রুপন দত্ত – আনোয়ারা প্রতিনিধি
রমজান মাসেও ধান কাটার কাজে নেই কোন ক্লান্তি। চাষিরা রয়েছেন কিছুটা বৈশাখের ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কায়। সবমিলে ধান কাটা, বাঁধা, বহন, ঝাড়াই-মাড়াই, উড়ানো এবং গোলায় উঠাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আনেয়ারার চাষিরা।
ইতোমধ্যে আনোয়ারায় ৯০ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২০ দিনের মধ্যে পুরো উপজেলার শতভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হবে। কৃষকরা এখন শেষ মুহূর্তের ধান ঘরে তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আকাশে ঝড়ের ঘনঘটা দেখলেই কৃষক তাড়াতাড়ি সোনার এই ধান হই হুল্লর করে ঘরে তুলতে যেন ব্যাকুল। দীর্ঘ দিনের পরিশ্রমের ফসল বোরো ধান সংরক্ষন করে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।করোনা মহামারি ও লকডাউন এর কারনে ধান কাটার লোক না থাকায় কৃষকেরা নিজেরাই তাদের ধান কাটছেন,আবার অনেক রাজনৈতিক নেতা কর্মী ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরাও ধান কাটার কাজে সহযোগিতা করছেন। চারদিকে যেন উৎসব উৎসব ভাব।কোথাও আবার দেখা যায় বাড়ীর উঠানে এবং বাড়ির আঙ্গিনায় অস্থায়ী উঠান করে ধান রোদ্রে শুকাচ্ছেন। এতো পরিশ্রমের পরেও আনন্দ উৎসাহের মধ্যদিয়েই বোরো ধান ঘরে তুলছে কৃষক কৃষাণিরা।
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে বলে জানান কৃষি বিভাগ । উপজেলায় এবার ৬ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। ফলন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হবে বলে আশা কৃষি অফিস সংশ্লিষ্টদের।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়,উপজেলার ১১ ইউনিয়নে চলতি বোরো মৌসুমে ৬ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ হাজার ৫৫৪ মেট্রিক টন। বর্তমানে বাম্পার ফলনে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার আনোয়ারা, হাইলধর, বারখাইন, বরুমচড়া, তৈলারদ্বীপ, জুইদন্ডী, রায়পুর, পরৈকোড়া সহ উপজেলার ফসলের মাঠে সোনালি ধান আর ধানে যেন বিলগুলো পরিপূর্ণ হয়ে আছে। ধু ধু চোখে নজর কাড়ছে বোরোর ফসল। ধানের গন্ধে মৌ মৌ করছে পুরো গ্রামীণ জনপদ।
লগডাউনের ফলে চকরিয়া-বাশঁখালী ধান কাটার শ্রমিকরা আসতে না পারাই ধান ঘরে তুলতে সংকট দেখা দিলেও তাদের স্থান দখলে নিয়েছে আত্যাধুনিক হারভেস্টার মেশিন। যা ঘন্টা কানেকের মধ্যেই কানি জমিনের ধান কেটে বিছিয়ে রাখে।এইবার করোনায় শ্রমিক ঘাটতি মোকাবেলায় উপজেলায় ছোট-বড় ১২টি ধানকাটার হারভেস্টার মেশিন ধানকাটার কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
আনোয়ারা সদরের দক্ষিণ পাড়ার কৃষক সুনীল দাশ বলেন, আমরা অনেক কষ্টের মধ্যেই টাকা খরচ করে ধান চাষ করি। এ বছর ধান ভালো হয়েছে। গত বছর দাম ভালো পাওয়ায় এবছর আরো বেশি জমিতে ধান চাষ করেছি। আগামী এক মাসের মধ্যে ধান কাটা শেষ হবে। শিলা বৃষ্টি, ঝড় না হলে ভালোভাবে ধান ঘরে তুলতে পারবো।
কৃষি অফিসের বীজের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি বীজের ৪০ ভাগ তো নষ্ট হয়ে যায় বাকি যা থাকে চারা রোপণের কিছু দিন পড়ে পোকায় নষ্ট করে ফেলে। সরকারি বীজ গুলো থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায় না।
বৈরাগ ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, আমাদের এলাকায় ধান খুব ভালো হয়েছে। আশা করছি গত বছরের মত এবছরও ধানের ভালো দাম পাবো।
এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন, আমাদের উপর করোনাকালীন সময়ে সর্বস্তরের মানুষের খাদ্য চাহিদা নিশ্চিত করতে বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো এরই সাথে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো জমিতে বেশি ফলনশীল ধান এবং চাষাবাদ বৃদ্ধি করার।
তাই এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রথমবারের মত ৫ হাজার কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছিলো অধিক ফলনশীল হাইব্রিড ধানের বীজ। যা দিয়ে চাষাবাদ করা হয়েছে ২ হাজার হেক্টর জমি।
তিনি আরো বলেন, এই বারের প্রায় ৬১২০ হেক্টরেও বেশী জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। এবং দেখা যায় এবার অন্যান্য বারের চেয়ে ধান অনেক ভালো হয়েছে। ধানের দামের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, নতুন ধানের মূল্য ২৫০-২৭০ পর্যন্ত এবং পুরাতন ধানের মূল্য ২৭০-৩০০ টাকার মধ্যে রয়েছে