চট্টগ্রাম ব্যবসা

কাঁচা মাল সংকট,এস আলম গ্রুপের ছয় কারখানা বন্ধ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আলোচিত শিল্পগ্রুপ এস আলমের ছয়টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পূর্ব ঘোষণা ছাড়া কোম্পানিটির এমন সিদ্ধান্তে বেকার হয়ে পড়েছেন প্রায় ১২ হাজার মানুষ। মঙ্গলবার সকালে এস আলমের মানব সম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিনের স্বাক্ষরে এসব কারখানা বন্ধের বিষয়ে নোটিশ দেয়া হয়। নোটিশে কারখানা খোলার তারিখ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলো হলো- এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, এস আলম পাওয়ার প্লান্ট লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড-নফ, এস আলম পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড ও ইনফিনিটি সি আর স্ট্রিপস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এগুলো চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার কালারপুল, ইছানগর ও বাঁশখালীর গণ্ডামারায় অবস্থিত। নোটিশে বলা হয়, ‘সকল শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে অনিবার্যকারণবশত আগামী ২৫শে ডিসেম্বর হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কারখানা বন্ধ থাকবে। তবে, নিরাপত্তা বিভাগ, ডেলিভারি সেকশন ও জরুরি বিভাগ (ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক) খোলা থাকবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা জানান, এস আলম গ্রুপের ওই ছয় কারখানায় নিয়োগপ্রাপ্ত এবং ক্যাজুয়াল মিলে ১২ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিক রয়েছেন। হঠাৎ কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন সবাই। এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ডিজিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা নোটিশ পেয়েছি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে। এদিকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেছে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড’ ও এস আলম পাওয়ার প্লান্ট লিমিটেডের শ্রমিক-কর্মকর্তারা। এ সময় কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা। বিক্ষুব্ধরা জানান, কোনো নোটিশ বা ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ করে দুপুর বেলায় অফিস কর্তৃপক্ষ এসে আগামীকাল থেকে কারখানার সকল ধরনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন। কর্তৃপক্ষের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত আমরা কেউই মানতে পারছি না। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।
তবে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের উৎপাদন ব্যবস্থাপক নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের কারখানায় সবকিছু স্বাভাবিক চললেও আকস্মিক ছুটির নোটিশ দেওয়া হলো। কোন কারণে সাধারণ ছুটি দিয়ে দিল, জানি না। আমরা এ পরিস্থিতিতে আকাশ থেকে পড়লাম।’
এস আলম গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ের দুই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, ব্যাংকের সহযোগিতা না পাওয়ায় কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। কাঁচামাল আমদানি করা না গেলে কারখানা চালু করার সুযোগ নেই। এ জন্য সাময়িকভাবে কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। এ ছয়টি কারখানায় অন্তত ১২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতেন বলে তাঁরা জানান।
এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ২০১৭ সালে গ্রুপটি ইসলামী ব্যাংক দখল করে নেয়। এরপর আরও একাধিক ব্যাংক ও বিমা দখল করে নামে-বেনামে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেয় গ্রুপটি। পাশাপাশি গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামেও ঋণ অনুমোদন করা হয়।
এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো হলো ন্যাশনাল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব ব্যাংককে এস আলম–মুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় কয়েকটি ব্যাংক দখল করার পর ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তাঁর সহযোগীরা ‘অন্তত’ ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ‘বের করে নিয়েছেন’।

Related Posts