সিনিউজ ডেস্ক
পরীমনি লাইভ এলে তার ভক্তরা মনে করেন, অন্যদিনের মতোই হয়তো নতুন কোনো সিনেমার সংবাদ বা আনন্দের খরব দেবেন। কিন্তু আজ বুধবার বিকাল ৪টার দিকে তিনি যখন লাইভে এলেন তখন দেখা গেল বিষয়টি ভিন্ন। নায়িকা সুলভ আচরণের পরিবর্তে সেখানে দেখা যায় তার উৎকণ্ঠা আর ভয় মিশ্রিত চেহারা।
লাইভে তিনি বনানী থানা ও প্রশাসনের সাহায্য চান। তার বাসায় একদল মানুষ এসেছে এবং তারা পরিচয় দিচ্ছেন না উল্লেখ করে তিনি লাইভে বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে তারা ডাকাত।’
৩১ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের লাইভের শুরুর দিকে তিনি বলেন, ‘আমি ডিবি অফিসে ফোন করলাম হারুন ভাইকে। হারুন ভাই বলল যে “তোমার দরজা খোলার দরকার নাই, আমাদের এখান থেকে কোনো টিম যায় নাই। আমরা আসছি, আমরা দেখছি।”‘
তার এই লাইভ চলাকালেই গণমাধ্যমকর্মীরা ভিড় জমাতে থাকেন বনানীতে পরীমনির বাসার সামনে।
বিকেল ৪টার দিকে সাদা পোশাকে থাকা র্যাব সদস্যরা পরীমনির বাসায় ঢোকার চেষ্টা করেন। লাইভে পরীমনি জানান, পরিচয় নিশ্চিত হতে না পারায় তিনি বাসার দরজা খুলছেন না।
বাসার নিচে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর সাড়ে ৪টার দিকে তিনি দরজা খুলে দেন।
লাইভের শেষের দিকে দেখা যায় পরীমনির বাসার ভেতরে ঢুকে র্যাব সদস্যরা তাকে বলছেন, ‘আপনি একটু আমাদের সহযোগিতা করুন। লাইভটা কেটে দেন।’
এর কিছুক্ষণ পর লাইভ বন্ধ করতে বাধ্য হন এই নায়িকা।
এর আগে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পরীমনির বাসায় অভিযান চালানো হচ্ছে।
সেখানে অভিযান চলাকালে র্যাবের পক্ষ থেকে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের ভেতরের কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি এবং ভেতরে যেতেও দেওয়া হয়নি কাউকে।
এর প্রায় দুই ঘণ্টা পর র্যাবের একটি মাইক্রোবাস এসে দাঁড়ায় পরীমনির বাসার নিচে। গণমাধ্যমকর্মীরা গাড়িটি ঘিরে ভিড় জমান। কারণ, এরই মধ্যে জানা গেছে পরীমনিকে আটক করা হয়েছে।
সবার ধারণা ছিল, এই গাড়িতে করেই নিয়ে যাওয়া হবে পরীমনিকে। কিন্তু গাড়িটিতে উঠানো হয় মাদকদ্রব্য।
র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল খায়রুল ইসলাম জানান, পরীমনির বাসা থেকে বেশ কিছু মাদক পাওয়া গেছে। এসব মাদক তার বাড়িতে শোকেস, কেবিনেট ও সাইড টেবিলের ভেতরে রাখা ছিল। তার বাসা থেকে আইস, এলএসডি ও বিদেশি মদ জব্দ করা হয়েছে।
পরীমনির বাসার নিচ থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জব্দ করা মাদক নিয়ে গাড়িটি চলে যায়।
উপস্থিত অনেকেই বলছিলেন, হয়তো ভিন্ন কোনো পথে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পরীমনিকে।
তাদের এই শঙ্কা মিথ্যে হয় যখন রাত ৮টার দিকে একই রংয়ের আরেকটি মাইক্রোবাস আসে এবং ৮টা ১২ মিনিটে সেই গাড়িতে পরীমনিকে নিয়ে যাওয়া হয়।
বনানীর বাসা থেকে অশ্রুসিক্ত পরীমনিকে নিয়ে যাওয়া হয় র্যাব সদর দপ্তর।
এরপর গণমাধ্যমকর্মীদের অনেকেই পরীমনির বাসার ভেতরে যান।
সেখানে গুঞ্জন ওঠে, আজ রাতেই আটক করা হতে পারে রাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার নজরুল ইসলাম রাজকে। সেই গুঞ্জন সত্যি প্রমাণিত হয় রাত সাড়ে ৮টার দিকে। রাজকে ধরতে বনানীতে তার বাসায় অভিযান চালায় র্যাব।
গণমাধ্যমকর্মী ছাড়াও পরীমনির বাসার নিচে ভিড় করেছিলেন উৎসুক জনতা। বিশেষ করে, অফিসফেরত মানুষ ভিড় করেন সেখানে। এত মানুষের জটলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া কৌতূহল সেখানকার ভিড় বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ।
অল্প জায়গায় পুলিশ, র্যাব, গণমাধ্যমকর্মীদের পাশাপাশি উৎসুক মানুষের ভিড়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অসম্ভব হয়ে পরে। বনানী কমিউনিটির পক্ষ থেকে হ্যান্ডমাইকে বারবার ভিড় না করতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হচ্ছিল। পুলিশও উপস্থিত সবাইকে দূরত্ব বজায় রাখতে অনুরোধ করেছে বারবার।
মানুষের ভিড় দেখে বিকাল ৫টার দিক থেকেই সেখানে আসতে থাকেন বিভিন্ন পণ্যের ফেরিওয়ালারা। আইসক্রিম, ঝালমুড়ি, মাস্কসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসা বিক্রেতাদের বিক্রি জমে ওঠে।
পরীমনিকে নিয়ে যাওয়ার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই কমতে থাকে ভিড়। ঘরমুখি সেই ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন বলে ওঠেন, ‘এই সাধারণ বাড়ির ভেতরে এতকিছু হয়।’
সূত্রঃ দ্য ডেইলী স্টার