চট্টগ্রাম

সীতাকুণ্ড বিশ্বনাথ মন্দিরের দ্বারোদঘাটন উপলক্ষে ৮ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান ১৬ নভেম্বর শুরু

রতন কান্তি দেবাশীষ,চট্টগ্রাম
সীতাকুন্ড শঙ্করমঠের শতবর্ষপূর্তি, শ্রীশ্রীবিশ্বনাথ মন্দিরের দ্বারোদঘাটন, শ্রীশ্রীবিশ্বনাথ শিব প্রতিষ্ঠা ও রুদ্রাভিষেক, আচার্যপাদ পরমহংস শ্রীশ্রীমৎ স্বামী স্বরূপানন্দ গিরি মহারাজের ১৫০তম, যোগাচার্য পরমহংস শ্রীশ্রীমৎ স্বামী জ্যোতিশ্বরানন্দ গিরি মহারাজের ১১৩তম, শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজের ৬৬ তম শুভ আবির্ভাব দিবস ও অখÐ গীতা পাঠের ৪১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ৮ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান আগামী ১৬ নভেম্বর মঙ্গলবার থেকে মঠ প্রাঙ্গনে শুরু হচ্ছে। আগামী ২৩ নভেম্বর মঙ্গলবার অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটবে। প্রতিদিন গুরু পূজা, অখন্ড গীতাপাঠের ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ মনোহারিত্ব অনুষ্ঠান, শ্রীশ্রীবিশ্বশান্তি গীতাযজ্ঞ, মঙ্গলারতি, গুরু বন্দনা, হরি ওঁ কীর্ত্তন, শ্রীশ্রী চÐীপাঠ, গৈরিক ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, মঙ্গল প্রদীপ প্রজ¦লন, অখÐ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও সনাতন ধর্ম মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন দুপুর ও রাতে প্রসাদ বিতরণসহ সন্ধ্যায় ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। অনুষ্ঠান সুন্দর ও সফলভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতিদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত রাষ্ট্রীয় অতিথিবৃন্দরা উপস্থিত থাকবেন। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস. রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব পাঠ করেন শঙ্করমঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ ও শতবর্ষপূর্তি উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদেও সহ-সভাপতি সাংবাদিক প্রদীপ শীল, শঙ্করমঠ ও মিশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর কেশব কুমার চৌধুরী, সহ-সভাপতি অধ্যাপক তড়িৎ কুমার ভট্টাচার্য, সহ-সভাপতি রনধীর ঘোষ রায়, যুগ্ম সম্পাদক বাসুদেব দাশ, অর্থ সম্পাদক সমীর কান্তি পাল, শঙ্করমঠ ও মিশন মহানগর কমিটির যুগ্ম সম্পাদক অজিত কুমার শীল ও প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক সাংবাদিক রনজিত কুমার শীল।
সংবাদ সম্মেলনে অনুষ্ঠিতব্য কর্মসূচী তুলে ধরে শঙ্করমঠ ও মিশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর কেশব কুমার চৌধুরী বলেন, আগামী ১৬ নভেম্বর মঙ্গলবার ব্রাহ্মমুহূর্তে ধর্মীয় আবহে জাতীয় ও গৈরিক পতাকা উত্তোলন, বিকেল ৪টায় বেলুন ও শান্তির কপোত অবমুক্তকরণের মাধ্যমে ৮ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করবেন শঙ্করমঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ ও শতবর্ষপূর্তি উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ। মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করবেন ঢাকাস্থ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দজী মহারাজ ও অখÐ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করবেন আমেরিকার কলরেডো নিবাসী শ্রীমৎ পরমানন্দ সরস্বতী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার শ্রী অনিন্দ্য ব্যানার্জী। প্রধান ধর্মীয় আলোচক থাকবেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত ও মূখ্য আলোচক থাকবেন বিশিষ্ট দানবীর ও সমাজসেবক লায়ন অদুল চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন ১৭ নভেম্বর বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় শঙ্করমঠের স্থপতি শ্রীশ্রীমৎ স্বামী স্বরূপানন্দ গিরি মহারাজের ১৫০ তম শুভ আবির্ভাব দিবস উপলক্ষে শ্রীশ্রী বিশ্বনাথ মন্দিরের দ্বারোদঘাটন করবেন শঙ্করমঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ। ঐদিন দুপুর আড়াইটায় অনুষ্ঠিতব্য ধর্ম মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাকাস্থ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দজী মহারাজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মঠের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ।
অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিন ১৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার অখÐ গীতাপাঠের ৪১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ৯টায় শতকণ্ঠে গীতাপাঠ ও সকাল ১১টায় শ্রীমদ্ভগবদ গীতা বিষয়ক প্রতিযোগিতা। ঐদিন বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিতব্য ধর্ম মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার প্রফেসর ড. গণেশ রায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মঠের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ।
অনুষ্ঠানের চতুর্থ দিন ১৯ নভেম্বর শুক্রবার সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিতব্য মাতৃসম্মেলনের শুভ উদ্বোধন করবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. তাপসী ঘোষ রায়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার শ্রী অনিন্দ্য ব্যানার্জীর সহধর্মিনী শ্রীমতি রুনা ব্যানার্জী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মঠের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ।
অনুষ্ঠানের পঞ্চম দিন ২০ নভেম্বর শনিবার বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিতব্য যুব সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মঠের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ। অনুষ্ঠানের ষষ্ঠদিন ২১ নভেম্বর রোববার সকাল ১০টায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দের পরিচালনায় চক্ষু শিবির ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম, দুপুর ১টায় সাধু ভান্ডারা ও বিকেল ৩টায় সাধু-সন্তদের সমন্বয়ে ধর্মীয় আলোচনা সভা। এছাড়া সন্ধ্যা ৬টায় শ্রীশ্রীগঙ্গা মায়ের পূজা, সন্ধ্যা ৭টায় দুস্থদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ ও রাত ৯টায় ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে।
অনুষ্ঠানের সপ্তম দিন ২২ নভেম্বর সোমবার শঙ্করমঠ ও মিশনের চতুর্থ আচার্য গীতাপ্রজ্ঞাতীর্থ পরমহংস শ্রীশ্রীমৎ স্বামী জ্যোতিশ্বরানন্দ গিরি মহারাজের ১১৩ তম শুভ আবির্ভাব দিবস উদযাপন উপলক্ষে ব্রাহ্মমুহূর্তে মঙ্গলারতি, গুরু বন্দনা, সকাল সাড়ে ৬টায় পবিত্র বেদ পাঠ, সকাল ৭টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে শ্রীশ্রী স্বয়ম্ভুনাথ মন্দির পরিক্রমা, সকাল ৮টায় শ্রীশ্রীচÐী পাঠ, সকাল ৯টায় শ্রীশ্রী বাবামনির বিশেষ পূজা, সকাল সাড়ে ১০টায় শ্রীশ্রীবিশ্বশান্তি গীতাযজ্ঞ ও বিকেল ৩টায় ধর্ম মহাসম্মেলন। উক্ত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত রাষ্ট্রীয় অতিথিবৃন্দরা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া সন্ধ্যা ৬টায় বিশেষ প্রার্থনা, সন্ধ্যা ৭টায় দুস্থদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ, রাত ৮টায় গীতিআলেখ্য ও সঙ্গীতাঞ্জলি এবং রাত ১১টায় কবিগানের আসর।
অনুষ্ঠানে শেষ দিন ২৩ নভেম্বর মঙ্গলবার শঙ্করমঠ ও মিশনের পূজনীয় অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজের ৬৬তম আবির্ভাব উৎসব উদযাপন উপলক্ষে সকাল ৯টায় বিশেষ গুরুপূজা ও দুপুর আড়াইটায় ধর্মীয় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সভার উদ্বোধন করবেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অন্যতম পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দরা আলোচনায় অংশ নেবেন।

