চট্টগ্রাম

মাঝারি বৃষ্টিত ডুবি গেইয়ে চাটগাঁ শহর,বাড়ি ঘরতঅ পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক
বর্ষা শুরু হতে আরও সপ্তাহখানেক বাকি। এর আগে কয়েকবার হালকা বৃষ্টিপাত হলেও আজ (রোববার) বন্দরনগরী চট্টগ্রামে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৯৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস। আর তাতেই বিভিন্ন সড়কে অচলাবস্থা তৈরি হয়।

নগরীর কিছু কিছু সড়কে পানি হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত ওঠে। দিনভর পানিতে তলিয়ে যাওয়া এসব সড়কে চলতে দুর্ভোগে পড়েন পথচারীরা। কোথাও কোথাও পানিতে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়।

এদিকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এবং নগরের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা রিয়াজউদ্দিন বাজারের বিভিন্ন শপিংমলের নিচ তলায় হাঁটু পরিমাণ পানি উঠেছে। ফলে হাসপাতালে আসা রোগী ও শপিং মলের ব্যবসায়ীরা ভোগান্তিতে পড়েন।

চট্টগ্রামের ২ নম্বর গেট, প্রবর্তক মোড়, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, হালিশহর ও আগ্রাবাদ এলাকার বেশকিছু সড়ক পানিতে ডুবে ছিল। সকাল নয়টায় বৃষ্টিপাত শুরুর ঘণ্টাখানেক পর থেকে এসব সড়কে দিনভর হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত ওঠানামা করে পানি। ফলে সকালে বিভিন্ন অফিসগামী ও বিকেলে অফিসফেরত লোকজনসহ সাধারণ পথচারীরা বেশ দুর্ভোগে পড়েন।

কোথাও কোথাও বিভিন্ন নারী ও পথচারীদের সড়কের গর্ত ও নালায় আটকে পড়তে দেখা যায়। আবার সড়কের পানি ইঞ্জিনে ঢুকে যাওয়ায় কিছু গাড়ি বিকল হয়ে যানজট সৃষ্টি হয়। এছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে গণপরিবহন না থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিকশা ও অটোরিকশায় করে সড়ক পাড়ি দিয়েছেন অনেকেই।

ক্ষোভ জানিয়ে বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা শাকিল উদ্দিন  বলেন, ‘বৃষ্টির পানি হোক বা অন্য কিছু যাইহোক, আমাদের তো অফিসে যেতে হয়। কিছুই করার নেই। কোথাও হাঁটু আবার কোথাও কোমর পরিমাণ পানি মাড়িয়ে অফিস থেকে বাসায় ফিরছি। আজ মৌসুমের বলতে গেলে প্রথম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এখনো বর্ষা শুরু হয়নি। প্রথম বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের সড়কের এই অবস্থা! বর্ষাতে কী হবে আল্লাহ জানেন!’

রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকার মোবাইল ফোনের দোকানি হেলাল উদ্দিন  বলেন, ‘বছরের শুরুর বৃষ্টিপাতে আজ দোকানের ভেতরে হাঁটু পরিমাণ পানি প্রবেশ করেছে। সারাদিন দোকানে কোনো কাস্টমার নেই। বেচাকেনা বন্ধ। এভাবে হলে সামনের বর্ষায় কী করব?’

মুদি দোকানি শামসুল ইসলাম বলেন, ‘দোকানে পানি প্রবেশ করায় বেশকিছু মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া বৃষ্টি ও পানির কারণে দোকানে ক্রেতা নেই বললেই চলে।’

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে আসা এক রোগীর স্বজন মোকতার হোসেন বলেন, ‘সীতাকুণ্ড থেকে আমার বড় ভাইয়ের বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। আসার সময় শহরের বিভিন্ন সড়কে পানি ছিল। কিন্তু হাসপাতালেও এসে দেখি হাঁটুপানি। এমন হলে রোগী নিয়ে চলাচল করব কীভাবে?’

এদিকে আবহাওয়াবিদ ড. মু. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রামে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৯৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম নদীবন্দরকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে।’

আবার পাহাড় ধসের শঙ্কায় নগরের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মাইকিং এবং পাহাড়ে বসবাসকারী শতাধিক পরিবারকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে রোববার সকাল থেকেই নগরের বিভিন্ন স্থানে মাইকিং ও বসতি স্থানান্তরে অভিযান পরিচালনা করেন চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামনুন আহমেদ অনীক, বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সদর সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা জান্নাত, আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোজাম্মেল হক চৌধুরী এবং কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইনামুল হাসান।

Related Posts