নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিএনজি অটোরিকশা ভাঙ্গছে বিআরটিএ। এসব অটোরিকশা ভাঙ্গতে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। ভাঙ্গার বিনিময়ে কোন প্রকার টাকা নেয়ার নিয়ম নাই। কিন্তু মানা হচ্ছে না এ নিয়ম। এনিয়ে বিআরটিএতে লেনদেন হয়েছে অন্তত শত কোটি টাকা। ইঞ্জিন ও চেচিস নম্বরে ত্রুটির অজুহাত দেখিয়ে কৌশলে এই অটোরিকশা ভাঙা বাবদ নেওয়া হচ্ছে কমপক্ষে ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত। ভুক্তভোগী লোকজনের অভিযোগ, দালাল ও পরিবেশকদের মাধ্যমে নেওয়া এই টাকার একটি অংশ পান বিআরটিএর কর্মকর্তারাও।
চট্টগ্রামে আয়ুষ্কাল শেষ হওয়া অটোরিকশা ভাঙা শুরু হয় ২০১৮ সাল থেকে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে দুই দফায় ভাঙা হয় সাড়ে ৭ হাজার গাড়ি। এরপর গত নভেম্বর এবং সর্বশেষ গত ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি ভাঙা হয় আরও সাড়ে ৪ হাজার গাড়ি। গাড়িপ্রতি গড়ে ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা করে নেওয়া হলে মোট ১২ হাজার গাড়ি ভাঙায় লেনদেন হয়েছে শত কোটি টাকা।
কেন এত টাকা দিয়ে ভাঙতে হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ অটোরিকশা? এ নিয়ে কথা হয় গাড়ির মালিক, চালক ও বিআরটিএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তে ২০০৫ সাল থেকে ভাড়ায় চালিত অটোরিকশার নতুন নম্বর দেওয়া বন্ধ। তবে গাড়ি মেয়াদোত্তীর্ণ হলে তার বিপরীতে নতুন নম্বর বা নতুন অটোরিকশা নামানোর অনুমতি পাওয়া যায়। বিশেষ করে শহরে চলাচলের জন্য পাওয়া নম্বরের (মেট্রো) গাড়ির কদর বেশি। নম্বরসহ একটি মেট্রোপলিটন এলাকায় চলার অনুমতি পাওয়া একটি সিএনজি অটোরিকশার বর্তমান বাজারদর ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা।
সরকার পরিবেশদূষণ রোধে টু স্ট্রোক অটোরিকশা তুলে দিয়ে ২০০৩ সাল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে পরিবেশ সহায়ক ১৩ হাজার করে ২৬ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশার নিবন্ধন দেয়। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি ভেঙে প্রত্যেক মালিককে প্রতিস্থাপন পদ্ধতিতে নতুন অটোরিকশা দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে।
বিআরটিএ চট্টগ্রামের উপপরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন,গাড়ি ভাঙতে কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না। কেউ টাকা দিয়ে থাকলে, কিংবা কোনো অভিযোগ থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
এখানে সব স্বাভাবিক নিয়মে হলেও এসব গাড়ির মালিক মৌখিক চুক্তিতে টাকা দিয়ে তবেই ভাঙতে এনেছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। বিআরটিএর কার্যালয়ের সামনে কথা হয় ভাঙতে আনা একটি অটোরিকশার মালিক হানিফ মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে গত ১৮ নভেম্বর তিনি গাড়ি ভাঙতে নিয়ে আসেন। ভেতরে ঢোকার পর কর্মকর্তারা দেখে বলেন, এটির ইঞ্জিন নম্বরে ঘষামাজা রয়েছ, স্পষ্ট নয়। ফিরিয়ে দেওয়া হয় গাড়িটি। পরে তিনি ৬০ হাজার টাকায় এক পরিবেশকের সাথে চুক্তি করেন। এরপর তার অটোরিকশাটি ভাঙ্গা হয়।
নিয়ম অনুযায়ী, ভাঙার পর অটোরিকশাটি মালিক নিয়ে যাবেন। স্ক্র্যাপ (ভাঙারি) হিসেবে প্রতিটি বিক্রি হয় ৮ হাজার টাকায়। কিন্তু নগর যুবলীগের সদস্য তৌফিক আহমেদ চৌধুরীর অনুসারীরা প্রতিটি ভাঙারি অটোরিকশা ৮০০ টাকায় তাঁদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ আছে। তৌফিক আহমেদ দাবি করেন, এর সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এদিকে বিআরটিএর তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে গত বছরের ৩০ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ দেন পাহাড়তলী এলাকার নুরুল ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী। সেখানে বলা হয়, তার চারটি সিএনজি অটোরিকশা ভাঙার জন্য গত ১৭, ২৬ ও ২৭ নভেম্বর বিআরটিএর চট্টগ্রাম কার্যালয়ে নিয়ে যান। প্রতিটিতে নানা সমস্যা রয়েছে দাবি করে কর্মকর্তারা ভাঙার জন্য ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় তাঁর গাড়িগুলো ফেরত দেওয়া হয়। অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান দুদক চট্টগ্রামের পরিচালক মাহমুদ হাসান।
প্রথম আলো