মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মহান বিজয় দিবস-২০২১ উদযাপন উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বর্ণাঢ্য কর্মসূচীর আয়োজন করেছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল ১৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার মহান বিজয় দিবসের দিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে কোর্ট হিলে ৫০ বার তোপধ্বনি, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল ৮টায় এম.এ আজিজ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে মহান বিজয় দিবসের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ কামরুল হাসান এনডিসি। এসময় পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, বিএনসিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, কারারক্ষী, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ স্কাউটস, রোভার স্কাউট, গার্লস গাইড এবং শিশু-কিশোর সংগঠন কর্তৃক বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠাে সালাম গ্রহণ করেন তিনি। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন, সিএমপি কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ও জেলা পুলিশ সুপার এস.এম রশিদুল হক সালাম গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এসময় জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও শিশু একাডেমিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে শেখ রাসেল চত্ত¡রে নগর ও জেলার ৫’শ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ক্রেস্ট ও উপহার সামগ্রী দিয়ে সম্মাননা প্রদান করা হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে ও পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিসান বিন মাজেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ কামরুল হাসান এনডিসি। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, জেলা পুলিশ সুপার এস.এম রশিদুল হক, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর আহমদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) একেএম সরওয়ার কামাল ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ। বিকেল সাড়ে ৪টায় নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শপথ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। নতুন প্রজন্মসহ সকলকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিখায় আলোকিত ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করার মহতি লক্ষ্যে সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের মাহেন্দ্রক্ষণে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে শপথ বাক্য পাঠ করান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সকল পেশাজীবী, সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সদস্যগণ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, নারী, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-ছাত্রীসহ সমাজের সর্বস্তরের ৪ হাজার জন নির্ধারিত আসনে নির্ধারিত টি-শার্ট, ক্যাপ, জাতীয় পতাকা ও মাস্ক পরিধানপূর্বক অবস্থান করে শপথ গ্রহণ করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ কামরুল হাসান এনডিসি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা এখনও তৎপর। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে গিয়েছিলেন বলেই আজ এই স্বাধীন ভূখন্ড পেয়েছি। আপনাদের দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হই। আপনারা স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখবেন। আপনাদের দেখে আমরা উজ্জীবিত হই। এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে আপনাদের পাশে থাকতে পেরে আমরা আনন্দিত।
তিনি বলেন, মহান মু্িক্তযুদ্ধ বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে এক গৌরবময় বিজয়গাথা। সুদীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে অর্জিত হয়েছিল স্বাধীনতার লাল সূর্য পতাকা। তাই ১৬ ডিসেম্বর আমাদের জীবনে ঐতিহাসিক এক বিজয়ের দিন, গর্ব ও অহংকারের দিন।
সভাপতির বক্তব্য জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে। সাম্প্রদায়িক শক্তি, মৌলবাদী শক্তি বাংলাদেশে যাতে ক্ষমতায় না আসতে পারে সেজন্য আপনাদের কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে। তারা আবারও মাথাচাড়া দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত। আপনাদের যে যুদ্ধ, সেটি সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে চলমান রাখতে হবে।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী কার্যক্রমে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে আলোচনা সভা ও জাতির শান্তি,সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ/আত্মদানকারী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত/ প্রার্থনা করা হয়। এছাড়া সিনেমা হলসমূহে বিনা টিকেটে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও উন্মুক্তস্থানে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম শহরের সকল সরকারি ভবনের পাশাপাশি বেসরকারি ভবনগুলোতে আলোকসজ্জাকরণ, সরকারি, বেসরকারি, বাণিজ্যিক ও আবাসিক সকল ভবনে নির্ধারিত মান ও রংয়ের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এই দুই রাত সমগ্র চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় কর্ণফুলী সেতুর পর থেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত প্রধান সড়কটিসহ শহরের সকল সরকারি ভবনের পাশাপাশি, বেসরকারি,বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনগুলো আলোকসজ্জাকরণ করা হয়েছে । ####