নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম নগরীর প্রবেশদ্বার বাকলিয়ার শাহ আমানত সেতু গোলচত্ত¡র বা কর্ণফুলী নতুন ব্রীজ এলাকা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মহানগরী ও জেলা থেকে প্রতিদিন চট্টগ্রাম হয়ে অসংখ্য প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, গণ ও পণ্য পরিবহণ শাহ আমানত সেতু হয়ে পর্যটন এলাকা কক্সবাজার ও বান্দরবানে যাতায়াত করে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ছোট-বড় গাড়ি এখানে যাত্রী উঠা-নামা করে। গত অক্টোবর মাসে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক-দক্ষিণ বিভাগে টিআই-বাকলিয়া হিসেবে একেএম আসাদুজ্জামান (২০১০ ব্যাচ) যোগদান করার পর থেকে জনগুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় বর্তমানে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় প্রতিনিয়ত হ-য-ব-র-ল অবস্থা দৃশ্যমান। শাহ আমানত সেতু গোলচত্ত¡র এলাকায় যানবাহন চলাচলে কোন শৃঙ্খলা নেই। এখানে ফিটনেসবিহীন বাস, ডাম ট্রাক, ট্রাক ও রুট পারমিটবিহীন ম্যাক্সিমা ও গ্রাম সিএনজি অটোরিক্সা দাপটের সাথে চলাচল করলে ও অদৃশ্য কারণে নীরব রয়েছে টিআই আসাদ। একদিকে রহস্যজনক কারণে নতুন ব্রীজের চতুর্পাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে বাস, টেক্সি, লেগুনা, ম্যাক্সিমা, রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি অটোরিক্সার ও ব্যাটারী রিক্সার অবৈধ স্ট্যান্ড, অপরদিকে মূল সড়কের দু’পাশ ঘিরে রয়েছে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং। এ কারণে প্রতিনিয়ত দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়ে যাত্রী সাধারণ নির্দিষ্ট সময়ে তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারেনা। ডাম ট্রাকসহ ফিটনেসবিহীন, মেয়াদোর্ত্তীণ ও রুট পারমিটবিহীন বিভিন্ন যানবাহন শাহ আমানত সেতু এলাকা দিয়ে বেপরোয়াভাবে চলাচল করলেও টিআই একেএম আসাদুজ্জামান থাকেন নীরব ভূমিকায়। মাঝে মাঝে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপে পড়ে টিআই কিছু কিছু গাড়ি আটক বা মামলা করলেও রহস্যজনক কারণে এখানে বেপরায়াভাবে চলাচল করে অধিকাংশ ফিটনেসবিহীন গাড়ি। কথিত পরিবহণ চালক সংগঠনের মাধ্যমে ফিটনেস ও রুট পারমিটবিহীন গাড়ি ও অন্যান্য গাড়ির অবৈধ স্ট্যান্ড থেকে টিআই একেএম আসাদুজ্জামান মাসোহারা পায় বলে অভিযোগ উঠেছে।
৪ ডিসেম্বর বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বাকলিয়ার শাহ আমানত সেতু গোলচত্ত্বর বা কর্ণফুলী নতুন ব্রীজ এলাকার চর্তুদিক ঘিরে যাত্রীর উঠা-নামার জন্য গণপরিবহণগুলো সড়কের মাঝখানে এলোমেলোভাে দীর্ঘক্ষণ দাড়িঁয়ে থাকে। এখান থেকে চরম ঝুঁকি নিয়ে বেপরোয়াভাবে ফিটনেসবিহীন ও রুট পারমিটবিহীন গাড়িগুলো চলাচল করলেও কোন ধরণের আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে টিআই থাকে নীরব দর্শকের ভূমিকায়। এখানে নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা নেই। মূল সড়কে গাড়ি ইচ্ছেমত দাঁড় করিয়ে রেখে যানজট সৃষ্টি করে।
জানা গেছে, বাকলিয়া এলাকায় যে সকল ড্রাম ট্রাক চলাচল করে সেগুলোর অধিকাংশরই ডকুমেন্ট নেই। সড়কের উভয় দিকে গাড়ির অবৈধ স্ট্যান্ড ও পার্কিং। কারও কথা কেউ শুনে না। এখানে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কোন শৃঙ্খলা চোখে পড়ে না। সেখানে দায়িত্বরত কোন সার্জেন্ট অবৈধ বা ফিটনেসবিহীন লক্করঝক্কর গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইলে রহস্যজনক কারণে টিআই’র রোষানলে পড়তে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ট্রাফিক-দক্ষিণ বিভাগের বাকলিয়া বক্সে দায়িত্বরত টিআই একেএম আসাদুজ্জামানের সাথে কথিত পরিবহণ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের দহরম মহরম রয়েছে।
ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া, অবৈধ গাড়ি চলাচল, সিএনজি অটো রিক্সাসহ অন্যান্য গাড়ির অবৈধ স্ট্যান্ড থেকে মাসোহারা আদায়, ফিটনেসবিহীন ও রুট পারমিটবিহীন গাড়ি চলাচলে সহায়তা এবং এলাকায় নিত্য যানজট বিষয়ে সিএমপি’র ট্রাফিক-দক্ষিণ বিভাগের টিআই-বাকলিয়া একেএম আসাদুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়িসহ ডকুমেন্ট মেয়াদোত্তীর্ণ ও রুট পারমিটবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কর্ণফুলী নতুন ব্রীজ এলাকায় একদিনে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়। প্রতিদিন এখান থেকে কিছু অবৈধ গাড়ি অন্যান্য স্থানে যাতায়াত করলেও টিআই কর্তৃক মাসোহারা আদায়ের বিষয়টি সঠিক নয়। বাকলিয়া এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার না করতে টিআই একেএম আসাদুজ্জামান তার পরিচিত এক গণমাধ্যমকর্মী দিয়ে এ প্রতিবেদককে ফোনে অনুরোধ করিয়েছেন।
এ বিষয়ে মোবাইলে জানতে চাইলে ট্রাফিক-দক্ষিণ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান, পিপিএম জানান, শুধু নতুন ব্রীজ এলাকা নয়, অধীনস্থ সড়কগুলোতে ফিটনেসবিহীন, মেয়াদোর্ত্তীণ ও রুট পারমিটবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ৫/৭টি পরিবহণের বাস কর্ণফুলী নতুন ব্রীজ এলাকায় এসে যাত্রী উঠা-নামা করার সময় অযথা সড়কে দাড়িঁয়ে থাকলে রং পার্কিংয়ের মামলা দেয়া হয়। আমি নিজেও নতুন ব্রীজ এলাকায় ডাম ট্রাক, ফিটনেসবিহীন গাড়িসহ অন্যান্য অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা নিয়েছি।
ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি কোন টিআই ও সার্জেন্ট দায়িত্ব পালনকালে সড়কে চলাচলকারী ফিটনেসবিহীন গাড়ি আটক না করে তাহলে আমরা মোবাইল টিম দিয়ে অভিযান চালাবো। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। গত ৫ আগস্ট পরবর্তী অসংখ্য অবৈধ ব্যাটারী রিক্সা ভাড়ায় চলাচলের উদ্দেশ্যে শহরে প্রবেশ করেছে। সকল অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। কোন টিআই বা সার্জেন্ট অবৈধ গাড়ি আটকে গড়িমসি করতে পারবেনা বলে জানান সিএমপি’র দক্ষিণ বিভাগের ডিসি-ট্রাফিক মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান। ###