জাতীয় রাজনীতি লিড নিউজ

‘চাকরিজীবী লীগ’ নিয়ে যা বললেন হেলেনা জাহাঙ্গীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে সম্প্রতি আলোচিত হন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য হেলেনা জাহাঙ্গীর। অনেকে এটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সমালোচনাও করেন। শনিবার আলোচিত এই নেত্রীকে উপকমিটি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর। কথা বলেছেন আলোচিত চাকরিজীবী লীগ নিয়েও। তিনি দাবি করেন, সংগঠনটির সঙ্গে তিনি জড়িত নন। বরং তিনি সংগঠনটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সবুজ সংকেত না পেলে তিনি এই সংগঠনের পদ গ্রহণ করবেন না।

সন্ধ্যায় আলাপকালে হেলেনা জাহাঙ্গীর চাকরিজীবী লীগ সম্পর্কে বলেন, ‘এটা আমি খুলিনি। এই প্রতিষ্ঠান চার বছর আগের। এটা মাহবুব সাহেব খুলেছিলেন। আমাকে ওরা প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। আমি বলেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছাড়া আমি কিছু করতে পারবো না। তবে আমি আপনাদেরকে এনালাইসিস করব। গত তিন মাস ধরে আমি উনাদেরকে দেখছি। তবে উনাদের সংগঠন অনেক বড়। ৬৪ জেলায় কমিটি আছে। থানা কমিটি আছে, জেলা কমিটি আছে, অনেক সদস্য আছে দেখলাম। এখানে অবসরপ্রাপ্ত অনেক আর্মি অফিসারও আছেন দেখলাম। বর্তমান চাকরিজীবী আছেন, ব্যাংকের আছেন।’

করোনার কারণে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিষয়টি তিনি অবগত করতে পারেননি জানিয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘চুমকি আপুর সঙ্গে দেখা করব, পারি নাই। কাদের ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারি নাই, গোলাপ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করব, তাইও প্যানডামিকের জন্য পারিনি।’

‘আমি তাদেরকে (চাকরিজীবী লীগের নেতাদের) বলেছি, কমিটির পেপারগুলো একত্রিত করে আমাকে দেয়ার জন্য। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে পৌঁছাব বা গণভবনে পৌঁছে দেব। যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, হেলেনা তুমি থাকো। তারপরে আমি এটা করব। আর করার আগে সংবাদ সম্মেলন করে তো আমি জানাব।’

সংগঠনটির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমি এখনো দায়িত্ব নিইনি তাই এখনো লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কিছু ঠিক করা হয়নি। যেহেতু আমি দায়িত্ব নিইনি, আমি দায়িত্ব নিলে আমার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে। যদি আমার নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তারপর আমার সেকেন্ড কেন্দ্রীয় নেত্রী হচ্ছেন মেহের আফরোজ চুমকি আপু। তারা যদি না বলেন তাহলে আমি কোথাও যেতে পারবো না।’

এ ধরনের সংগঠনকে অনেকে চাঁদাবাজির দোকান বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। এ প্রসঙ্গে হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘একেকজন একেক রকম বলে। একেকজনের বক্তব্য একেক রকম। হাতের পাঁচটা আঙ্গুল কি এক? আপনারা সাংবাদিকরা জানেন যে, আমি বাংলাদেশি একমাত্র প্রতিবাদী নারী। যখন যেটা হয় আমি প্রতিবাদ করি। পরীর (পরীমনি) ঘটনাটা দেখেছেন যে, কোথা থেকে কোথায় গেছে। শুধু আমার বক্তব্যের কারণে।’

এই সংগঠনে কারা থাকতে পারবেন জানতে চাইলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ এখানে সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এছাড়া যেকোনো বেসরকারি চাকরিজীবী এই সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন।’

হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আপনারা তো ভালো করেই জানেন, আমি কোনো অবৈধ কাজ করি না, অনৈতিক কাজ করি না। যদি আমি উনাদের সঙ্গে থাকি উনারা আমাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে চাচ্ছেন। নেত্রী আমাকে নির্দেশনা দিলে চাকরিজীবীদের যে দাবি, তারা বেকার হয়ে যাচ্ছেন, বেতন পাচ্ছেন না, বিনা কারণে তাদেরকে বের করে দিচ্ছেন। এ ধরনের দাবি-দাওয়াগুলো আদায় করা হবে।’

হেলেনা বলেন, ‘আমি গোলাপ ভাইয়ের কাছে যাব, আমি কাদের ভাইয়ের কাছে যাব, আমি হানিফ ভাইয়ের কাছে যাব, বিপ্লব বড়ুয়া ভাইয়ের কাছে যাব লকডাউন শেষে। আমি কারো পরামর্শ ছাড়া কাজ করি না। তারপর উনারা কারো না কারোর মাধ্যমে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন, না ঠিক আছে করুক, তাহলে আমি করব।’

চাকরিজীবী লীগ প্রসঙ্গে হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা চার বছর আগে। তিন মাস আগে আমাকে অফার করেছেন মাহবুব ভাই। তিনি প্রতিষ্ঠাতা। বলেছেন, আপা আপনাকে আমরা প্রেসিডেন্ট করছি। আপনি আমাদের সঙ্গে থাকেন। আমি বলেছি, ভাইয়া আমিতো দল করি, আমি আওয়ামী লীগের দুটি পদে আছি।’

আওয়ামী লীগের নেত্রী হলেও তার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছবি রয়েছে। আর সেই ছবি হেলেনা জাহাঙ্গীরের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টেই রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওটা তো ক্লিয়ারেন্স দিয়েছি। আমি আমার স্টেটমেন্ট দিয়েছি যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরও ছবি আছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে। ওনার বিয়ের সময় সম্ভবত। আশরাফুল ভাইয়ের ফেসবুক পেজ থেকে পেয়েছিলাম। মওদুদ আহমেদ সাহেবের ছেলের বিয়েতে গিয়েছিলাম। অনেক দিন আগের ঘটনা। এই ছবিটা আমি নিজেই পোস্ট করেছিলাম। এটা কারো উঠানো ছবি না। আমার নিজের মোবাইলে উঠানো ছবি।’

তখন কি আপনার ভালো রেজুলেশনের ফোন ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ,৮৬ হাজার টাকা দিয়ে নাম্বার নিয়েছিলাম, মটোরোলা ফোন। তখন থেকে আমরা মোবাইল ব্যবহার করি। যাই হোক, এটা ছিল একটা ছবি। আর আমি তো কখনো কোনো দল করিনি। আমি আওয়ামী লীগের সঙ্গে শুরু করেছি, আওয়ামী লীগের সঙ্গে শেষ হবে। আমার বয়স হয়েছে কত যে, আমি এতদিন পরে এক দল থেকে আরেক দলে আসবো? এইগুলো বানোয়াট কথাবার্তা বলার কারণে আমি স্টেটমেন্ট আজকে দিয়েছি। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ থেকে শুরু করে, জিএম কাদের থেকে শুরু করে যারা আছেন, তারা আমার ছেলের বিয়েতে এসেছিলেন।’

আপনি গত তিন মাসে সংগঠন থেকে কী বুঝলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কিছু বুঝি নাই। আমি কিন্তু লিখি নাই, আমি সভাপতি। আমি তো আপনাদেরকে জানাব, সংবাদ সম্মেলনে করব। আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেব যে, আমি সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করলাম। আপনারা দোয়া করবেন। এই জিনিসটা আমার পক্ষ থেকে আপনারা পাবেন। গত তিন মাসে তাদের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। কিন্তু গতকালসহ দুইবার আমি তাদের সঙ্গে জুম মিটিংয়ে যুক্ত হয়েছি। সেখানে অ্যাডভোকেট কামাল ভাই ছিলেন। তবে সেখানে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়নি।’

Related Posts