উপজেলা

বিমান বন্দরে পিসিআর মেশিন না থাকায় আমিরাত ফিরতে পারছেন না ২০ হাজার প্রবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষায় র‌্যাপিড পিসিআর মেশিন না থাকায় প্রায় ২০ হাজার আমিরাত প্রবাসী বাংলাদেশি দেশটিতে যেতে পারছেন না।

তাই ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দরে র‌্যাপিড পিসিআর মেশিন ও ল্যাব স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন প্রবাসীরা।

বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী পরিষদ চট্টগ্রাম বিভাগ।

সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের চট্টগ্রাম বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক ইয়াছিন চৌধুরী বলেন, আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে আটকে পড়া প্রবাসীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরতে পারবে। কিন্তু পিসিআর পরীক্ষার শর্তের জন্য যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

“আরব আমিরাত সরকারের নিয়মানুযায়ী যেখান থেকে যাত্রীরা বিমানে ফ্লাই করবেন, তার ৬ ঘণ্টা আগে অবশ্যই র‌্যাপিড পিসিআর টেস্ট করিয়ে নেগেটিভ সনদ নিয়ে সেখানে যেতে হবে। কিন্তু আমাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ১৭ দিন ধরে চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেটে আমরা কর্মসূচি পালন করেছি।”

ইয়াছিন বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় চিঠি দিলেও উদ্বৃত্ত পিসিআর মেশিন না থাকার বলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আবার বেবিচক বলছে, পিসিআর মেশিন বসানোর জন্য বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত জায়গা নেই।

“এভাবে মন্ত্রণালয়গুলো একে অপরের উপর দোষ চাপালে দেশে আটকে পড়া আমরা অসহায় প্রবাসীরা কোথায় যাব?” বলেন ইয়াছিন।

“আমাদের বলা হয় রেমিটেন্স যোদ্ধা। দিনরাত পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাই। আমাদের প্রশ্ন, আমরা কখন কর্মস্থলে ফিরে যাব?”

এই অনিশ্চয়তার অবসানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন প্রবাসীরা।

ইয়াছিন বলেন, “উগান্ডা, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল যদি এয়ারপোর্টে র‌্যাপিড পিসিআর মেশিন চালু করতে পারে, তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশে কেন তা সম্ভব হবে না?”

এক প্রশ্নের জবাবে ইয়াছিন জানান, সারাদেশে প্রায় ২০ হাজার এবং চট্টগ্রাম বিভাগে প্রায় ৮ হাজার আমিরাত প্রবাসী আটকা পড়েছেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলে গত ১২ মে থেকে আমিরাতের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিষদের সদস্য সচিব নেওয়াজ কবির বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকার কারণে অনেকের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।

ভিসার মেয়াদ বাড়াতে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আসা নগরীর মুরাদপুরের বাসিন্দা মো. ইউনুস আমিরাতের দুবাইতে ফল ও সবজির ব্যবসা করেন। ৯ মাস আগে দেশে এসেছিলেন ছুটি কাটাতে।

ইউনুস বলেন, দুই মাস আগে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আমিরাত সরকার ভিসার মেয়াদ ৩ মাস বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বলে জেনেছি।

“কিন্তু বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় যেতে পারিনি। এখন র‌্যাপিড পিসিআর মেশিন না থাকায় বিমানের টিকেটও করতে পারছি না। কিভাবে যাব?”

আবুধাবি প্রবাসী বোয়াখালীর ইকবাল হোসেন ৯ এপ্রিল দেশে এসেছিলেন ছুটি কাটাতে। সেখানে তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।

ইকবাল বলেন, “২০ মে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এখন বিমানবন্দরে পিসিআর মেশিন না থাকায় টিকেট করতে পারছি না।”

সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের সদস্য এস এম মহিউদ্দিন বেলাল রনি বলেন, “আমাদের আকুল আবেদন দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দরে র‌্যাপিড পিসিআর মেশিন স্থাপন করা হোক।”

এই দাবিতে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।

রনি বলেন, “সেখানে সারাদেশের আমিরাত প্রবাসীরা আসবেন। সেখান থেকে আমরা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে মিছিল নিয়ে যাব। সেখানে আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত অবস্থান চলবে। এরপরও যদি না হয় আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে আমরণ অনশন করতে বাধ্য হব।”

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মুছা, রেজাউল করিম, মোজাম্মেল হক, মো. হেলাল ও শাহীদা হামজা।

Related Posts