জাতীয়

হাসপাতালে “সম্রাটের” মতই আছেন যুবলীগের সেই ক্যাসিনো সম্রাট

 

সিনিউজ ডেস্ক

যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের বিরুদ্ধে করা চারটি মামলার মধ্যে তিন মামলার তদন্ত শেষ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে করা মামলার অভিযোগ আমলে নিয়েছে আদালত। তবে সম্রাটের অসুস্থতার কারণে এসব মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করা যাচ্ছে না।

আর বিদেশ থেকে তথ্য না পাওয়ায় শুধু সিআইডির করা অর্থপাচারের মামলাটির তদন্ত শেষ করা যায়নি। গ্রেপ্তারের পর থেকে অধিকাংশ সময় সম্রাট অসুস্থতার দোহাই দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে আছেন।

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) অধ্যাপক মেশকাত চৌধুরীর অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক মেশকাত চৌধুরী বলেন, ‘সম্রাট চৌধুরী আগে আমার অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু এখন তাকে অন্য কেউ চিকিৎসা দিচ্ছে। তার স্বাস্থ্যগত আপডেট তথ্য আমার জানা নেই।’

রাজধানীর কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টার দখল করে সম্রাট মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকার চাঁদাবাজি ও সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতেন সম্রাট। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর তাকে ও আরমানকে ফেনীর কাছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের একটি গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই দিন দুপুরে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে অভিযান চালায়। সেখানে ক্যাঙারুর চামড়া রাখার দায়ে সম্রাট ও আরমানকে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সম্রাটের বিরুদ্ধে মোট মামলা হয়েছিল চারটি। এর মধ্যে মানি লন্ডারিং মামলা ছাড়া অন্য তিন মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

সম্রাটকে গ্রেপ্তারের প্রায় ১১ মাস পর তার বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ১৯৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এজাহারে বলা হয়, ক্যাসিনো পরিচালনা, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির মাধ্যমে ওই টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেন তিনি। কিন্তু মামলা করার নয় মাস পরও সিআইডি তদন্ত শেষ করতে পারেনি।

এ ব্যাপারে সিআইডির ফিন্যানশিয়াল ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের অনুমতি চেয়েছিলাম, সেটা এখনো পাইনি। এ ছাড়া বিশেষ অর্থ পাচারসংক্রান্ত তথ্য চেয়ে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়েছিল, সেই চিঠিরও জবাব আসেনি। এসব কারণেই সম্রাটের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলার তদন্ত এখনো শেষ করা যায়নি।’

২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাঈল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করেন সম্রাটের বিরুদ্ধে। ওই মামলায় ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় প্রায় ২২৩ কোটি টাকা পাচার এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে দুদক।

এ ব্যাপারে ঢাকা জজ আদালতের দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।

২০২০ সালের ৬ নভেম্বর অস্ত্র আইনের মামলায় ও ৯ ডিসেম্বর মাদক আইনের মামলায় সম্রাটের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে র‌্যাব। দুই মামলার চার্জশিটে বলা হয়, ইসমাইল হোসেন সম্রাট যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজধানীতে বিভিন্ন ক্লাব পরিচালনা করতেন। তার নিয়ন্ত্রণে ওই ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো জুয়ার আসর বসত। জুয়া খেলা থেকে তিনি বিপুল অর্থ-সম্পত্তির মালিক হন। তিনি প্রতি মাসে ক্যাসিনো খেলতে সিঙ্গাপুর যান। দেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করতেন তিনি।

এই দুই মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে করা দুটি মামলার তদন্ত ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে। আমরা এসব মামলায় চার্জশিট দিয়েছি।’

গ্রেপ্তারের পর অসুস্থতার কথা বলে বেশির ভাগ সময় কারাগারের বদলে হাসপাতালেই রয়েছেন সম্রাট চৌধুরী। গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কারা হেফাজতে আছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. মাহাবুবুল ইসলাম। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, কার্ডিয়াক সমস্যা নিয়ে সম্রাট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এখন তার কী অবস্থা সেটা ওখানকার চিকিৎসকরা বলতে পারবেন।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. নজরুল ইসলাম খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ওনার শরীরের বর্তমান অবস্থা এখন বলতে পারছি না। তবে যেহেতু এখানে আছেন, নিশ্চয়ই অসুস্থ। তিনি সুস্থ হলেই আমরা তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য লিখতাম।’

সম্রাটের মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস পাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, সম্রাটের মামলাগুলো ঢাকা তৃতীয় মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি হয়ে গেছে।

 

Related Posts