আন্তর্জাতিক ওপার বাংলা

মালদায় মা,বাবা,বোন ও দাদীকে খুন,তরুণ গ্রেপ্তার

সিনিউজ ডেস্ক

মালদায় এবার উদয়নকাণ্ডের ছায়া (Malda Incident)। বাবা-মা সহ পরিবারের চার সদস্যকে খুন করে মাটিতে পুঁতে রাখার অভিযোগ ছেলের বিরুদ্ধে। ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ‘গুনধর’ ছেলেকে। ঘটনাটি ঘটেছে মালদার কালিয়াচকে। ধৃতের নাম আসিফ মেহবুব। পুলিশের দাবি, চারমাস আগে বাবা-মা, দিদা ও বোনকে খুন করেছিল সে। এরপর তাঁদের মৃতদেহগুলি বাড়ি লাগোয়া গুদামঘরে জলের ট্যাঙ্কে পুঁতে দেয়। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চারমাসে পুরনো এই খুনের ঘটনায় শুক্রবার রাতে ১৯ বছরের তরুণ আসিফ মেহবুবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কালিয়াচকের পুরাতন ১৬ মাইল গ্রামের বাসিন্দা আসিফ দীর্ঘদিন ধরেই গা ঢাকা দিয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে। পুলিশের দাবি, ধৃত আসিফ মেহবুব জেরায় পরিবারের চার সদস্যকে খুনের কথা স্বীকার করেছে। জানিয়েছে, মাসচারেক আগে মা-বাবা, বোন ও দিদাকে খুন করে বাড়ি লাগোয়া গুদামঘরে পুঁতে দিয়েছিল সে। বড় ভাইকেও খুনের হুমকি দিয়েছিল সে। তবে সে কলকাতায় পালিয়ে যাওয়ায় তাঁর নাগাল পায়নি অভিযুক্ত। শুক্রবারই আসিফের বড় ভাই গোটা ঘটনা কালিয়াচক থানায় জানায়। এরপরই গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তকে। পুলিশ সূত্রে খবর, পরিবহণ ব্যবসায়ী বাবার ছোট ছেলে অত্যধিক বেহিসেবি খরচ করত। তার এই খরচে কার্যত নাজেহাল হয়ে পড়েছিলেন বাবা। শেষ পর্যন্ত সম্পত্তি বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি। তবে কি টাকা-পয়সা সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড? নাকি অন্য কোনও কারণে পরিবারের সদস্যদের খুন করা হয়েছে? আসিফকে এই কাজ কেউ মদত দিয়েছিল? তদন্তে নেমে ধন্দে পুলিশ। উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না মানসিক বিকৃতির বিষয়টিও।

প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, গত তিন-চার মাস ধরে ওই বাড়ির চার সদস্যকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল না। আসিফকে সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বারবার এড়িয়ে যেত সে। সামাজিক মেলামেশা তেমন করত না কারও সঙ্গেই। এরপর বহুদিন তাকে বাড়ির আশপাশে দেখা যেত না বলেও জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। তবে গত কয়েকদিন ধরে অভিযুক্তের গতিবিধি দেখে স্থানীয়দের মনে সন্দেহ হয়। পুলিশ বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পর জলের ট্যাঙ্ক থেকে চারজনের দেহ উদ্ধার করেছে বলে খবর।

ধৃত আসিফের গতিবিধি নিয়েও ধন্দে পুলিশ। তার ঘরে পাওয়া গিয়েছে একাধিক ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, সাউন্ড সিস্টেম, টিভি, সিসি ক্যামেরা সহ বহু অত্যাধুনিক গ্যাজেট। বাইরের কারও প্রবেশের অনুমতি ছিল না তার ঘরে। নিজের বাড়িতেই ছোটখাটো একটি ল্যাব তৈরি করেছিল সে। কিন্তু, কী কারণে এই অত্যাধুনকি গ্যাজেট স্টেশন? গ্যাজেটগুলির মাধ্যমে কোন বিষয়ের উপর নজর রাখত সে? কী মতলব ছিল তার? জানতে দফায় দফায় জেরা করা হচ্ছে তাকে। আর এই ক্ষেত্রেই রেফারেন্স টানা হচ্ছে উদয়নকাণ্ডের। বাঁকুড়ার মেয়ে আকাঙ্খা শর্মাকে ভোপালে নিয়ে গিয়ে খুন করে পুঁতে দিয়েছিল উদয়ন দাস। ভোপালের সাকেতনগরের বাড়িতে উদ্ধার হয় আকাঙ্খার দেহ। খুনের কিনারা করে বাঁকুড়া জেলা পুলিস। পরে দেখা যায় নিজের বাবা-মাকেও একই কায়দায় খুন করে মাটির নীচে পুঁতে দিয়েছিল সে। রাজ্য জুড়ে শোরগোল ফেলে দেয় সেই ঘটনা। তদন্তে উদয়নের মানসিক বিকৃতি ধরা পড়ে। টেকনোলজিক্যাল বিষয়ে তারও ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য। সেই ট্রাকেই ফেলা হচ্ছে মালদার এই যুবকের ঘটনাকে।

Related Posts