জাতীয় পুষ্টিসেবা কর্তৃক স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে মারাত্বক তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুর সনাক্তকরণ, সনাক্তকৃত স্যাম শিশুদের হাসপাতালে রেফার্ড ও ভর্তি ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ এবং সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলা পর্যায়ে চিকিৎসকদের ৫ দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা আজ ২১ মে মঙ্গলবার থেকে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে শুরু হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রশিক্ষণ কর্মশালার শুভ উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মোঃ মহিউদ্দিন। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মশালার উদ্বোধনী দিনে ফ্যাসিলিটেটর ছিলেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ওয়াজেদ চৌধুরী অভি। কর্মশালায় রিসোর্স পারসন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (শিশু) ডা. মোঃ জাবেদ বিন আমিন, চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মাহমুদা আকতার, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওসিএস ডা. মোহাম্মদ নওশাদ খান, চমেক হাসপাতালের রেজিস্টার (শিশু) ডা. সাউদা ফাতেমা সিকান্দার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এসআইএমও ডা. এফ.এম জাহিদুল ইসলাম ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডিএসএমও ডা. আবদুল্লাহ-হির রাফি অঝোর। জেলা পর্যায়ের চিকিৎসকবৃন্দ কর্মশালায় অংশ নেন।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, দেশে শিশুদের তীব্রতম অপুষ্টির প্রকোপ বাড়ছে। তীব্রতম অপুষ্টিতে (সিভিয়ার অ্যাকিউট ম্যালনিউট্রিশন বা এসএএম) ভুগছে দেশের অনেক শিশু। বিশেষ করে গত এক বছরে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির এ তীব্রতম মাত্রার প্রকোপ বেড়েছে অনেক বেশি। একই সঙ্গে বেড়েছে এতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যাও।
স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে অপুষ্টি দূর করতে সরকারি-বেসরকারি নানা পদক্ষেপ ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যদিও এখনো তীব্রতম অপুষ্টি বা এসএএমে ভুগছে দেশের অনেক শিশু। কভিডের প্রাদুর্ভাবে সাধারণ মানুষের অনেকেই কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। আয় কমেছে অনেকের। প্রয়োজনীয় পুষ্টির বিষয়টিতে আপস করতে বাধ্য হয়েছেন তাদের সবাই। এরই প্রতফলন দেখা যাচ্ছে তীব্রতম অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধিতে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশের হাসপাতালগুলোয় তীব্রতম অপুষ্টিতে ভোগা শিশু ভর্তি হয়েছে আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। তীব্রতম অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুর মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তবে মাঝারি অপুষ্টিতে (এমএএম) আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা খুব বেশি। যদিও তা খালি চোখে বোঝা যায় না। এ শিশুদের অপুষ্টির মাত্রা বেড়ে যখন তীব্রতম পর্যায়ে যায় তখন প্রকাশ পায়। মাঝারি তীব্রতার অপুষ্টিতে আক্রান্ত অবস্থায় পরিচর্যা করা গেলে তা আর তীব্রতম পর্যায়ে যেতে পারে না।
বক্তারা আরও বলেন, ডব্লিউএইচওর গাইডলাইনের ভিত্তিতে বর্তমানে দেশে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জন্য বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে এসএএম কর্নার চালু হয়েছে। এসব কর্নারে এখন শিশুর অপুষ্টিজনিত সমস্যার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় উপকরণ ও থেরাপিউটিক খাবার (এফ-৭৫ ও এফ-১০০) সরবরাহ করা হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের তত্ত¡াবধানে ২০১২ সাল থেকে এসএএম কর্নারে শিশুর তীব্রতম অপুষ্টির চিকিৎসা শুরু করা হয়।
সারা দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোয় বর্তমানে ৪১০টি স্যাম কর্নার রয়েছে। এসব কর্নারে প্রশিক্ষিত নার্স ও চিকিৎসকের মাধ্যমে দুই-তিন সপ্তাহব্যাপী নিবিড় সেবার মাধ্যমে শিশুদের চিকিৎসা দেয়া হয়। সব কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে সেবা দিয়ে শিশুদের চিকিৎসার জন্য এসব হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে এ কর্মসূচিও উপকরণের অভাবসহ নানা সংকটে ভুগছে। ###