চট্টগ্রাম

আনোয়ারায় যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি বড় দূর্ঘটনার আশংকা

রুপন দত্ত – আনোয়ারা প্রতিনিধি

সরকারি আইন ও নীতিমালার তোয়াক্কা না করে আনোয়ারা উপজেলার মোড়ে মোড়ে বিক্রি হচ্ছে পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের সিলিন্ডার। নীতিমালা উপেক্ষা করে উপজেলার যত্রতত্র এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের ব্যবসা এখন রমরমা। উপজেলার প্রায় প্রতিটি সড়ক এবং অলিগলির প্রতিটি মোড়ে এই ব্যবসা জমে উঠেছে। উপজেলা জুড়ে অবৈধ এ ব্যবসার কারণে প্রকৃত লাইসেন্সধারী ডিলাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অপরদিকে গ্রাহকরাও হচ্ছেন প্রতারিত।

এ সব অনিয়ম দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা বিস্ফোরক পরিদপ্তর অজ্ঞাত কারণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এসব সিলিন্ডার বিক্রির ফলে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সাধারণ মানুষ। ওষুধের দোকান, মুদি দোকান ও কাপড়ের দোকানেও চলছে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, যেখানে সেখানে দেদারছে চলছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি। শতাধিক দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হলেও এলপি গ্যাস ব্যবসার জন্য লাইসেন্স রয়েছে মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন ব্যবসায়ীর। অনুমোদনবিহীন এসব দোকানগুলোতে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হওয়ায় বিপাকে সাধারণ মানুষ। সরকারি বিধি মোতাবেক গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির জন্য কমপক্ষে পাকা মেঝেসহ আধা পাকা ঘর, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপক সক্ষমতা-সংক্রান্ত লাইসেন্সসহ অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার এবং মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। একজন ব্যবসায়ী এসব শর্ত পূরণ করলেই কেবল এলপি গ্যাস বিক্রির নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

লাইসেন্স ছাড়া কোন দোকানে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি করা যাবে না। ২০০৩ সালের দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি যদি লাইসেন্স না নিয়ে বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবসা করে তবে তার তিন বছরের কারাদণ্ড ও অতিরিক্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে চায়ের দোকানগুলোতে বেশিরভাগ সিলিন্ডার গুলো রাখা হয়েছে একেবারেই চুলার পাশে, যেকোনো সময় বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটার আশংকা আছে। তাছাড়া বেশ কয়েকটি দোকানে লক্ষ করা গেছে গ্যাসের সিলিন্ডারের পাশে বসেই ধুমপান করার দৃশ্য। সিলিন্ডারের পাশেই ম্যাচ ঠুকিয়ে জালানো হয় সিগারেট, ম্যাচের কাঠিটা আগুনসহ ফেলা হয় সিলিন্ডারের পাশেই। গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির ক্ষেত্রে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি দেয়ার বিধান থাকলেও কখনো কোন অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়নি এ উপজেলায়। নজরদারি না থাকার কারণে যত্রতত্র চলছে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি। ফলে সাধারণ মানুষ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডার অনেকটা বোমার মতো, গ্যাস বিক্রি করতে হলে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স, বিস্ফোরক লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা থাকতে হবে, তা না হলে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে পারবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানদার জানান, বিস্ফোরক লাইসেন্স নিতে অনেক টাকা খরচ হয়, কিন্তু অবৈধ ব্যবসায়ীদের কারণে বৈধ ব্যবসায়ীদের বিক্রি কমে গেছে। গ্যাসের ব্যবহার অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এখন চায়ের দোকানগুলোতেও চলছে গ্যাসের ব্যবহার। বিষয়টি দিন দিন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ ঝুঁকিতে পড়ছে। উপজেলা কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।

আনোয়ারা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর কর্মকর্তা জানান, আমরা ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত মাইকিং করি ও সচেতনতামুলক মহড়াও দিয়ে থাকি। অনুমোদন বিহিন সিলিন্ডার বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, অতীতে এসবের বিরুদ্ধে অভিযানে নামলে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সুপারিশ আসতে থাকে, ফলে অভিযান সফল হয় না। এবার প্রধানমন্ত্রীর কঠোর পদক্ষেপ থাকার কারণে সকল অভিযানগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন ফায়ার সার্ভিস হার্ড লাইনে। লাইসেন্স ছাড়া যারা ব্যবসা করছে তাদেরকে আমরা লাইসেন্স করতে বলেছি, তাছাড়া এদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। চায়ের দোকানগুলোতে সিলিন্ডার ব্যবহার একেবারেই অবৈধ এ বিষয়ে আগামী আইন শৃঙ্খলা মিটিংএ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো। এছাড়া লাইসেন্স ছাড়া গ্যাস ব্যবসায়ীদের সিলিন্ডার না দিতে ডিলারদেরকে নির্দেশ ও দেওয়া আছে, কিন্তু ডিলাররা এ আইন না মেনে অবৈধভাবে বিক্রয় করছে। খুব শীঘ্রই এসবের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহম্মেদ বলেন, দাহ্য পদার্থ বিক্রির সুনির্দিষ্ট বিধিমালা আছে। যত্রতত্র বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

Related Posts