সিনিউজ ডেস্ক
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জড়ো হয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। ওই দিন রাজধানীজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা হয়। ওই সহিংসতার ঘটনায় ৫৩টি মামলা হলেও ৮ বছর পরও একটি মামলারও চার্জশিট হয়নি। বরং ৮ বছর পর এখন ওই সময়ের মামলায় হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত অর্ধশত শীর্ষ নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। অনেক নেতা এখন ওই মামলায় পুলিশের রিমান্ডে আছেন।
এতদিনেও কেন একটি মামলারও চার্জশিট দেওয়া যায়নি? জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মাহবুব আলম ইত্তেফাককে বলেন, ‘অনেকগুলো মামলায় তদন্তকাজ গুছিয়ে এনেছি। হেফাজতের অনেক নেতা এখন ওই সময়ের মামলায় রিমান্ডে আছেন। সবকিছু মিলিয়ে চার্জশিট দিতে একটু সময় লাগবে।’
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে হেফাজত ইসলাম। ওই দিন মতিঝিল ও আশপাশের এলাকায় পুলিশের সঙ্গে হেফাজতের নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘাতের ঘটনায় মোট ৫৩টি মামলা দায়ের হয়। ওই মামলাগুলোর এখনো তদন্ত চলছে। হেফাজতের বিরুদ্ধে মোট ৬৫টি মামলা তদন্তাধীন আছে। এ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের ৩০ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। সর্বশেষ গত ২৬ মার্চ ও পরবর্তী সময়ে যে নাশকতা হয়েছে সেই সব ঘটনায় আরও ১২টি মামলা হয়েছে। ২০১৩ সালের মামলার সঙ্গে বর্তমান সময়ের মামলায়ও পুলিশ হেফাজত নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের অর্থের যোগানদাতা হিসেবে ৩১৩ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার বলেন, হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর ছেলের বিয়েতেই সাবেক আমির আল্লামা শফীকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়। ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে মামুনুল হক, জুনায়েদ আল হাবিবসহ কয়েকজন নেতার বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে আল্লামা শফীকে সরিয়ে বাবুনগরীকে আমির করার পরিকল্পনা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মাহবুব আলম জানিয়েছেন, তাবলীগ জামাতকে দুই ভাগ করার নেপথ্যেও হেফাজত নেতাদের হাত ছিল। পাশাপাশি রমজানকে সামনে রেখে দেশজুড়ে হেফাজতের বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল বলেও জানান তিনি। ডিবির এই যুগ্ম কমিশনার বলেন, রমজান মাসে বদরের যুদ্ধ হয়েছিল। আরেকটি বদর যুদ্ধের ডাক দিয়েছিল হেফাজত। ২৬ মার্চে শুরু হওয়া সহিংসতা রমজান পর্যন্ত টেনে আনার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এসব তথ্য গ্রেফতারকৃত নেতারা স্বীকার করেছেন।
২০১৩ সালের ৫ মে ও গত ২৬ মার্চের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় এখন পর্যন্ত ৩০ জনেরও বেশি হেফাজতের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ পেয়েছে সহিংসতার মূল কারণ। এসব তথ্য তুলে ধরে মাহবুবুল আলম জানান, চলতি রমজানেই দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি তৈরির নীলনকশায় মেতেছিল হেফাজতের নেতারা।