চট্টগ্রাম লিড নিউজ

রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট ফিলাটেলি

প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় ধর »

আজ ৮ই মে, বিশ্ব রেডক্রস এবং রেডক্রিসেন্ট দিবস। আন্তর্জাতিক রেডক্রস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা জীন হেনরি ডুনান্টের জন্মদিন স্মরণে প্রতিবছর ৮ মে বিশ্বব্যাপী আর্তমানবতার সহায়তার মর্মবাণী ছড়িয়ে দিতে এ দিবসটি পালিত হয়। তাই বাংলাদেশে এবং পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষাভাষী সকল রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্দেশ্যে আমার এই লেখা।

আক্ষরিক অর্থে পৃথিবীর কোথাও এখন রাজা ও রাজতন্ত্র নেই। কিন্তু রয়ে গেছে রাজার শখ। ফিলাটেলি অর্থাৎ ডাকটিকিট সংগ্রহকে বলা হয় King of the hobby। শখের রাজা বা রাজার শখ (ব্রিটেনের রাজা পঞ্চম জর্জ, রুমানিয়ার রাজা ক্যারল, মিসরের রাজা ফারুক, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট, বিখ্যাত হলিউড অভিনেতা ইউল ব্রাইনার- এরা সবাই ছিলেন বিখ্যাত ডাকটিকিট সংগ্রাহক)।

সারা বিশ্বে রেডক্রস এবং রেডক্রিসেন্ট আন্দোলনের উপর অনেক ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়েছে। এই রেডক্রস এবং রেডক্রিসেন্ট আন্দোলনের উপর প্রকাশিত ডাকটিকিট সংগ্রহকে বলা হয় রেডক্রস ফিলাটেলি। আর যারা শখের বসে এই ধরনের বিশেষ ডাকটিকিট সংগ্রহ করেন তাদের বলা হয় রেডক্রস ফিলাটেলিস্ট। ১৯৬৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির উদ্যোগে, রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট আন্দোলনের উপর প্রকাশিত ডাকটিকিটের উপর প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় ।

শুরুতে বিভিন্ন দেশের রেডক্রস সোসাইটিগুলো নিজেরা ডাক টিকিট প্রকাশ করতো এবং বিভিন্ন দেশের পোস্টাল সার্ভিস এর মাধ্যমে এই ডাক টিকিট বিক্রির টাকা বিভিন্ন আর্ত মানবতার সেবায় ব্যয় করা হতো। যেমন- ১২ জুলাই, ১৮৭০ ফ্রান্সের পোস্টাল ডিপার্টমেন্ট এই মর্মে আদেশ জারি করে যে, ফরাসি রেডক্রসের ইস্যু করা ডাকটিকিট ব্যবহার যোগ্য এবং এই ডাক টিকিট বিক্রির সব টাকা যুদ্ধে আহত নারী এবং শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

১৮৭০ সালে একইভাবে সুইস রেডক্রস ডাকটিকিটের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের রাবার স্ট্যাম্প এবং খাম প্রকাশ করে। একই ভাবে জার্মান রেডক্রস একটি খাম প্রকাশ করে, যার বিক্রির টাকা ব্যয় করা হয় যুদ্ধ বন্দীদের কল্যাণে। কিন্তু রেডক্রস থেকে প্রকাশ করা এই ধরনের ডাকটিকিট, খাম কিংবা সিল মোহর, আইন অনুযায়ী অফিশিয়াল পোস্টাল মেটারিয়াল হিসেবে ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। এগুলোকে বলা হয় ফান্ড রাইসিং মেটারিয়াল। কারণ লোকাল রেডক্রস সোসাইটিগুলো সেই সব দেশের পোস্টাল সার্ভিস এর সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে ওই সময় কিন্তু অফিসিয়াল ডাকটিকিট প্রকাশ করার অধিকার রাখে একমাত্র সেই সব দেশের নিজেদের পোস্টাল সার্ভিস।

