চট্টগ্রাম

হালদার তীরে  ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করলেন ডিসি

 

হাটহাজারী উপজেলার গুমানমর্দ্দন এলাকায় হালদার তীরবর্তী গৃহহীনদের জন্য নির্মিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ পরিদর্শন ও সেখানকার ২৬ পরিবারসহ মোট ৩৫০ জনের মাঝে সরকার প্রদত্ত উপহার সামগ্রী (ত্রাণ) বিতরণ করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। এসময় বাচ্চাদের জন্যে চকলেট, চিপস দেয়া হয়।

আজ ১ আগস্ট ২০২১ ইংরেজি রোববার সকাল ১১টায় আশ্রয়ণ পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাকে পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হয়েছে। জেলাকে কয়েকটি ক্লাস্টারে ভাগ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন নানাবিধ চ্যালঞ্জ মোকাবেলা করে দুই পর্যায়ে মোট ২ হাজার ২১৬ টি গৃহ নির্মাণ ও হস্তান্তর করেন। উপজেলা পর্যায়ে হাটহাজারীতে প্রথম পর্যায়ের ১৫টি, দ্বিতীয় পর্যায়ের ১০টি ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস কর্তৃক ১টি সহ মোট ২৬ টি গৃহ নির্মাণ করা হয়। পরিদর্শনকালে অন্যান্যেও মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস.এম জাকারিয়া, হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম রাশেদুল ইসলাম, হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ শাহিদুল আলম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আবু রায়হানসহ জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটগণ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিদুল আলম বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় যথাসময়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। এ আশ্রয়ণের নানা সুযোগ সুবিধার বিষয়ে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা তা বাস্তবায়ন করেছি ও প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে নিকটস্থ গ্রোথ সেন্টারসমূহের সঙ্গে এই ২৬টি পরিবারের জীবিকার সংযোজন করতে সামনের সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমরা বিশ্বাস করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের’ মাধ্যমে ঘর পাওয়া প্রতিটি পরিবার শুধু আশ্রয়ই পায়নি, পেয়েছে সম্মান নিয়ে জীবিকা নির্বাহের নিশ্চয়তাও। হাটহাজারী আশ্রয়নের ২৬ পরিবারসহ মোট ৩৫০ জনকে সরকারী ত্রাণ দেয়া হয়। পাশাপাশি বাচ্চাদের জন্যে চকলেট, চিপস প্রদান করা হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, হাটহাজারী উপজেলার গুমানমর্দ্দন এলাকায় হালদার কিনার ধরে একটু হাঁটলেই হঠাৎ চোখে পড়বে লাল টুকটুকে এক জনবসতি। চারপাশের প্রকৃতি ও নাগরিক সকল সুযোগ-সুবিধা বেষ্টিত মনোরম পরিবেশ দেখে কৌতূহলী পথিক আরেকটু হেঁটে কাছে গেলে দেখতে পাবেন ছোট বড় শিশুদের কলকাকলিতে মুখরিত সারি সারি ঘর। হয়তো দেখতে পাবেন তৃপ্তির হাসি নিয়ে বারান্দায় বসে গল্প করছেন কোন বৃদ্ধা মা কিংবা তজবী পাঠ করছেন কোন বৃদ্ধ বাবা। মধ্যবয়সী কোন গৃহিণীকে দেখা যেতে পারে শীতল পাটি কিংবা জাল বুনতে। জীবিকার উদ্দেশ্যে হয়তোবা কেউ সুনিপুণ দক্ষতায় তৈরি করছেন হাতের তৈরি কোন বস্তু এ সমস্ত আয়োজনের মধ্য দিয়ে যে পরিকল্পিত বসতি আপনার চোখের সামনে পাবেন সেটি আসলে একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন-ছিন্নমূল, ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের আশ্রয়ণ প্রকল্প।
