নিজস্ব প্রতিবেদক
দায়িত্বে অহেলা করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে হুঁশিযারি দিয়েছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমার ১০০ দিনের অগ্রাধিকার দেওয়া কর্মসূচি নিয়ে কাজ শুরু করবো। কর্মসূচির মধ্যে থাকবে নগরকে মশামুক্ত করা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ও ভাঙা রাস্তা-ঘাট মেরামত করা।
যারা আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করবেন, তাদের আমি সব ধরনের সহায়তা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। আর যদি কেউ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন, তাহলে কোনো ছাড় নেই।
কারণ চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ নিয়ে নগরবাসীর অভিযোগ বেশি। কাজেই এ অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করতে আন্তরিকভাবে কাজ করবেন এটাই প্রত্যাশা।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোর্শেদুল আলম চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন চসিকের আঞ্চলিক কার্যালয় জোন-৬ এর নির্বাহী কর্মকর্তা আফিয়া আকতার, মেয়রের একান্ত সচিব মো. আবুল হাশেম প্রমুখ।
মেয়র বলেন, অতীতে কী হয়েছে, কী হয়নি এটা আমার কাছে বিবেচ্য নয়। এখন থেকে আপনারা শতভাগ আন্তরিক হয়ে কাজ করবেন এটা আমার প্রত্যাশা।
মেয়র থাকাকালে তাকে দিয়ে কোনো ধরনের অনৈতিক কার্যক্রম কেউ করাতে পারবে না বলে উল্লেখ করে পরিচ্ছন্ন সুপারভাইজার ও কর্মকর্তাদের দৃঢ় মনোবল, সাহস নিয়ে কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, নবনির্বাচিত মেয়রের নির্বাচনী ইশতেহার এখন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ইশতেহার। এ ইশতেহারের ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদে নগরকে মশামুক্ত করতে পরিবেশবান্ধব কীটনাশক ছিটানো, পুকুর, ডোবা, খাল-নালা, জলাশয় পরিষ্কারের কথা উল্লেখ আছে। নবনির্বাচিত মেয়রের নির্দেশে এখন থেকে এ কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ শুরু করুন। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে মশা নিধনে কীটনাশকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ১০ দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে।
তিনি বলেন, কোনো কাজ ছোট না। কাজেই বেতন নেবেন কাজ করবেন না এটা হতে পারে না।
আয় থাকলে পৌরকর দিতে হবে
মেয়র নগরের বিত্তশালীদের উদ্দেশে বলেছেন, আপনারা শহরে বাস করবেন, বহুতল ভবন বানিয়ে ভাড়া দেবেন অথচ পৌরকর চাইতে গেলে দেবেন না এ কেমন মানসিকতা! দেশে কোনো ব্যক্তি আইনের ঊর্ধ্বে নন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কোন ধরনের পৌরকর বাড়ায়নি। আগের রেইটে কর আদায় করছে। শুধু করের আওতা বেড়েছে। অর্থ্যাৎ কোনো ভবন একতলা থেকে যদি পাঁচতলা হয় তবে সেক্ষেত্রে ফ্ল্যাট ভাড়া দিলে ওই বর্ধিত আয়ের কারণে করের আওতা বাড়বে।
বুধবার টাইগারপাসে চসিক সম্মেলন কক্ষে কর বিভাগের কর কর্মকর্তা ও উপ-কর কর্মকর্তাদের সভায় একথা বলেন।
প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল আলমের সভাপতিত্বে এতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজস্ব কর্মকর্তা শাহেদা ফাতেমা চৌধুরী, মেয়রের একান্ত সচিব মো. আবুল হাসেম প্রমুখ।
সভায় রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল আলম ১ লাখ ৯৭ হাজার হোল্ডিয়ের বিপরীতে ৮টি সার্কেলে মোট ১৬ জন কর কর্মকর্তা ৫৫ জন লাইসেন্স ইন্সপেক্টর কর্মরত আছে বলে মেয়রকে অবহতি করেন।
তিনি জানান, ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৬টি ওয়ার্ডের ১৪ শতাংশ ও বাকি ২৫টি ওয়ার্ডে ১৭ শতাংশ হারে পৌরকর আদায় হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালে কর পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের কাছ থেকে ১৬০ কোটি টাকা দাবির প্রেক্ষিতে ৩৯ কোটি, রেল কর্তৃপক্ষের কাছে ৭৫ কোটি টাকা দাবির প্রেক্ষিতে ৩৬ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। আর কর্ণফুলী মার্কেটে ৪ কোটি ৫ লাখ টাকা, এশিয়ান কটন মিলে ২৫ লাখ টাকা এখনো বকেয়া আছে।
প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পৌর কর আদায়ে নতুন মেয়রের সহযোগিতা ও পদক্ষেপের পাশাপাশি ট্রেড লাইসেন্সের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উৎসে কর, আয়কর, ভ্যাট আদায়ের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করে সমাধানের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেন। ট্রেড লাইসেন্সের সমস্যাটা হলো যেমন লাইসেন্স ফি ৫০০ টাকা হলে এর জন্য গ্রাহককে আয়কর দিতে হয় ৩০০ টাকা, ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আসে ৭৫ টাকা । যে কারণে গ্রাহক ট্রেড লাইসেন্স করতে চান না।
এসব বিষয়ে মেয়র চসিকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে বিস্তারিত আলোচনা করবেন বলে জানান।