নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। জেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, চট্টগ্রামে এরইমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এছাড়া আবহাওয়ার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় যদি ঘূর্ণিঝড় গতিপথ পরিবর্তন না করে তাহলে আগামী বুধবার (২৬ মে) চট্টগ্রামের উপকূল দিয়ে বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় আজ বৃষ্টিপাত হয়েছে ১০ মিলিমিটার, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৩ কিলোমিটার।
রোববার (২৩ মে) রাত ৮টার দিকে আবহাওয়া অধিদফতর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক সৈয়দ আবুল হাসানাৎ বলেন, ‘চট্টগ্রামে এখন বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া জেলার আবহাওয়ার সার্বিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম দিয়ে বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে ঘূর্ণিঝড় সাগরে প্রায়সময় গতিপথ পরিবর্তন করে। যদি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসও গতিপথ পরিবর্তন করে সেটি ভিন্ন কথা। তবে চট্টগ্রামবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।’
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নিয়ে আগাম ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে নগর ও উপজেলা মিলিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে ৫১১টি আশ্রয়কেন্দ্র। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গঠন করা হয়েছে একটি পর্যবেক্ষণ টিম ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেডিকেল টিম। মজুদ করা হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণের শুকনো খাবার। এছাড়া গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য প্রতিটি উপজেলায় এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ইতোমধ্যে জেলার আওতাধীন প্রত্যেক উপজেলা প্রশাসনকে এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় প্রশাসনের উদ্যোগে চলছে সচেতনতামূলক মাইকিং।’
প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালীর নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে উপজেলা দুর্যোগ কমিটি নিয়ে সভা করেছি। সেখানে যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় লোকজনকে মাইকিং করে সচেতন করা হচ্ছে। প্রস্তুত করা হয়েছে উপজেলার শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র। আবহাওয়া অফিস যখনই বিপদ সংকেত ৪ এর বেশি দেখাতে বলবে, তখন নিরাপদ স্থানে লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর মধ্যে নিম্নচাপটি কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরের সবচেয়ে কাছে রয়েছে। এর অবস্থান কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬১৫ কিলোমিটার দূরে।
নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।