সিনিউজ ডেস্ক
মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে ও সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভে সবচেয়ে রক্তাক্ত দিনের দেখা মিলল। আজ শনিবার দেশটিতে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৯১ জন বিক্ষোভকারী। দেশজুড়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর চরম দমন–পীড়নের মধ্যেই আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করেছে জান্তা সরকার। রাজধানী নেপিডোতে অনুষ্ঠিত হয়েছে সেনা প্যারেড। রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আজকের দিনটি বেশ রক্তক্ষয়ী হতে পারে, এমন আশঙ্কা আগে থেকেই করা হচ্ছিল। কেননা, গতকাল শুক্রবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক সতর্কবার্তায় বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘আপনাদের এর আগের মৃত্যুগুলো থেকে শেখা উচিত যে আপনারা মাথা ও পিঠে গুলিবিদ্ধ হওয়ার মতো বিপদে পড়তে পারেন।’
অবশ্য এ সতর্কবার্তায় এটি উল্লেখ করা হয়নি, বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে গুলি করে হত্যার নির্দেশনা আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হয়েছে কি না। তবে সেই সতর্কবার্তা অগ্রাহ্য করেই আজ রাস্তায় নামেন বিক্ষোভকারীরা।
মাথায় গুলি করার জান্তার হুমকি উপেক্ষা করে আজ সকাল থেকেই বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে আসেন। ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ বিভিন্ন শহরে শুরু হয় প্রচণ্ড বিক্ষোভ। অন্যান্য দিনের মতো রাজপথে ছিল জান্তা সরকারের সেনা–পুলিশও। তবে আজ তারা আরও কঠোর অবস্থান নেয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাউ–এর খবরে বলা হয়েছে, শনিবার দেশজুড়ে সেনা–পুলিশের গুলিতে ৯১ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে মান্দালয় শহরে অন্তত ২৯ ও ইয়াঙ্গুনে ২৪ জন নিহত হন।
দালা নামক উপশহরে স্থানীয় থানার কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন চারজন। এখানে কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। ইনসেইন শহরে গুলিতে নিহত হন তিনজন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন মিয়ানমারের অনূর্ধ্ব-২১ ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন বলে জানা গেছে।
মধ্যাঞ্চলীয় মিংগিয়ান শহরে গুলিতে মারা গেছেন অন্তত দুই বিক্ষোভকারী। এখানে বিক্ষোভে অংশ নেন থু ইয়া জাউ। তিনি বলেন, ‘তারা (জান্তা) পাখির মতো নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে। তবে আমরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাব। জান্তা সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত এই বিক্ষোভ চলবে।’
প্রায় দুই মাস ধরে চলা জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে আজকের ৯১ জনসহ চার শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হলেন। এই সময়ে আটক হয়েছেন প্রায় তিন হাজার। জান্তাবিরোধী আইনপ্রণেতাদের সংগঠন সিআরপিএইচের মুখপাত্র সাসা বলেছেন, আজকের দিনটি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জন্য লজ্জার।
এদিকে সশস্ত্র সংগঠন কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন দাবি করেছে, থাইল্যান্ডের সীমান্ত–সংলগ্ন এলাকায় একটি সেনাচৌকিতে হামলা চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা করেছে তারা। এ সেনাসদস্যদের মধ্যে একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তাও রয়েছেন।
এই হামলায় সংগঠনটির একজন সদস্যও নিহত হন। তবে এই হামলার বিষয়ে রয়টার্সের পক্ষ থেকে জান্তা প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাতে সাড়া মেলেনি।
ওদিকে জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং বলেছেন, দেশের জনগণকে রক্ষা ও গণতন্ত্র অর্জনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে সেনাবাহিনী। আজ ৭৬তম সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাজধানী নেপিডোতে আয়োজিত সেনা প্যারেডে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয় এনএলডির নেতা অং সান সু চিসহ তাঁর দলের শীর্ষ নেতাদের। সেই থেকে দেশটিতে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত। দিন যত যাচ্ছে, ততই রাজপথে বাড়ছে লাশের সারিও।