রুপন দত্ত – আনোয়ারা প্রতিনিধি
করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই আনোয়ারা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা। অন্যান্য সময়ের থেকে ক্লিনিকে রোগীও বেড়েছে। করোনা সংক্রমনের ঝুকি নিয়ে উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে না গিয়ে স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ায় খুশি স্থানীরা। কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখছে অনেকে।
আনোয়ারা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে মোট ২৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে বৈরাগ ইউনিয়নের ৩টি, বারশত ইউনিয়নে ৩টি, রায়পুর ইউনিয়নে ৪টি, বটতলী ইউনিয়নে ৩টি, বরুমচড়া ইউনিয়নে ২টি, বারখাইন ইউনিয়নে ৪টি, চাতরী ইউনিয়নে ২টি, আনোয়ারা সদর ইউনিয়নে ১টি, পরৈকোড়া ইউনিয়নে ১টি, হাইলধর ইউনিয়নে ৩টি, জুঁইদন্ডী ইউনিয়নে ৩টি কমিটি ক্লিনিক রয়েছে।
এসব ক্লিনিকগুলো উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ মতে সপ্তাহে ৬দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার নিয়মিত সেবা দিচ্ছেন। এছাড়া একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও মাঠ পর্যায়ে কাজের জন্য নিযুক্ত ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার অ্যাসিসটেন্ট সপ্তাহে তিনদিন করে ক্লিনিক গুলিতে সেবা দিচ্ছেন। দেশে করোনা সংক্রমণের কারণে তাদের সকল প্রকার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
আনোয়ারা উপজেলার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার এসোসিয়েশনের সভাপতি মাহফুজুর রহমান বলেন, করোনা সংক্রমনের আশংকার মাঝেও জীবনের ঝুকি নিয়ে তৃনমূল জনসাধারনকে নিয়মিত সেবা প্রদান করছি। প্রায়ই কিছু রোগী আসেন যাদের সমস্যার সাথে করোনা সংক্রমনের উপর্সগের অনেকটা মিল থাকে। যার ফলে করোনা আক্রান্ত রোগী হলেও তা নির্ধারন করা আমাদের পক্ষে কঠিন হয়। ক্লিনিকে আগত রোগীদের নিকট থেকে তাদের শারিরীক সমস্যার তথ্য জেনে সিএমইডি এজেন্ট অ্যাপস ব্যাবহার করে করোনা সংক্রমনের সম্ভাবনা আছে কিনা তা নির্ধারন করি। তাদেরকে সচেতনতামুলক পরামর্শ প্রদান করে থাকি। সুরক্ষা সামগ্রী ব্যাবহারের মাধ্যমে যতটা সম্ভব নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে সেবা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আগের থেকে রোগীও বৃদ্ধি পেয়েছে।
কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা রুবেল বলেন, করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর থেকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। সাধারণ মৌসুমি জ্বর,সর্দি,কাশি,গলাব্যাথা, পেট ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, বমি ও পাতলা পায়খানা এধরণের সমস্যা নিয়ে রোগীরা আসেন আমাদের কাছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি তাদের সেবা দেওয়ার। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও আমাদের ক্লিনিকে রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রায়পুর ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা খাদিজা আক্তার, বুলিয়া আক্তার, তাসলিমা বেগম বলেন, করোনার কারণে হাসপাতালে যেতে পারি না। ঠান্ডা গরমের জন্য জ্বর মাথা ব্যাথা নিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকে আসছি। এখানে ডাক্তার দেখালাম। পেশার মাপল,ওজন মাপল। পরে ঔষধ দিল, চলে আসলাম। গ্রামের অনেকেই ওখানে যায়।
রিয়াজ উদ্দিন আকিব, মোহাম্মদ জাবেদ, মোহাম্মদ সাহেদসহ বারখাইন ইউনিয়নের কয়েকজন বলেন, করোনার জন্য কোথাও যেতে পারিনা। কিন্তু স্বাভাবিক রোগ তো আর আমাদের মুক্তি দিচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকে আসি। এখানের ডাক্তারা আগের থেকে ভাল সেবা দিচ্ছে এখন। বর্তমানে বিনামূল্যে ঔষধও দেয় কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে। এ ধারা অব্যাহত রাখার দাবি জানান তারা।
জুঁইদন্ডী ইউনিয়নে কমিটি ক্লিনিকের সেবা সম্পর্কে স্থানীয় মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও আইয়ুব আলী সহ আরও অনেকে বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক না থাকলে স্বাস্থ্যসেবা পেতে তাদের অনেক দূরে যেতে হত, যাতে সময় ও অর্থ ব্যয় হত এবং দুর্ভোগ বাড়তো। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে জ্বর, সর্দি, কাশি, আমাশয়, কাটা, পোড়া, গ্যাষ্টিক, এলার্জী, ওজন মাপা, প্রেসার মাপা, ইত্যাদি স্বাস্থ্য সমস্যার সেবা গ্রহন করে থাকেন।
আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আবু জাহিদ মোহাম্মদ সাইফুদ্দীন বলেন, উপজেলার ২৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিকে করোনা সংক্রমনের সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রদান করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের এই সংকটময় মুহুর্তে আনোয়ারা উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলি নিরবিচ্ছিন্নভাবে তৃনমুল মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে। সিএইচসিপিদের অগ্রনীয় সাহসী ভুমিকার জন্য যা সম্ভব হচ্ছে।