সিনিউজ ডেস্ক
কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে ১৫০ দিনের বেশি বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে রাখার বিধান অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ পেয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, কোনো কর্মকর্তাকে ১৫০ দিনের বেশি ওএসডি করে রাখা যাবে না। এছাড়া ওএসডি করা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত অবশ্যই ১৫০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে।
হাইকোর্টের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের বেঞ্চের ঘোষিত রায়ের অনুলিপিতে তাদের স্বাক্ষরের পর সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ২১ পৃষ্ঠার ওই পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।
কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে ১৫০ দিনের বেশি ওএসডি করে রাখা যাবে না, এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায়টি লিখেছেন বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। আর রায়ে সহমত প্রকাশ করেছেন বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার।
হাইকোর্টের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, কোনো কর্মকর্তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হিসেবে পদায়ন করা হলে অকারণে দেরি না করে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা নিরূপণের জন্য সরকারকে অবশ্যই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। তদন্ত কমিটি যদি অভিযোগের সারবত্তা খুঁজে পায় তাহলে সরকারের উচিত হবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত কাজ অবশ্যই নির্ধারিত ১৫০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে।
রায়ে আরও বলা হয়, এ বিষয়টি আদালতের সামনে আরও অনেকে আগেই উত্থাপন করা আবশ্যক ছিল।
এ প্রসঙ্গে আদালত একটি প্রাচীন প্রবাদের কথা উল্লেখ করেন, ‘একেবারে না হওয়ার চেয়ে দেরি করে হওয়া ভাল।’
পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক বরাবর পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের বেঞ্চ এর আগে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে এ রায় দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অনীক আর হক। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্তকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
যারা ১৫০ দিনের বেশি ওএসডি আছেন, রায়ের অনুলিপি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের স্বপদে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর চেম্বার জজ আদালত আট সপ্তাহের জন্য রায়টি স্থগিত করে আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে বলা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানান, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের করা হবে।
২০১২ সালের জুন মাসে ওএসডি-সংক্রান্ত জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের জুনে হাইকোর্টের জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে গত বছরের ৮ জানুয়ারি বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেয়। রায়ে সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে ১৫০ দিনের বেশি ওএসডি করে রাখা যাবে না বলা হয়।
একইসঙ্গে যেসব সরকারি কর্মকর্তাকে ১৫০ দিনের বেশি ওএসডি করে রাখা হয়েছে তাদের স্ব স্ব পদে পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়া হয়। এসব বিষয় পর্যালোচনা ও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এরপর হাইকোর্টের এই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ওএসডির সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না এমন যুক্তিতে ২০১২ সালের ৩১ মে সাবেক সচিব আসাফ উদ-দৌলা হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯১ সালের ৩ অক্টোবর তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে কী কী কারণে ওএসডি করে রাখা যায়, সে বিষয় ও সময়সীমার কথা বলা রয়েছে। কিন্তু অনির্দিষ্টকালের জন্য ওএসডি করে রাখা হচ্ছে, যা বেআইনি ও অসাংবিধানিক। সংবিধানের ২০ (২) অনুচ্ছেদ অনুসারে অনুপার্জিত আয় কোনো ব্যক্তি ভোগ করতে পারবে না। কিন্তু যাদের ওএসডি করে রাখা হচ্ছে, তারা কোনো দায়িত্ব ছাড়াই সরকারের কাছ থেকে বেতন-ভাতা ভোগ করছেন। জনগণের ট্যাক্সের অর্থ থেকে তাদের বেতন দেয়া জনস্বার্থ ও সংবিধান পরিপন্থি।
ওই রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৪ জুন মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করে।
রুলে নির্ধারিত কারণ ও সময়ের বাইরে সরকারি কর্মকর্তাদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করে রাখা এবং তাদের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন-ভাতা দেয়া কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
পাশাপাশি ওএসডি করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা কেন করা হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়।