নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, একজন সর্বনিম্ন গ্রেডের সরকারী কর্মচারী ৮ হাজার ২৫০ টাকার বেতন স্কেল দিয়ে কিছুতেই চলতে পারেনা। বেতন বৈষম্য, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উর্ধ্বগতি ও অন্যান্য কারণে লোকজন অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন গ্রেডের সরকারী কর্মচারীরা তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবীতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করেও কোন লাভবান হয়নি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসীবাদী সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীরা জেগে ওঠেছে। সরকারী কর্মচারীরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ন্যায্য পওনা আশা করে। তাই বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়তে অন্তর্বর্তী সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। আজ ৫ অক্টোবর শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ সরকারী কর্মচারী দাবী আদায় ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম বিভাগ কর্তৃক ‘ বৈষম্যমুক্ত ৯ম পে-স্কেল বাস্তবায়ন, ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা প্রদানসহ ৭ দফা দাবী বাস্তবায়ন’-এর লক্ষ্যে জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটরিয়ামে আয়োজিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সমাবেশে রাজধানী থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সংগঠনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক মোঃ শরীফ উল্লাহ’র সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক এম আব্দুল বাতেন বিপ্লব ও সমন্বয়ক এম.এ হাসান আনোয়ারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক মোঃ দবির উদ্দীন। সভায় ভার্চুয়ালি মূখ্য আলোচক ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ আব্দুর রহিম সাকি। বিশেষ অতিথি ছিলেন নাগরিক ঐক্য কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার, সরকারী কর্মচারী দাবী আদায় ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির মূখ্য সমন্বয়ক মোঃ ওয়ারেছ আলী, নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার, নাগরিক ঐক্যের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারী নুরুল আবছার মজুমদার স্বপন, চট্টগ্রাম মহানগর জেএসডি সভাপতি ও চাকসু’র সাবেক জিএস মুজতবা কামাল, গণসংহতি আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমি, দাবী আদায় ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মোঃ খায়ের আহমেদ মজুমদার, মোঃ আসাদুল ইসলাম, মোঃ নুরুল আলম, আশফাকুল আশেকিন ও এম এ হাসান আনোয়ার। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় সমন্বয়ক সুমন নন্দী, বাংলাদেশ ১৭-২০ গ্রেড সরকারি কর্মচারী সমিতির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম, কার্যকরী সভাপতি নূর মোহাম্মদ, সহ-সভাপতি মোঃ আজিম উদ্দিন জুয়েল, যুগ্ম সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেন, কক্সবাজার জেলা ফেডারেশনের সভাপতি মোঃ ইদ্রিস আলী, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন ও জর্জশীপ কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রামের যুগ্ম সম্পাদক নিজাম উদ্দিন, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল প্রসেস সার্ভার সমিতির চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি মোঃ আহমদ কবির, বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের চট্টগ্রামে সম্পাদক মোঃ নাছির উদ্দিন ও মোঃ জামাল উদ্দিন প্রমুখ।
সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ সরকারী কর্মচারী দাবী আদায় ঐক্য পরিষদের ৯ম পে-স্কেল প্রদানের লক্ষে পে-কমিশন গঠন, অন্তবর্তীকালীন সময়ের জন্য ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা ও ৭ দফা দাবী বাস্তবায়নে বিভাগীয় সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। সর্বশেষ গত ২৬ মে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এ সময়ে সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্বারোপসহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রীর সাথে বেতন বৃদ্ধি ও ভাতাদির অসংগতি দূর করার আশ্বাসমূলক আলোচনার প্রেক্ষিতে মহাসমাবেশে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। কিন্তু কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি বৃদ্ধির সকল আশাকে নিরাশায় পরিণত করে সরকার কর্তৃক মাত্র ৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়। সরকারের এ ঘোষণায় প্রজাতন্ত্রের ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীরা চরমভাবে হতাশ ও ক্ষুদ্ধ হয়। সরকার কর্তৃক এ ৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা বর্তমান বাজার ব্যবস্থার সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বক্তারা বলেন, তাছাড়াও আমাদের সংগঠনের দাবি ছিল কর্মচারি অংগনে বৈষম্য দূর করা। কিন্তু তা না হয়ে প্রদেয় ৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধায় ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের বৈষম্য আরও বৃদ্ধি হয়েছে। ১১-২০ গ্রেডের অধিকাংশ কর্মচারিদের মূল বেতন ২০ হাজার টাকার নীচে। অথচ ১-১০ম গ্রেডের কর্মচারীদের এ সুবিধা চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আমরা এ ধরণের বিশেষ সুবিধা চাইনি। আমরা চেয়েছি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের মূল বেতন বৃদ্ধি করা হোক। বর্তমান সময়ের মুদ্রাস্ফীতির সাথে সংগতি রেখে তা মূল বেতনের সাথে সংযোজন ও সকল ভাতাদি যুগোপযোগী করার জন্য অর্ন্তবর্তী সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের নিকট সবিনয়ে অনুরোধ জানাচ্ছি। একইসাথে যথাশীঘ্র বৈষম্যমুক্ত ৯ম পে-স্কেল বাস্তবায়নেরও দাবি জানান বক্তারা।
বক্তারা আরও বলেন, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি ও পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যয়ভার প্রাপ্ত বেতনের অর্থ দিয়ে মাসের ১৫ দিনও চলা সম্ভব হয় না। ৫ বছর পর পর পে-স্কেল প্রদানের প্রথা চালু থাকলেও ২০১৫ সালের ৮ম পে-স্কেল প্রদানের পর দীর্ঘ ৮ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যায়ে কর্মচারীদের ৯ম পে-স্কেলসহ ভাতাদির অসংগতি দূর করার জন্য অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। একইসাথে অনতিবিলম্বে সকল দপ্তর অধিদপ্তরের কর্মচারীদের পদনাম পরিবর্তন করে বেতন ও পদবী বৈষম্য দূর করে পূর্বের ন্যায় টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড পূনর্বহালসহ এক ও অভিন্ন নিয়োগ বিধি বাস্তবায়ন করার জোর দাবি জানান তারা। অনতিবিলম্বে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারিদের দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনের বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ##