আন্তর্জাতিক আরব আমিরাত

ক্যান্সার আক্রান্ত রেমিট্যান্সযোদ্ধা দূতাবাসের সহযোগিতায় দেশে ফিরছেন 

 

 

সনজিত কুমার শীল

নূর হোসেন পিতা মৃত সুলতান আহমেদ ৬ ভাই ২ বোন। চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার করনখাইন ইউনিয়নের বাসিন্দা। নূর হোসেন ২০০৭ সালে পরিবারের সুখের আশায় প্রবাসে পাড়ি জমান। পরিবারে স্ত্রী এবং তিন মেয়ে সন্তানের তখন জন্ম । প্রবাসের চাকরি করেন একটি বাংলাদেশী কোম্পানির কাছে।এই প্রবাস তথা সংযুক্ত আরব আমিরাতে আশার ৪ বৎসর অতিবাহিত হলে প্রথমবারের মতো দেশে পাড়ি জমায়। দেশ থেকে ছুটি কাটিয়ে আসলে দুই জমজ মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। ২০২০ সালের দিকে প্রথম মেয়ে সায়মা আক্তার (মুনিয়া) বিবাহ দেন। এই প্রবাসে সবার সহযোগিতা নিয়ে ক্রমান্বয়ে ২০২১ প্রথমদিকে দ্বিতীয় মেয়ে নাইমা আক্তার কে বিবাহ দেন। ২০১৫ সালের দিকে তাদের কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়। চলে অনেক কষ্টের মধ্যে নূর হোসেনের জীবনযাত্রা। এভাবে চলে যায় বেশ কয়েকটি বছর দেশে ছুটিতে যাওয়া হলো না। একদিকে ভিসার মেয়াদ শেষ হয় অন্যদিকে চলে কষ্টের জীবন। অবৈধ হওয়াতে মাসিক কোনো বেতন না পাওয়ায় দৈনন্দিন মাঝে মাঝে কাজ করতে হয় এই নূর হোসেনকে। বিগত ছয় বছর ধরে আমিরাতের বৈধ ভিসা না থাকায় লুকিয়ে কাজ করতে হয় এই হতভাগা প্রবাসী কে। বিগত ছয় মাস পূর্বে হঠাৎ অসুস্থ হলে বাংলাদেশি কয়েকজন পুলিশকে ফোন করলে অ্যাম্বুলেন্স এসে প্রশাসন উনাকে মাফরাক হাসপাতলে ভর্তি করেন। গলায় একটু সমস্যা দেখা দিলে পরে সেটা ক্যান্সারে পরিণত হয়। গলায় অপারেশন সহ সারা শরীরে বেশ কয়েকটি জায়গায় অপারেশন করা হয় নূর হোসেনকে। বর্তমানে তিনি একটু সুস্থ হয়েছেন তবে তাহার কন্ঠে আর কথা বলা, শোনা যাবেনা। তিনি শুধু পানি এবং জুস পান করতে পারেন শক্ত কোন জিনিস তার খাওয়া থেকে বঞ্চিত হল। মাফরাক মেডিকেল থেকে সাড়ে পাঁচ মাস পরে সুস্থ হয়ে তিনি বাংলাদেশি কয়েকজনের সহায়তায় মুসাফাহ সাবিয়া খলিফা ১০ নম্বরে বিনা খরচে অবস্থান করেন। এই অসহায় নূর হোসেনকে বাংলাদেশি বেশ কয়েকজন সহযোগিতা করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জুয়েল নামে এক প্রবাসী। দেশে যাওয়ার জন্য গত মাসের বাংলাদেশ বিমানের টিকিট ও ছিল নূর হোসেনের। পাসপোর্টে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তা তিনি জানেন না। ভিসা পতাকা না থাকা ওই ব্যাপারে তার কোন মাথায় ছিল না। টিকেট পাসপোর্ট নিয়ে যখন এয়ারপোর্ট যায় তখন উনাকে বোর্ডিং পাস এবং ইমিগ্রেশন না করে ফেরত দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে ইমিগ্রেশন অফিসার নূর হোসেনকে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতা নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। এয়ারপোর্ট থেকে ফেরত আসার পর মোহাম্মদ জুয়েল আমাকে ফোন করে বিস্তারিত তথ্য দেন। আমি ওনাকে আমার কাছে নিয়ে আসার জন্য পরামর্শ দিই এবং সাথে সাথে বাংলাদেশ এম্বাসির সহযোগিতায় নূর হোসেনকে দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করি। রাষ্ট্রদূত আবু জাফর এবং কাউন্সিলর, শ্রম ( স্থানীয়) লুৎফুন নাহার নাজিম সহ শ্রম উইং এর কর্মকর্তা মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ রেজাউল আলম ,মোহাম্মদ বেলাল, ওসমান মোল্লা সকলের সহযোগিতায় নূর হোসেন কে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেন। নূর হোসেন কে দেখে লুৎফুন্নাহার নাজিম ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ড এর যে কার্ড দূতাবাস সেটি ফ্রি ভাবে করিয়ে দেন এবং বিমানের টিকেটের রি-ইস্যুসহ , চিকিৎসা বাবদ আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আনার্স কল্যাণ বোর্ড এর তহবিল থেকে অসুস্থ রোগের চিকিৎসার্থে বাংলাদেশ সরকার থেকে এক লক্ষ টাকার অনুদান সহ নানা দিক সুবিধা নিতে পারবেন বলে জানান বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে নূর হোসেনকে । তিনি দেশে গেলে ওই কার্ডের মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চিকিৎসার জন্য ১ লক্ষ টাকা নিয়ে নিজে সুযোগ পাবেন বলে জানান বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। আগামী কাল ১৪ ই জুন ২০২১ সকালে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট যোগে আবুধাবি থেকে ঢাকা এবং আভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা রয়েছে। নূর হোসেনের পরিবারে কোন ছেলে সন্তান নেই। পরিবারে স্ত্রী এবং ৫ কন্যা সন্তানের ভরণপোষণ করা খুব কষ্টকর হবে তাই যারা বিত্তবান আপনাদের সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন নূর হোসেন ও তার পরিবার। নূর হোসেনের পরিবার বাংলাদেশ দূতাবাস আবুধাবি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।।

Related Posts