শঙ্করমঠ ও মিশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর কেশব কুমার চৌধুরী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে পালিত হতে যাচ্ছে মঠের শতবর্ষপূর্তি উৎসব ও উদ্বোধন হতে যাচ্ছে শ্রীশ্রীবিশ্বনাথ মন্দির। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যে দিয়ে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার আদর্শ ও দর্শনে এবং অবকাঠামোগতভাবে শঙ্করমঠ আজ শতবর্ষ অতিক্রম করছে। শতবর্ষের শ্রেষ্ঠ অধ্যাত্ম চেতনাসমৃদ্ধ উপহার হিসেবে শঙ্করমঠ ও মিশনের সাথে শ্রীশ্রীবিশ্বনাথ মন্দিরকে সংযোজন করেছেন মঠের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ। যারা বিভিন্ন কারণে ভারতের কাশীতে গিয়ে শ্রীশ্রীবিশ্বনাথ মন্দি দর্শনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে তারাই সীতাকুÐস্থ শঙ্করমঠে প্রতিষ্ঠিত শ্রীশ্রীবিশ্বনাথ মন্দির দর্শনে জীবনকে ধন্য করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, সনাতন ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ বেদ উপরিষদের সারাৎসার শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার সার্বজনীন সমন্বয়ে আদর্শ ও দর্শনে ওঁকার তত্তে¡র চেতনায় শ্রীশ্রীমৎ স্বামী ব্রহ্মানন্দ গিরি মহারাজের নির্দেশনায় তৎ শিষ্য শ্রশ্রিীমৎ স্বামী স্বরূপানন্দ গিরি মহারাজ জাতীয় তীর্থক্ষেত্র সীতাকুÐের চন্দ্রনাথ ধামস্থ ব্যাসকুÐের পশ্চিম পাশে অনুচ্চ শৈল শীর্ষে ১৯২১ সালে শঙ্করমঠ প্রতিষ্ঠা করেন। তৎ শিষ্য গীতাহিমাদ্রি শ্রীশ্রীমৎ স্বামী জ্যোতিশ্বরানন্দ গিরি মহারাজ শঙ্করমঠের সাথে মিশন যুক্ত করে শঙ্করমঠ ও মিশনকে পৃথিবীব্যাপী বিকশিত করে তোলেন। সন্যাসী ও ব্রহ্মচারী সৃষ্টির কেন্দ্র হিসেবে শঙ্করমঠ আজ বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করেছে। সনাতন ধর্মের আকর গ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার আদর্শ ও দর্শন প্রচার-প্রসারে শ্রীশ্রীমৎ স্বামী জ্যোতিশ্বরানন্দ গিরি মহারাজ শহর, বন্দর, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে গীতা সংঘ, গীতা স্কুল, গীতাযজ্ঞ ও গীতা শিক্ষার উপর সভা-সেমিনারের মাধ্যমে পবিত্র শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাকে মানবধর্মের অন্যতম পাঠে রূপান্তরিত করেন। তিনি শঙ্করমঠে প্রতিষ্ঠা করেন সংস্কৃত কলেজ, অনাথ আশ্রম, বৃদ্ধাশ্রম, গীতা শিক্ষা কেন্দ্র, আধ্যাত্মিক যোগ কেন্দ্র, দাতব্য চিকিৎসালয় গো-পালন কেন্দ্র, এবং জাতীয় বৃক্ষ, ঔষধি বৃক্ষ ও নানান রকম ফুলের সমাহারে সৃজন করেন বিশাল বনায়ন। বনায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম পুরস্কার গ্রহণ করেন শঙ্করমঠের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ। ####

Related Posts