দেশের সকল আশ্রয়হীন মানুষের জন্য স্থায়ী আবাস গড়ে দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারই ধারাবাহিকতায় মুজিববর্ষকে সামনে রেখে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পকে বেগবান করা হয়। দ্রæততম সময়ে সকল গৃহহীনকে ঘর দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নেতৃত্বে কাজ শুরু করে দেশের সকল জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন। জেলা পর্যায়ের টাস্কফোর্স কমিটির মাধ্যমে জেলা প্রশাসকগণ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্তৃক গৃহীত নীতিমালার আলোকে উপজেলা পর্যায়ের করণীয় নির্ধারণ করে দেন। উপকারভোগী নির্বাচন ও খাস জমি চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে পুরোদমে কাজ শুরু হয় মুজিববর্ষের প্রথম থেকেই। সুনির্দিষ্ট ডিজাইন অনুসরণ করে দুই কক্ষ বিশিষ্ট ঘরে অন্তর্ভুক্ত করা হয় সম্মুখ বারান্দা, রান্নাঘর ও টয়লেট। মাঠ প্রশাসনের দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও আন্তরিকতায় চলতি ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারী সারাদেশে মোট ৬৯ হাজার ৯০৪ টি পরিবারকে ঘর দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০ জুন ঘর দেয়া হয় মোট ৫৩ হাজারেরও বেশি পরিবারকে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে এ কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সীমাহীন পরিশ্রমের পাশাপাশি জীবনের ঝুঁকিও নিতে হয়েছে কোন কোন ক্ষেত্রে। সরকারি খাস জমি উদ্ধার ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে অনেক কর্মকর্তাই বিভিন্ন চ্যলেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন কিন্তু মাননীয় প্রধানমত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসন পিছ পা হয় নি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এই শ্লোগানের তাৎপর্যকে ধারণ করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের কাজ শুরু করে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান উপজেলা ভিত্তিক বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যাকে চিহ্নিত করে প্রতিটি বিষয়ে আলাদাভাবে নজর দেন। জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাকে পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্ত করেন। বিশেষত পুরো জেলাকে কয়েকটি ক্লাস্টারে ভাগ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণকে দায়িত্ব দেয়া হয়। নানাবিধ চ্যালঞ্জ মোকাবেলা করে দুই পর্যায়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন মোট ২ হাজার ২১৬ টি গৃহ নির্মাণ করেন ও হস্তান্তর করেন।
উপজেলা পর্যায়ে হাটহাজারীতে প্রথম পর্যায়ের ১৫ টি, দ্বিতীয় পর্যায়ের ১০ টি ও বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস কর্তৃক ১ টি সহ মোট ২৬ টি গৃহ নির্মাণ করা হয় গুমানমর্দ্দন ইউনিয়নে। ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় নিকটবর্তী এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০০ মিটার এলাকার মধ্যে রয়েছে বিদ্যালয়, মাদরাসা, মসজিদ, মন্দির ও বাজার। উপজেলার সাথে যোগাযোগের প্রধান সড়কটি মাত্র ১০০ মিটারের মধ্যেই রয়েছে। নাগরিক সুযোগ সুবিধার সাথে সম্পর্কিত সকল সরকারি বিভাগ একসাথে এই প্রকল্পটিতে কাজ করছে। বিদ্যুৎ ও পানির সুবিধার আওতায় আনা হয় পুরো আবাসস্থলকে। এছাড়া ২৬ টি পরিবারের জন্য ইতোমধ্যেই একটি পুকুর খনন করে মাছের পোনা ছাড়া হয়েছে, উদ্যোগ নেয়া হয়েছে নানাবিধ ফলের গাছ লাগানোর।উপকারভোগীদের কেউ কেউ হস্তশিল্পে পারদর্শী। তাই তাদের হাতের তৈরি বিভিন্ন পণ্য বাজারজাতকরণে মহিলা বিষয়ক অফিস ও যুব উন্নয়ন অফিসের মাধ্যমে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।####

Related Posts