তী কোনো সমীক্ষাতেই তৃণমূল কংগ্রেসকে ১৭০ আসনের বেশি দেওয়া হয়নি।

২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সামনের সারিতে চলে আসে বিজেপি। ৪২ লোকসভা আসনের মধ্যে তারা পায় ১৮ আসন। বিধানসভা আসনভিত্তিক বিশ্লেষণ বলছে, লোকসভার ফল অনুযায়ী তৃণমূল ১৬৪, বিজেপি ১২১ এবং সিপিএম, জাতীয় কংগ্রেস ৯ আসনে এগিয়েছিল।

পশ্চিমবঙ্গে এবার দুই আসনে প্রার্থীর মৃত্যুতে ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়েছে। ২৯২ আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ম্যাজিক ফিগার ১৪৭ আসন। এই আসন যে দল পাবে পশ্চিমবঙ্গ আগামী পাঁচ বছর তাদের দখলে থাকবে। আট দফার নির্বাচনে সাড়ে ৫ কোটির কাছাকাছি ভোট পড়েছে। কোনো দলকে সরকারে আসতে হলে আড়াই কোটির কাছাকাছি ভোট পেতে হবে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে অন্তত ১৫ লাখ ভোট বেশি পেতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহল বলছে, এবার লড়াই হাড্ডাহাড্ডি হবে। জয়-পরাজয়ের পার্থক্য গড়ে দেবে কয়েক লাখ ভোট। জয়ী এবং দ্বিতীয় হওয়া দলের আসনের ব্যবধান খুবই কম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাত্ তৃণমূল বা বিজেপি যে দলই পরাজিত হোক না কেন, তারা প্রবল বিরোধী হিসেবেই বিধানসভায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বিজেপি জিতলেও তাদের আসন সংখ্যা থাকতে পারে ১৫৫টির মতো। পক্ষান্তরে কোনো দলই যদি একক গরিষ্ঠতা না পায়, তাহলে ফলাফল পরবর্তী সরকার গঠনে দৌড়ঝাঁপ, তত্পরতা চলবে।

ভারতের লোকসভায় কিংবা বিভিন্ন রাজ্যে বৃহত্তম দলের একক গরিষ্ঠতা না থাকায় সরকার গড়তে জোট গঠনের প্রক্রিয়া হয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তা বিরল। শেষবার পশ্চিমবঙ্গে এরকম হয়েছিল ১৯৭১ সালে। তখন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলছিল। পরবর্তী ৫০ বছরে ১০টি সরকার গঠিত হয়েছে। প্রতিবারই ক্ষমতায় আসা দল বা জোট দুই-তৃতীয়াংশ বা তার কাছাকাছি আসনে জয়লাভ করেছে। এবার কী হবে, তা জানতে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন পশ্চিমবঙ্গের জনগণ।

 

Related Posts