সেই ক্ষেত্রে রেডক্রস আন্দোলনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথিবীর প্রথম রেডক্রস বিষয়ক অফিসিয়াল ডাকটিকিট প্রকাশ করে পর্তুগাল এর পোস্টাল ডিপার্টমেন্ট ১৮৮৯ সালে । কিন্তু এই ডাকটিকিট এর ব্যবহার শুধুমাত্র পর্তুগালের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পৃথিবীর বহু দেশের পোস্টাল সার্ভিস, রেডক্রস আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে প্রকাশ করেছে ডাকটিকিট, ফার্স্ট ডে কভার, খাম, সিল মোহর । এগুলোর বিক্রির সব টাকা আর্ত মানবতার সেবায় ব্যয় করা হতো।

এরপর থেকে আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট আন্দোলনকে সন্মান জানিয়ে, রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্টের বিভিন্ন অকেসনে প্রকাশিত হয়েছে অনেক স্ট্যাম্প, ফার্স্ট ডে কভার। আমি নিচে বেশ কিছু দেশের রেডক্রস আন্দোলনের উপর প্রথম প্রকাশিত স্টাম্প ও ফার্স্ট ডে কভার নিয়ে আলোচনা করবো ।

বাংলাদেশঃ বাংলাদেশ রেডক্রসের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রথম একটি ডাকটিকিট ও ফার্স্ট ডে কভার প্রকাশ করে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ১৯৭৩ সালের ২৬ এ জানুয়ারি। রেডক্রস এবং রেডক্রিসেন্ট আন্দোলনের ১২৫ তম বার্ষিকী উপলক্ষে ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ একটি ফার্স্ট ডে কভার এবং দুটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে। এখানে মার্ক করা উচিত রেডক্রিসেন্ট আন্দোলনের উপর বাংলাদেশ ডাক বিভাগের। এগুলো বাংলাদেশের প্রথম ও শেষ প্রকাশ করা ডাকটিকিট ও ফার্স্ট ডে কভার এখনও পর্যন্ত ।

স্পেনঃ রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট আন্দোলনকে সন্মান জানিয়ে পৃথিবীর মধ্যে সব চেয়ে বেশি ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে স্পেন । ১৯২৬ সালে প্রথম রেডক্রস কে সন্মান জানিয়ে প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশ করে স্পেন ।

জার্মানিঃ ১৯১৪ সালে রেডক্রস কে সন্মান জানিয়ে প্রথম খাম প্রকাশ করে জার্মানি ।

১৯১৪ সালে রেডক্রস কে সন্মান জানিয়ে প্রথম খাম প্রকাশ করে জার্মানি ।

রাশিয়াঃ ১৯১৫ সালে রেডক্রস আন্দোলনকে সন্মান জানিয়ে প্রথম খাম ও ডাকটিকিট প্রকাশ করে রাশিয়া। ১৯১৫ সালে রেডক্রস আন্দোলনকে সন্মান জানিয়ে প্রথম খাম ও ডাকটিকিট প্রকাশ করে রাশিয়া ।

ডাকটিকিট সংগ্রহ কেন গুরুত্বপূর্ণ? জ্ঞানার্জনে সহায়ক ডাকটিকিট সংগ্রহের সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা হয় না। ডাকটিকিট সংগ্রহের মাধ্যমে আমরা আমাদের মনন ও মানসিকতা উন্নত করতে পারি। ডাকটিকিট মানুষের জীবনের শৈশবে ও কৈশোরে জ্ঞানার্জন, যৌবনে অর্থ বিনিয়োগ, বার্ধক্যে একাকিত্ব দূর করতে সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম। ডাকটিকিট সংগ্রহ একদিকে যেমন উৎকৃষ্ট বিনোদন মাধ্যম; অন্যদিকে দেশ, জাতি, সভ্যতা ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করে। ডাকটিকিটে একটি দেশের নাম, দেশের মুদ্রা এবং প্রচ্ছদ থেকে সেই দেশ সম্পর্কে জানা যায়। একটি দেশের ভেগৌলিক তথ্য, সে দেশের প্রকৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, আচার-অনুষ্ঠান, পেশা, পোশাক-পরিচ্ছদ, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, সংস্কৃতি, পর্যটন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ঘটনা ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়।

আমি আশা করবো দুই বাংলার রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবীরা রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট ফিলাটেলিতে মনযোগী হবে ।

লেখকঃ প্রকৌশলী, জার্মান ইন্সিটিউট অব অলটারনেটিভ এনার্জির বাংলাদেশ প্রতিনিধি।

Related Posts