নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার বলেছেন, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী ও অন্যান্য কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্যমূলক আচরণের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। শুধুমাত্র রাষ্ট্রের নাগরিক নয়, রাষ্ট্র যেখান থেকে গড়ে ওঠে সেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালনকারী মানুষের সাথে যে বৈষম্যটি হচ্ছে এর বিরুদ্ধে সবাইকে স্বোচ্ছার হতে হবে, নাগরিক ঐক্য আপনাদের সাথে থাকবে। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মচারীদের জাতীয়করণসহ যৌক্তিক দাবী আদায় এমন কঠিন ব্যাপার নয়। কারণ হাইকোর্টে আপনাদের পক্ষে রায় আছে। স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপীল হয়েছে। এই আপীলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এমন কোন বিষয় নয়। বর্তমান সরকার আমাদেরই সরকার। এ সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বা আন্দোলন করার দরকার নেই। চট্টগ্রাম থেকে সংঘটিত হয়ে ঢাকায় একটি কর্মসূচীর আয়োজন করলে আশাকরি অর্ন্তবর্তী সরকার আপনাদের জাতীয়করণসহ যৌাক্তক দাবীগুলো পূরণ করবে। বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্মচারী কল্যাণ সমিতি-চট্টগ্রাম বিভাগ কর্তৃক আজ ১৮ অক্টোবর শুক্রবার সকালে নগরীর আইস ফ্যাক্টরী রোডস্থ পিটিআই অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্মচারী কল্যাণ সমিতি-চট্টগ্রাম বিভাগ কর্তৃক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত কর্মচারীদের চাকুরী জাতীয়করণ ও পরবর্তী করণীয় শীর্ষক দাবী আদায়ের লক্ষ্যে আয়োজিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট দেড় হাজার মানুষ জীবন দিয়ে, হাজার হাজার মানুষ পঙ্গু হয়ে, চোখ হারিয়ে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে পতন ঘটিয়ে নতুনভাবে বিজয় অর্জন করে অর্ন্তবর্তী সরকারকে আমরাই ক্ষমতায় বসিয়েছি। এতটি বছর ধরে আমাদের সাথে যে বৈষম্য হয়েছে সেগুলো নিরসনে বর্তমান সরকারকে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি। এ সরকারের কাছ থেকে আমাদের দাবী আদায় করেই ফিরবো।
তিনি আরও বলেন, রাজস্ব বোর্ড থেকে দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরীদের বেতন হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৭ হাজার দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী রয়েছে। সামান্য বেতনে দু’টো দায়িত্ব একসাথে পালন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ পদে আরও ৩৭ হাজার কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হলে সরকারের খরচ হবে মাত্র ৫৫ কোটি টাকা। একজন দু’টো দায়িত্ব না দিয়ে হয় দপ্তরী না হয় প্রহরী আলাদা আলাদাভাবে ৮ ঘন্টা দায়িত্ব পালন করবে। আমাদের দেশে ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট। আর অতীতে পাচার-দুর্নীতি কিভাবে হয়েছে সেটাও আমরা জানি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মচারীরা বাংলাদেশ সরকারের অংশ হিসেবে কাজ করে। বৈষম্য না রেখে তাদের জাতীয়করণ অবশ্যই জরুরী, এ বিষয়টি বর্তমান সরকারকে অবহিত করা হবে। সরকার আপনাদের পাশে থাকবে। আমরা নাগরিক ঐক্য আপনাদের সাথে আছি।
সমাবেশের মূখ্য আলোচক নাগরিক ঐক্যের চট্টগ্রাম বিভাগের প্রধান সমন্বয়কারী নুরুল আবছার মজুমদার স্বপন বলেন, দাবীকে সুনির্দিষ্ট করতে হবে। দাবী আদায়ে যৌথ নেতৃত্ব তৈরী করতে হবে এবং কর্মচারীদের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। এ লক্ষ্যে নির্ধারিত কর্মসূচী নিয়ে সাংগঠনিক পতাকা তৈরী করতে হবে। দেশে প্রাথমিক শিক্ষায় দীর্ঘ বছর ধরে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির প্রায় ৮ থেকে ৯ হাজার কর্মচারীর পদ শূণ্য রয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে এ পদগুলো দ্রæত সময়ে পূরণ করতে বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান তিনি।
সমাবেশের প্রধান আলোচক চট্টগ্রাম মহানগর জেএসডি’র যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, সরকারী কর্মচারীদেও মধ্যে কোন বৈষম্য আমরা মেনে নেব না। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসীবাদী সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীরা জেগে ওঠেছে। সরকারী কর্মচারীরা বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে ন্যায্য পওনা আশা করে। তাই বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়তে অর্šÍবর্তী সরকারকে আন্তরিক হতে হবে।
সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, আমরা ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীরা বৈষম্যের শিকার। একে পদে চাকুরীতে যোগদান করে ঐ পদ থেকে দীর্ঘদিন চাকুরী করে অবসরে যেতে হয় এবং মাঠ পর্যায়ে প্রতিটি উপজেলা শিক্ষা অফিসে ২/৩টি করে পদ দীর্ঘদিন শূন্য। সারা বাংলাদেশে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৭/৮ হাজার ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পদ শূন্য হয়ে আছে। এতে করে শিক্ষকদের কাজ সঠিক সময়ে করে দেওয়া যাচ্ছে না বিদায় অনতিবিলম্বে শূন্য পদে জনবল নিয়োগ করা এবং দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরীদের চাকুরী জাতীয়করণ করার জন্য জোর দাবি জানান বক্তারা।
বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্মচারী কল্যাণ সমিতি-চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে ও জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার। মূখ্য আলোচক ছিলেন নাগরিক ঐক্যের চট্টগ্রাম বিভাগের প্রধান সমন্বয়কারী নুরুল আবছার মজুমদার স্বপন। প্রধান আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর জেএসডি’র যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ আবু তাহের। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষা সরকারী কর্মচারী সমিতি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি আজিজুল হক ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল ইসলাম পাটোয়ারী, নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম সম্পাদক মোঃ জামাল উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামাল, জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা, নাগরিক ঐক্যের মহানগরের সমন্বয়কারী সমন্বয়কারী মোঃ রফিকুল ইসলাম, চতুর্থ শ্রেণি সরকারী কর্মচারী সমিতি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অভিজিত দাশ, বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্মচারী কল্যাণ সমিতি-চট্টগ্রাম বিভাগের উপদেষ্টা ওমর ফারুক, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুরতান আহমদ সুমন, সমন্বয়কারী আওরঙ্গজেব এরশাদ প্রমূখ। বিভাগীয় প্রতিনিধি সমাবেশে সংগঠনের সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।###